অনলাইনেও জমজমাট ঈদের বেচাকেনা

দেশি-বিদেশি সব পোশাকে সাজানো দোকান থাকলেও ফেইসবুক পেইজ ও ওয়েবসাইটের ঈদবাজারকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন অনেক উদ্যোক্তা, অনলাইন থেকেই বেশি ক্রেতা পাওয়ার কথা বলছেন তারা।

সাজিয়া আফরিনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2018, 06:15 PM
Updated : 26 May 2018, 06:25 PM

অপরদিকে অনলাইনে কেনাকাটা করা কয়েকজন বলছেন, সারা দিনের কর্মব্যস্ততার পর ঢাকার যানজট ঠেলে মার্কেটে গিয়ে কেনাকাটার চেয়ে বিশ্বস্ত ফেইসবুক পেইজগুলোতে পোশাকের ছবি দেখে কোনো ঝামেলা ছাড়াই কিনতে পারছেন তারা। 

এবার অনলাইন ক্রেতারা দেশি তাঁতে বোনা শাড়ি, থ্রি পিস, গজ কাপড়, পাঞ্জাবি ও গহনার দিকে বেশি ঝুঁকছেন বলেও জানিয়েছেন কয়েকজন উদ্যোক্তা, যাদের নিজেদের দোকানের পাশাপাশি অনলাইনে রয়েছে লাখের বেশি ক্রেতা।

দেশি তাঁতে বোনা শাড়ি ও নিজস্ব ডিজাইনের গহনা নিয়ে ২০০৬ সালে অনলাইনে যাত্রা শুরু করে ‘শৈলী’। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তাদের পরিসর, ফেইসবুক পেইজে ক্রেতা হয় লক্ষাধিক। ২০১৩ সালে ধানমণ্ডির এক নম্বর সড়কে একই নামে শো-রুম দেয় তারা।

ফেইসবুকে পেইজে জনপ্রিয়তার পর দোকান করেছেন, এ বছর ঈদবাজারে কোন জায়গায় ক্রেতা

বেশি-এ প্রশ্নের জবাবে প্রতিষ্ঠানটির মালিক তাহমিনা খান শৈলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনলাইনে আমাদের ক্লায়েন্ট দিন দিন বাড়ছে। স্টোরের চেয়ে অবশ্যই এখানে সেল বেশি। এই জায়গাটাকেই আমরা মনে করি, আমাদের প্রধান জায়গা। আমরা অনলাইনে আরও সিরিয়াস হচ্ছি।”

ওয়েবসাইট, ফেইসবুক পেইজ ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে সমান তালে তাদের কাছে পোশাকের অর্ডার আসে বলে জানান শৈলী।

“আস্থার জায়গাটা তৈরি করতে পারলে অনলাইনেই মূল বেচাকেনাটা হয়। দোকানে যারা আসেন তারা অনলাইন পেইজ দেখেই আসেন।”

প্রবাসী বাঙালিদের কারণেও অনলাইনকেন্দ্রিক ঈদবাজার বড় হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

বর্তমানে ১৭টি দেশের বসবাসরত প্রবাসীদের কাছে পোশাক বিক্রি করছে ‘শৈলী’, যেখানে রোজার আগেই শুরু হয়ে গেছে কেনাকাটা। তাহমিনা শৈলী বলেন, “বাইরের জগৎটা অনেক বড়, সেটা আমরা স্টোর দিয়ে কাভার করতে পারব না। আমাদের টার্গেট থাকে যত বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়, সেক্ষেত্রে অনলাইনই ঈদবাজারের ভবিষ্যৎ।”

প্রতি ঈদেই অনলাইনে ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে বলেও জানান উদ্যোক্তারা।

তিন বছর আগে ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমে দেশি পোশাক ও কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন নুসরাত আকতার লোপা। ফেইসবুকে নারীদের পোশাকের জন্য বেশ জনপ্রিয় ‘হুর নুসরাত’ এর এখন একটি দোকান রয়েছে ঢাকার পান্থপথে।

লোপা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার শপ কোনো মার্কেট প্লেসে না, ক্রেতা যারা আসেন অনলাইনে আগে দেখে দোকান খুঁজে তারপর আসেন। পেইজ আর দোকান সমানতালেই চলছে এখন। প্রতি ঈদেই ক্রেতা বাড়ছে।

“পার্শ্ববর্তী দেশের পণ্যে যেভাবে দেশ ছেয়ে গেছে, তাতে ঈদবাজারে দেশি কাপড়ের জনপ্রিয়তা তৈরি করতে আমাদের রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়েছে এবং আমরা সফল। তার প্রমাণ হচ্ছে, আমরা এখনও টিকে আছি সাথে ক্রেতা বেড়ে চলেছে।”

দেশি সিল্ক, কাতান, জামদানি, মণিপুরী শাড়ির জন্য জনপ্রিয় পেইজ ‘নন্দিনী’ গতবছর মিরপুরের শামীম সরণির অনামিকা কনকর্ড শপিং সেন্টারে তাদের দোকান খোলে। নন্দিনীর উদ্যোক্তা ঊর্মী রুবিনা জানান, রোজার আগে থেকেই পেইজে ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়ে গেছে। দোকানেও ক্রেতা আসছেন পেইজ দেখেই।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শপের কেনাকাটার মূলে পেইজই শক্তি জুগিয়ে যাচ্ছে। ঈদের কেনাকাটায় বেশি বিক্রি মূলত পেইজেই হয়। ঘরে বসেই যখন মানুষ ৫০০ শাড়ির ছবি দেখে একটি পছন্দ করতে পারছেন, এই সহজ কেনাকাটাই মানুষকে অনলাইনে বেশি আগ্রহী করে তুলেছে।”

তিনি জানান, গত ঈদের চেয়ে এবার তাদের শাড়ির আয়োজন বেড়েছে। বিক্রিও হচ্ছে বেশি।

অনলাইনে নিয়মিত কেনাকাটা করেন সাংবাদিক মাহবুবা দিনা। রোজার আগেই অর্ডার করে কিনেছেন ঈদের জামা।

বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান পেলে অনলাইনে কেনাকাটার বিকল্প নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, সারা দিনের ব্যস্ততা, যানজট আর রোদ-বৃষ্টি ঠেলে শপিংয়ে যাওয়ার চেয়ে অনলাইনে কেনাকাটা করাটাই অনেক ভালো।

“অনলাইনে দেশি প্রডাক্টগুলোর দাম একটু বেশি মনে হয়। তবে এখানে রাস্তার ঝক্কি নেই। আগে কিনেছি, প্রডাক্ট ভালো ছিল-এমন পেইজ থেকে ঈদ শপিং করতে ভরসা পাই।” 

রোজার মাসে বাসা থেকে বেরোতে চান না সোবহানবাগের বাসিন্দা গৃহিনী শামসুন্নাহার। তার দুই মেয়ের ঈদের সব কেনাকাটা অনলাইনেই সেরে ফেলেছেন বলে জানালেন তিনি।

শামসুন্নাহার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রমজান মাসে বাসায় কাজ থাকে অনেক। তাছাড়া ইবাদতের জন্য সময় রাখতে হয়। এ বছর সব অনলাইন থেকে কিনেছি, আমার মনে হয় ঠকিনি।”

স্বামীর কর্মসূত্রে চাঁদপুরে থাকেন শাহরিন সুলতানা। সেখান থেকেই অনলাইনে কেনাকাটা করছেন একে একে।

তিনি বলেন, “বিশ্বস্ত পেইজগুলো থেকে দেশি পোশাকই কিনি। দাম বেশি এটা সত্য, তবে ঢাকায় গিয়ে শপিংয়ে যাওয়া...অনেক সময় বাঁচে অনলাইনে। সেদিক দিয়ে দেখলে ঠিকই আছে।”