বেইলি রোডের ইফতার বাজারে ‘যানজট-বৃষ্টির প্রভাব’

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ আর রকমারি ইফতার আইটেমের জন্য রাজধানীর বেইলি রোডের ইফতার বাজারে বরাবরই ক্রেতাদের ভিড় থাকলেও এবার চিত্র কিছুটা ভিন্ন বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

সাজিয়া আফরিনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2018, 05:07 PM
Updated : 20 May 2018, 05:07 PM

কারণ হিসেবে যানজট, বৃষ্টি আর ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় গড়ে ওঠা নিত্যনতুন ইফতার বাজারের কথা বলছেন তারা।

বেইলি রোডে বাহারি ইফতারের জন্য পরিচিতি রয়েছে ‘ক্যাপিটাল ইফতার বাজার’র। এ বছর 'ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টারের' বেজমেন্টে আগের চেয়ে বড় পরিসরে আরও বেশি পদ নিয়ে বসেছেন তারা।

তবে এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সরফুদ্দিন রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রোজার প্রথম তিন দিনে প্রত্যাশা মতো বিক্রি হয়নি তাদের। এখন ইফতার বানানোর পরিমাণ কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

“বৃষ্টির প্রভাবটা ভীষণভাবে পড়ছে। আরেকটা সমস্যা হল যানজট। ক্রেতা যারা আসছে তারা এই এলাকারই, দূর-দূরান্ত থেকে আগের মতো লোকজন আর আসে না। সেকারণে উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছি, নইলে মাল থেকে যাচ্ছে।”

রাজধানীর বেইলি রোডে বিভিন্ন ধরনের ইফতারি। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

আরও কয়েক রোজার পর ক্রেতা বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি। 

এ বছর ক্যাপিটাল ইফতার বাজারে নানা ধরনের কাবাব, মাংসের তরকারি, পরোটা, লুচি, কয়েক ধরনের লাড্ডু, খাসির লেগ রোস্ট, তিন ধরনের শরবত, চপ, সন্দেশ, হালুয়া ইত্যাদির মোট ৯৬টি পদ বিক্রি হচ্ছে। সর্বনিম্ন পাঁচ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১২০০ টাকায় ইফতার পাওয়া যাচ্ছে সেখানে। 

দুই বছর ধরে বেইলি রোডে ইফতারের জন্য ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নবাবী ভোজ। পুরান ঢাকার ইফতারের পদগুলো নিয়ে বসেন তারা। ম্যানেজার ফারুক হোসেইন জানান, তাদেরও ক্রেতা সমাগম আশানুরূপ নয়।

রাজধানীর বেইলি রোডে ইফতার বাজার। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

তিনি রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন দেখা যাচ্ছে, সব এলাকাতেই স্পেশাল ইফতার আইটেমগুলো পাওয়া যায়। হাতের নাগালে থাকার কারণে বেইলি রোডেই ইফতার কিনতে আসতে হবে ব্যাপারটা আর এ রকম নয়।” 

নবাবী ভোজের ইফতার প্যাকেজ ও খুচরা দুইভাবেই বিক্রি হচ্ছে। তাদের হালিমের চাহিদা সবচেয়ে বেশি বলে জানালেন ফারুক। দুইশ টাকা থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে বিভিন্ন আকারের বাটিতে মিলছে তাদের স্পেশাল হালিম। এছাড়াও বোনলেস গরুর তেহারি, মোরগ পোলাও, ক্ষীর, ফিরনি, ক্ষীরসা, ফালুদা ইত্যাদি তাদের নতুন পদ। 

রাজধানীর বেইলি রোডে ইফতার বাজার। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

সেখানে ইফতার কিনতে আসা খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা সৈয়দ রায়হান জামিল বলেন, “খিলগাঁওয়েও এই একই আইটেম পাওয়া যায়। অফিস থেকে ফেরার পথে পড়েছে বলে এখান থেকে কিনছি।” 

তবে যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা সুলতান আজীম ইফতার কিনতেই এসেছিলেন বেইলি রোডে। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি প্রতি বছর দুই-তিন দিন আসি। এখানকার ইফতারগুলো স্বাস্থ্যকর আর আইটেমে ভ্যারাইটি আছে।” 

রাজধানীর বেইলি রোডের ইফতার বাজারে ক্রেতারা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

ঢাকার জনপ্রিয় আরেক খাবারের দোকান ফখরুদ্দিনে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে বিরিয়ানি আর লুচি। তবে তাও গত বছরের তুলনায় কম বলে জানালেন ম্যানেজার এনামুল হাসান আকিব।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মানুষ বাসায়ও এখন অনেক কিছু তৈরি করতে পারে। বাইরে থেকে কেনা খাবার খাওয়ার প্রবণতা কম। আমাদের বিক্রি এখনও জমেনি।”  

রাজধানীর বেইলি রোডের ইফতার বাজারে ক্রেতারা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

ফখরুদ্দিনে খাসির হালিম, দই বড়া, গরু-খাসির চাপ, কাচ্চি বিরিয়ানি, শাহী টুকরা, বাসমতি চালের জর্দা ইত্যাদি পদ মিলছে দশ টাকা থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে।

এছাড়া বেইলি পিঠাঘর, স্কাইলার্ক, সুইস বেকারিসহ বেইলি রোডের সব খাবারের দোকানেই মিলছে হরেক পদের ইফতার। রোজা বাড়ার সাথে সাথে ক্রেতাও বাড়বে বলে আশায় আছেন ক্রেতারা।