গণশুনানিতে গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ঋণ দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন গ্যাস বিতরণ কোম্পানির গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করা উদ্বৃত্ত অর্থ ঋণ দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 June 2018, 04:27 PM
Updated : 20 June 2018, 04:27 PM

বুধবার দুটি বিতরণ প্রতিষ্ঠানের গ্যাসের দাম বৃদ্ধি এবং বিতরণ কোম্পানির মার্জিন নির্ধারণ বিষয়ে গণশুনানিতে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেছেন, কমিশনের অনুমোদন না নিয়ে কেবল পেট্রোবাংলার নির্দেশে এভাবে ঋণ দেওয়া আইন অনুযায়ী ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ’।

টিসিবি মিলনায়তনে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস বিতরণ কোম্পানি এবং বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানির প্রস্তাবের উপর গণশুনানি হয়।

শুনানিতে বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানি ও বিইআরসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, কোম্পানি মোট ৬০৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। জিটিসিএল ও বাপেক্সকে শতকরা ২ শতাংশ সুদে এই ঋণ দেওয়া হয়েছে।

কোম্পানিটি গত অর্থবছরে সরকারকে এক হাজার ২০৭ কোটি টাকা বিভিন্নভাবে দিয়েছে। এর মধ্যে কোম্পানির লভ্যাংশ বাবদ ৫৫ কোটি, করপোরেট ট্যাক্স বাবদ ৫২ কোটি এবং এসডি ভ্যাট বাবদ এক হাজার ১০০ কোটি টাকা দিয়েছে।

বিপুল এই অর্থ দেওয়া হলেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিবি) কোম্পানির কোনো প্রকল্প ছিল না।

শুনানিতে কনঞ্জুমার অ্যাসেসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কেম্পানির কাছে জানতে চান, “এ ধরনের ঋণ দেওয়ার আগে কমিশনের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কি না?”

বিতরণ কোম্পানির পক্ষ থেকে শুনানিতে জানানো হয়, বিইআরসির অনুমোদন ছাড়াই সান্তোস-বাপেক্সের প্রকল্পে ২০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে।এক্ষেত্রে পেট্রোবাংলার নির্দেশ অনুসরণ করেছেন তারা।

এর প্রেক্ষিতে ভোক্তা অধিকার সংগঠনের প্রতিনিধি শামসুল আলম বলেন, “ভোক্তার যে অর্থ উদ্বৃত্ত থাকে তাই গ্যাস বিতরণ কোম্পানির কাছে গচ্ছিত রাখা হয়। এই অর্থ ব্যবহারের আগে বিআইরসির অনুমোদন প্রয়োজন। অনুমোদন না নিয়ে ব্যয় করলে বিইআরসি আইনের ৪১ ও ৪২ ধারায় শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।”

অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস বিতরণ কোম্পানির অব্যবহৃত অবকাঠামো নিয়ে শুনানিতে প্রশ্ন তোলেন অধ্যাপক শামসুল আলম।

তিনি বলেন, “পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস বিতরণ কোম্পানির দৈনিক ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বিতরণের সক্ষমতা রয়েছে। সেখানে বিতরণ করে মাত্র ৩২ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সময় পুরো অবকাঠামো ব্যয় হিসেব করে দাম বৃদ্ধি করা হয়। এতে গ্রাহককে বেশি দাম দিতে হয়।”

অধ্যাপক শামসুল আলমের এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিইআরসি চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম বলেন, “তাহলে কি সরকারি উন্নয়ন কার্যক্রম চালানো যাবে না।”

জবাবে অধ্যাপক শামসুল বলেন, “এখানে গ্রাহকের অর্থেই বিনিয়োগ হচ্ছে আবার গ্রাহকের উপর দায় চাপানো হচ্ছে। সরকারি কোম্পানির দায় সরকারকে নিতে হবে, কিন্তু তা নেওয়া হচ্ছে না।”

এলএনজি আমদানির পর সরকারের আহ্বানে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গ্যাসের দাম বৃদ্ধির শুনানি করছে। বছরের শুরুর দিকে সাবেক জ্বালানি সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে।

এরপর জ্বালানি বিভাগের বেঁধে দেওয়া হারে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয় বিতরণ কোম্পানিগুলো। এতে করে ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম ১৪২ থেকে ১৪৩ ভাগ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে বিইআরসির কারিগরি কমিটি।

একইসঙ্গে প্রত্যেকটি কোম্পানির বিতরণ মার্জিন বৃদ্ধির পক্ষেও সায় দিয়েছে কমিশনের কারিগরি কমিটি।

সরকার প্রতিদিন এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানির হিসেব ধরে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিলেও কমিশন মনে করছে, এলএনজি আমদানি আগামী বছর জুন পর্যন্ত দৈনিক গড়ে ৪৫৬ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি হবে না।

শুনানিতে কমিশনের সদস্য রহমান মুর্শেদ, মাহমুদুউল হক ভুইয়া ও আব্দুল আজিজ খান এবং পশ্চিমাঞ্চল ও বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানি ও ভোক্তা অধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।