ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট বাড়ার আশঙ্কা

ব্যাংকগুলো যে হারে ঋণ দিচ্ছে, সেই অনুপাতে আমানত বাড়ছে না; ফলে এখন সাবধান না হলে তারল্য সঙ্কট আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিআইবিএম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2018, 02:37 PM
Updated : 15 May 2018, 02:37 PM

মঙ্গলবার ঢাকার মিরপুরে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) মিলনায়তনে ‘ট্রেজারি অপারেশনস অব ব্যাংকস’ শীর্ষক কর্মশালায় উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে এই আশঙ্কার কথা জানানো হয়।

প্রতিবেদনে ব্যাংকগুলোর ঋণ ও আমানতের অনুপাত তুলে ধরে বলা হয়, ঋণের প্রবৃদ্ধি যে হারে বাড়ছে তার চেয়ে অনেক কম হারে বাড়ছে আমানত।

২০১৫ সালের জুনে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৭ শতাংশ, বিপরীতে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয় ১৮ দশমিক ১ শতাংশ, তবে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়ায় ১০ দশমিক ৬ শতাংশ।

“এ অবস্থা চলতে থাকলে তারল্য সঙ্কট আরও বাড়বে,” বলা হয় প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক মো. নেহাল আহমেদের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।

অধ্যাপক নেহাল বলেন, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে বর্তমানে অ্যাডভান্সড ডিপোজিট রেশিও (এডি) ৮৪ দশমিক ৭ শতাংশ। ট্রেজারি ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে না হলে ২০১৯ সালের মার্চের মধ্যে ৮৩ দশমিক ৫ শতাংশ হয়ে যাবে।

বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, ব্যাংকাররা ট্রেজারি ব্যবস্থাপনায় আরও দক্ষতার পরিচয় না দিলে পুরো ব্যাংক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ফাইল ছবি

বিআইবিএমের সুপার নিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, স্বার্থের বাইরে ঋণপত্র খুলে পরবর্তীতে বৈদেশিক মুদ্রা তথা ডলার সংস্থানের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ফান্ডের জোগান চাওয়া হয় বলে বাজারে ডলারের উপর চাপ পড়ে। এতে ডলারের দাম উর্ধ্বমুখী হয়।

“ট্রেজারি ব্যবস্থাপনায় কর্মরত কর্মীদের ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ে সঠিক তথ্য দিতে হবে। এটি না করলে বাজারে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।”

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, ট্রেজারি ব্যবস্থাপনায় ভুল নীতির কারণে ২০০৭ সালে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংক। এ কারণে ট্রেজারি ব্যবস্থাপনায় কোনো ভুল করলে চলবে না।

প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ কামাল খান চৌধুরী বলেন, ট্রেজারি ব্যবস্থাপনায় জড়িত ব্যাংকারদের ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এবং শীর্ষ ব্যক্তিদের সঠিক তথ্য সরবরাহ করতে হবে। এতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হবে।

বিআইবিএমের সুপার নিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলী বলেন, “স্প্রেড পাঁচ শতাংশের নিচে আনতে হবে। বন্ড মার্কেট উন্নয়নে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।”

বিআইবিএমের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব ব্যাংকের ট্রেজারি ব্যবস্থাপনা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন।  

কর্মশালার প্রধান অতিথি ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, ব্যাংকের ট্রেজারি ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংককে বিষয়টিতে সতর্ক থাকতে হবে। বর্তমানে ডলারের দাম একটু উর্ধ্বমুখী। বাংলাদেশ ব্যাংক পুরো বিষয়টি নজরদারি করছে, যাতে এটি আর না বাড়ে।

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী।

গবেষক দলে অধ্যাপক নেহালের সঙ্গে ছিলেন বিআইবিএমের প্রভাষক রিফাত জামান সৌরভ, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিডেটের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং হেড অব ট্রেজারি মেহেদী জামান এবং ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং হেড অব ট্রেজারি আরেকুল আরেফিন।