ক্যাম্পের আশপাশের বাসিন্দাদের অনেকেই ইফতারের অত্যাবশ্যকীয় অনুষঙ্গ করে নিয়েছেন এই সব মজাদার খাবার। ক্যাম্পে এসে ইফতার সারেন কেউ কেউ, আবার বাসায় নিয়ে পরিবারের সঙ্গে মিলে ইফতারে চাপ, কাবাব ও লুচির স্বাদ নেন অনেকে।
তাদেরই একজন ওই এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলছিলেন, “ছোটবেলা থেকেই ইফতারে ক্যাম্পের চাপ, কাবাব আর লুচি খাই। এইগুলা ছাড়া ইফতারটা জমে না। আর দামও কম। সবাই তো পরিচিত।”
রোজার তৃতীয় দিনে রোববার বিকালে ক্যাম্পে মুরগির চাপ কিনতে এসেছিলেন তিনি।
এদিন ক্যাম্পের ইফতারের দোকানগুলোতে দেখা যায় হরেক নামের কাবাব ও চাপ। গরুর চাপ, খাসির চাপ, মগজ ফ্রাই (গরু, খাসি), বটি কাবাব (গরু ও খাসি), ক্ষিরী কাবাব, গিলা-কলিজা, শিক কাবাব, গুরদ কাবাব, কাঠি কাবাব, শামী কাবাব, রেশমী কাবাব, জালি কাবাব, গোলা কাবাব, চিকেন বটি, চিকেন ফ্রাই (দেশি ও ব্রয়লার), কোয়েল ফ্রাই, কবুতর ফ্রাই, টিক্কা, বিরিয়ানী, লুচি, হালিম, দই বড়া, ফিরনি, জিলাপি, ছোলা, বোরহানি, লাচ্ছি, ডিম চপ, আলুর চপ, পেঁয়াজু ও বেগুনি বিক্রি করছিল দোকানগুলো।
প্রতিবারের মতো এবারও ভালো বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন বিক্রেতারা।তবে ১০ রোজার পর থেকে ক্রেতাদের দোকানে জায়গা দেওয়াই কঠিন হবে বলে মনে করছেন তারা।
গরু, খাসি ও মুরগির চাপ (হাফ মুরগি) ৮০ থেকে ১১০ টাকা, মগজ ফ্রাই ৯০ টাকা, বটি, কাঠি, গুর্দা, ক্ষিরী কাবাব ৮০ থেকে ১০০ টাকা এবং লুচি দুই থেকে পাঁচ টাকায় বিক্রি হয় এসব দোকানে।
ক্যাম্পের সবচেয়ে পুরানো চাপের দোকান ‘মোস্তাকিম ভ্যারাইটিজ কাবাব অ্যান্ড স্যুপ’। বিকাল সাড়ে ৫টার পর থেকে এই দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে থাকে।
১৯৮২ সাল থেকে এখানে চাপ বিক্রি করেন মোস্তাকিম। ২০০৩ সালে তিনি মারা যাওয়ার পর এই দোকান দেখছেন তার ছেলেরা।
মসলা আর রান্নার গুণেই তাদের চাপ ‘সবার প্রিয়’ বলে মনে করেন মোস্তাকিমের ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন।
মামুন জানান, ইফতারের সময়টাতে দোকানের উপচেপড়া ভিড়ের কারণে ক্রেতাদের রাস্তায়ই বসতে দিতে হয়। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সব শ্রেণির মানুষই তার দোকানে আসেন চাপ খেতে। তবে ক্রেতাদের মধ্যে তরুণরাই বেশি।
১৫ রোজার পর থেকে ক্রেতা আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।
“গতবার তো ১৫ রোজার পর আমরা কাস্টমারদের দিয়ে কুলাতে পারি নাই।”
মোস্তাকিম ভ্যারাইটিজে কবুতর ফ্রাই বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়, চিকেন ফ্রাই ১২০ টাকায়, চিকেন চাপ ১৫০ টাকায়, গরুর চাপ ৮০, খাসির চাপ ১০০ টাকা এবং অন্যান্য ধরনের কাবাব বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়।
“আমরা দামটা মানুষের বাজেটের মধ্যে রেখে সবচেয়ে ভালো জিনিসটা দেওয়ার চেষ্টা করি। আর সে কারণে মানুষের চাহিদাটাও সব সময় বেশি।”
বিহারী ক্যাম্পের পাশের কাদেরিয়া সড়কের কাশবন রেস্তোরাঁয়ও বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের কাবাব, হালিম, জিলাপি, সাসলিক, রোল, কাটলেট, শর্মা, নান, চিকেন ফ্রাই আর চাপ।
এ রেস্তোরাঁর মালিক জাহাঙ্গীর আলম খোকন জানান, তারা হাঁড়ি প্রতি খাসির হালিম ৩৫০ টাকা, গরুর হালিম ২৫০ টাকা, গ্রিল (ফুল) ৩০০ টাকা, শর্মা ৭০ টাকা, নান ১৫ থেকে ৫০ টাকা, বোম্বে জিলাপি ১২০ এবং রেশমী জিলাপি ২০০ টাকা (কেজি), রোল ২০ থেকে ৩০ টাকা ও চিকেন চাপ ৯০ টাকা রাখছেন।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে প্রিন্স বাজারের ইফতারের দোকানে ছিল ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। সেখানকার বিক্রেতা সাইফুল জানান, প্রথম রোজা থেকে তাদের বেশ ভালোই বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এইচ অ্যান্ড সি বেকারিতে ইফতার কিনতে আসা সুরাইয়া বলেন, “চাকরি করে বাসায় ইফতার বানানোর সময় পাই না। তাই ইফতার কিনে নিয়ে যাচ্ছি।”
বিক্রেতারা যেন ভেজাল পণ্য দিতে না পারে সে কারণে ইফতার সামগ্রী বিক্রির এই দোকানগুলোতে সরকারের নজরদারি প্রত্যাশা করেন তিনি।