‘ঈদ শুধু নতুন কাপড়ে নয়, ঘরটাকেও সুন্দর দেখানো চাই’

আসছে ঈদে ঘরের সাজেও ভিন্নতা আনতে সাধ ও সাধ্যের মাঝে পছন্দের গৃহস্থালি পণ্যের খোঁজে সৌখিন ক্রেতারা ঢুঁ মারছেন ক্রোকারিজ, আসবাব, পর্দা, চাদর থেকে বাহারি শোপিসের দোকানে।

কাজী নাফিয়া রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 June 2018, 05:20 PM
Updated : 12 June 2018, 05:26 PM

ক্রেতাদের চাহিদায় আরও রয়েছে সোফার কভার, কুশন কভার, কুশন সেট, টেবিল ম্যাট, টেবিলের রানার সেট, পাপোস, কৃত্রিম ফুল আর ফুলদানির মতো পণ্য। গৃহস্থালি পণ্যের দোকানগুলো তাই এখন ক্রেতাদের ভিড়ে রমরমা ।

চাহিদা বাড়ায় বিক্রেতারা এসব পণ্যে বাড়তি দাম হাঁকছেন বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। তারা বলছেন, ঈদে ঘরে নতুনত্ব আনতে ‘বাধ্য হয়েই’ বাড়তি দামে পণ্য কিনছেন।

ঈদের কয়েক দিন বাকি থাকলেও মঙ্গলবার রাজধানীর নিউ মার্কেট ঘুরে দেখা যায়,  বৃষ্টি আর জলজট উপেক্ষা করে কেনাকাটা করতে এসে বিছানার নতুন চাদর, পর্দা, টেবিল ম্যাট, কুশন, বেসিন টাওয়েল কেনায় ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন অনেক ক্রেতা।

নিউ মার্কেটে বিছানার চাদর পাওয়া যাচ্ছে চারশ থেকে তিন হাজার টাকায়। বিভিন্ন ধরনের পর্দা প্রতি পিস দেড়শ থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কুশন কভার পাওয়া যাচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫০ টাকায়। বিভিন্ন আকারের সোফা কভার সেট পাওয়া যাচ্ছে সর্বনিম্ন তিন হাজার থেকে ১২ হাজার টাকায়। পাপোস বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৫০ টাকায় ।

নিউ মার্কেটের একটি দোকানে চাদর কিনতে এসে বিক্রেতার সঙ্গে দরদাম করছিলেন ওয়ারির রাজিয়া সুলতানা।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগের চাদরগুলো পুরান লাগছে। ঈদে অনেক মেহমান আসবে। ঘরটাকেও তো সুন্দর দেখাতে হবে। তাই নতুন চাদর কিনছি।”

মো. গিয়াসউদ্দিন তার দোকান ‘নাজমা বেডিং সেন্টারে’ বিভিন্ন ধরনের বিছানার চাদর ও পর্দা বিক্রি করেন।

তিনি জানান, সব সময় ব্যবহার করার মতো চাদরগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে। ৫৫০ থেকে ৮৫০ টাকা দামের মধ্যেই এসব চাদর পাওয়া যাচ্ছে।

অন্য সময়ের চেয়ে এবারের ঈদে পর্দা ও কুশন সেট বেশি বিক্রি হচ্ছে জানালেন তাহমীদ বেডিংয়ের বিক্রয়কর্মী শাব্বির হোসেন।

তিনি বলেন, “রোজার মধ্যে বিক্রি বেশি হচ্ছে। কুশন সেটে কোম্পানি কিছু অফারও দিছে। কাস্টমার আসতেছে ভালোই।”

ইন্ডিয়ান সার্টিন কাপড়ের এক রঙা ও বিভিন্ন রঙের পর্দাগুলোর চাহিদা বেশি বলে জানান তিনি।

শাব্বির বলেন, “ইন্ডিয়ান সার্টিনের চারশ টাকা পিসের পর্দাগুলাই বেশি নিচ্ছে মানুষ। এর বেশি দাম দিতে চায় না।”

নিউ মার্কেটের একটি দোকান থেকে টেবিল ম্যাট ও রানার সেট কিনছিলেন গৃহিনী সুমি। জানালেন, ঈদে নতুন চাদর, কুশন সেট, পাপোস, বেসিন টাওয়েল কেনা হয়েছে।

অধিকাংশ দোকানি বাড়তি দাম নিচ্ছেন অভিযোগ সুমি বলেন, “নরমাল সময়ের চেয়ে দাম বেশি চাচ্ছে। বেসিনের তোয়ালে দুই মাস আগে নিয়েছি ৬০ টাকায়। আর আজকে ১০০ টাকায় কিনলাম। কেনা ছাড়া উপায় নাই। ঈদে অনেক মানুষ আসবে। পুরান জিনিস খারাপ দেখায়।”

সুমি বলেন, “ঈদ তো শুধু নতুন কাপড় দিয়ে না, ঘরটাকেও তো সুন্দর দেখাতে হবে।”

এদিকে চাদর, পর্দা, কুশন ও সোফার কভার সেটের পাশাপাশি ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে কাঁচের তৈজসপত্রের দোকানেও। বিক্রি হচ্ছে চামচ, প্লাস্টিকের ফুলের সেট এবং ফুলদানিও।

নিউ মার্কেট ও মিরপুরের ক্রোকারিজের দোকানে গিয়ে দেখা যায় জমজমাট বেচাকেনা।

মিরপুর ১১ নম্বর মার্কেটে ক্রোকারিজ সামগ্রী কিনতে এসেছিলেন খালেদা।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদ ছাড়া তো গ্লাস, প্লেট, চামচ- এগুলো তেমন কেনা হয় না। গত ঈদে কিনেছিলাম। এর মধ্যে অনেকগুলো ভেঙে গেছে। আবার খুঁজে পাচ্ছি না। তাই নতুন কিনতে এসেছি। ঈদে অনেকেই আসবে। খাবার পরিবেশনের জন্য তো এগুলো দরকার।”

মিরপুর ১০ নম্বরের শাহ আলী প্লাজার পূর্ণা কালেকশনের মালিক মাহবুবুল আলম জানান,  রোজার প্রথমদিকে তেমন বিক্রি না হলেও শেষের চার-পাঁচ দিন ব্যবসা ভালো যাচ্ছে তার।

তিনি বলেন, “রোজার প্রথমদিকে তো সবাই জামাকাপড় কেনাতেই ব্যস্ত থাকে। শেষদিকে এসে এই জিনিসগুলা কেনে।”

ঈদ সামনে রেখে কাঁচের গ্লাস, জগ, ফিন্নি সেট, হাফ প্লেট, চামচ, মেলামাইনের সেট বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান এই বিক্রেতা।

বিভিন্ন মার্কেটের পাশাপাশি ভ্যান ও ফুটপাতেও পসার জমিয়ে বিক্রি হচ্ছে ঘর সাজানো এবং কাঁচের ও মেলামাইনের জিনিসপত্র।