টোকিও স্কয়ারে পুরান ঢাকার ইফতার

পুরান ঢাকার বাহারি মুখরোচক ইফতারের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ মিলছে রাজধানীর মোহাম্মদপুরেও।

কাজী নাফিয়া রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2018, 02:31 PM
Updated : 21 May 2018, 02:31 PM

পুরান ঢাকার সব শাহী খাবার নিয়ে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের জাপান গার্ডেন সিটির টেকিও স্কয়ার কনভেশন সেন্টারে আয়োজন করা হয়েছে ‘পুরান ঢাকার ইফতার বাজার’।

দ্বিতীয় বারের মতো আয়োজিত এই ইফতার বাজারে রয়েছে প্রায় ২০টির মতো দোকান। ক্রেতারা খাবার কিনে নেওয়ার পাশাপাশি এখানে বসেও ইফতার সারতে পারবেন; রয়েছে খাবার ঘরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও।

সোমবার এই ইফতার বাজারে দেখা গেল মোগলাই সব খাবারের সমাহার। রয়েছে পোলাও, মোরগ পোলাও, বিফ কাচ্চি বিরিয়ানী, বিফ তেহারী, ফ্রাইড রাইস, রোস্ট, চিকেন মাসালা, মাটন ভুনা, গরুর কালা ভুনা, গরুর হান্ডি কাবাব, বারবিকিউ চিকেন, চিকেন ফ্রাই, চিকেন সাসলিক, খাসি ও গরুর হালিম, বিফ চপ, বিফ রোল, স্যান্ডুইচ, খাসির কাচ্চি বিরিয়ানী, খাসির লেগ রোস্ট, খাসির আচারী গোস্ত। আছে চট্টগ্রামের বিখ্যাত মেজবানী স্পেশাল বিফ।

রুটি জাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে রেশমি পরোটা, রুমালি রুটি, নান, কিমা পরোটা ও মোগলাই।

কাবাবের মধ্যে রয়েছে শিক কাবাব, নারগিস কাবাব, জালি কাবাব, বটি কাবাব, চিকেন মালাই কাবাব, চিকেন রেশমি কাবাব, ক্ষিরী কাবাব, গুড়া কাবাব, ফিস হারিয়ালি কাবাব, ফিস কাবাব ও প্রন কাবাব।

ক্রেতারা এ ইফতার বাজারে মিষ্টি জাতীয় খাবারের মধ্যে পাবেন ফিরনি, জর্দা, জিলাপি, আমিত্তি, বুরিন্দা, দই, লাড্ডু ও মালাই চপ। আর পানীয়র মধ্যে রয়েছে বোরহানি, লাবাং, লাচ্ছি, শাহী শরবত ও কাঁচা আমের শরবত।

এই ইফতার বাজরে ‘মেজবানি’ স্টলে প্রতি কেজি চিকেন মাসালা ৪০০, মাটন ভুনা ১২০০, মেজবানি স্পেশাল বিফ ১০০০ ও মাটন হালিম ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পরোটা মিলছে ৩০ টাকায়, বিফ চপ ৩৫ টাকায়, বিফ রোল ৫০ টাকায়, চিকেন ফ্রাইড রাইস ৮০ টাকায়, বারবিকিউ চিকেন (কোয়াটার) ১০০ টাকায়, চিকেন সাসলিক ৮০ টাকায়। এছাড়াও ২৫০ মিলি লিটারের লাচ্ছি ও লাবাং ১০০ টাকায় এবং বোরহানি পাওয়া যাচ্ছে ৮০ টাকায়।

বিসমিল্লাহ ক্যাটারিং সার্ভিসে বিভিন্ন কাবাব বিক্রি পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। এছাড়া চিকেন চিজ মোগলাই ৮৫ টাকা, এগ মোগলাই উইথ চিজ ৭৫ টাকা, প্রন কাবাব ২৫০ টাকা, মাছের কাবাব ৩৫০ টাকায় মিলছে।

এছাড়া একেকটি রুমালি রুটি ২৫ টাকা, লাচ পরোটা ২৫ টাকা, প্লেইন নান ২৫ টাকা, গার্লিক নান ৪৫ টাকা এবং বাটার নান ৩০ টাকা।

এই ইফতার বাজরে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে গরুর কালা ভুনা, রেশমি পরোটা, হালিম ও চিকেন মাসালা।

তবে এই ইফতার বাজারে মানসম্মত খাবার মিললেও কিছুটা বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন ক্রেতারা।

ইফতার কিনতে আসা বেসরকারি চাকুরে জোসেফ রাসেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাইরের তুলনায় এখানে দামটা বেশি। কালা ভুনা কিনলাম এক হাজার টাকা কেজি, এটা তো ৮০০ টাকা রাখা যেত। শিক কাবাব কিনলাম ৭৫ টাকায়। বাইরে তো ১০০-১২০ টাকাতেই পেতাম।

“আসলে এসব নিয়ে তো সরকারের কোনো মনিটরিং নাই। যার যেমন ইচ্ছা দাম নিচ্ছে।”

তবে আরেক ক্রেতা ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিনার মতে মানসম্মত খাবার একটু দাম দিয়ে কিনতে ক্ষতি নেই।

“প্রথম রোজায় এখান থেকে খাবার নিয়ে গিয়েছিলাম, সবার খুব পছন্দ হয়েছে। আর এখানকার খাবারগুলো তো বাইরে খুব একটা পাওয়া যায় না। পরিবেশটাও ভাল, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।”

তবে বিক্রেতাদের দাবি তারা খাবারের বাড়তি দাম নিচ্ছেন না।

ক্যাফে এক্সপ্রেসের বিক্রেতা রেদুয়ান হাসান বলেন, “আশপাশের রেস্টুরেন্টগুলোতে গেলে দেখবেন আমরা দাম বেশি নিচ্ছি না। আমাদের খাবারের মান অনেক ভাল। সে অনুযায়ী দাম ঠিক আছে।”

বিসমিল্লাহ ক্যাটারিং সার্ভিসের ব্যবস্থাপক আরিফউজ্জামান বলেন, “আমরা খুব বেশি দাম রাখতে গেলে এখানে আমাদের প্রোডাক্ট চলবে না, কেননা আমাদের কোনো ফিক্সড কাস্টমার এখানে নাই, পুরোটাই ভ্রাম্যমাণ। আমরা বেশি দাম রাখলে কাস্টমাররা তো নিবে না। আর আমরা কোয়ালিটিটা এনশিওর করতে চাই।”

বিক্রি কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে মাস্টারশেফ সুরবত আলী স্টলের সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং ম্যানেজার ইমরান আহমেদ বলেন, প্রথম রোজায় কাস্টমার অনেক বেশি ছিল। তবে আজও অনেকে কিনছেন। ইফতারের আগে ভিড়টা আরও বেড়ে যায়।