গুগল-ফেইসবুক-ইউটিউব থেকে কর আদায়ের নির্দেশ হাই কোর্টের

গুগল, ফেইসবুক, ইউটিউবের মতো ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ থেকে দেওয়া বিজ্ঞাপনের লেনদেন থেকে সব ধরনের রাজস্ব আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 April 2018, 12:08 PM
Updated : 12 April 2018, 08:36 PM

একটি রিট আবেদনে বৃহস্পতিবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাই কোর্ট বেঞ্চ রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন এই আদেশ দেয়।

আদেশে সার্চ ইঞ্জিন গুগল, ইয়াহু, ই-কমার্সের আন্তর্জাতিক প্লাটফর্ম আমাজন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক ও ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবসহ ইন্টারনেটভিত্তিক আন্তর্জাতিক সব প্লাটফর্ম থেকে বিজ্ঞাপন, ডোমেইন বিক্রি, লাইসেন্স ফিসহ সব ধরনের লেনদেন থেকে উৎসে কর, শুল্কসহ সব ধরনের রাজস্ব আদায় করতে বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে বিজ্ঞাপন, ডোমেইন বিক্রি, লাইসেন্স ফিসহ সব ধরনের লেনদেনের বিপরীতে এসব প্লাটফর্ম থেকে আদায়যোগ্য উৎসে কর, শুল্কসহ সব ধরনের রাজস্ব আদায়ে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে অর্থ সচিব, আইন সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, তথ্য সচিব, বাংলদেশ ব্যাংকের গর্ভনর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ নিউজ পেপারস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, গুগল, ইয়াহু, আমাজন ও ইউটিউব কর্তৃপক্ষকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

বিবাদীদের আগামী ২৫ জুনের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হলফনামা আকারে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে বলে বলে রিট আবেদনকারী আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব জানিয়েছেন।

গুগল-ফেইসবুক-ইউটিউবে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া বিজ্ঞাপনের অর্থ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবৈধ পথে যাচ্ছে বলে তা তদারকির মধ্যে আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছিল।

এর মধ্যেই গত ৯ এপ্রিল বিষয়টি নিয়ে আদালতের নির্দেশনা চেয়ে মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লবসহ সুপ্রিম কোর্টের ছয় আইনজীবী হাই কোর্টে রিট আবেদনটি করেন।

ফাইল ছবি

অ্যাডভোকেট পল্লব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রযুক্তির যুগে গুগল, ফেইসবুক এখন প্রাত্যহিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা এখন এসব প্লাটফর্মে বিজ্ঞাপন দেখতে আগ্রহী। দিন দিন এর ব্যবহার বাড়ছে। বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও।

“এ সুযোগে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে এদেশ থেকে কোটি কোটি ডলার নিয়ে যাচ্ছে ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট বিশ্বের নামীদামি প্লাটফর্মগুলো। কিন্তু সরকার তার প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এখন এসব প্লাটফর্ম থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করেছে।”

কদিন আগেই এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী, একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু ও দৈনিক বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।

তার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, “আমরা তাদের জিজ্ঞাসা করব, এই অর্থ কি স্বচ্ছতার সঙ্গে পাঠানো হচ্ছে? তাদের যে আয়, তার ওপর কর বসাব। এটা সবখানেই দিচ্ছে, এখানে দিচ্ছে না।”

অ্যাডভোকেট পল্লব বলেন, “রুল জারি ও অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের পাশাপাশি গত ১০ বছরে অর্থাৎ ২০০৭ থেকে এখন পর্যন্ত এসব প্লাটফর্ম বাংলাদেশ থেকে কী পরিমাণ আয় করেছে, তা নিরূপণ করতে এবং নিরূপিত আয়ের বিপরীতে কী পরিমাণ উৎসে কর, শুল্ক ও রাজস্ব আদায়যোগ্য ছিল, তা নিরূপণ করতে সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে।”

কী পরিমাণ অর্থ এভাবে অবৈধপন্থায় পাঠানো হয়েছে, তা খুঁজে বের করতে প্রাক বাজেট আলোচনায় তৌফিক ইমরোজ খালিদী অর্থমন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়েছিলেন।

তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেছিলেন, “যারা বিজ্ঞাপন দিয়েছে তাদের সবার কাছে জানতে চান তারা কত টাকা, কীভাবে পাঠিয়েছে। গুগল ও ফেইসবুককেও জিজ্ঞেস করুন, বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন থেকে কীভাবে তারা অর্থ পেয়েছে।”

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে অ্যাডভোকেট পল্লবের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. কাউছার, মাজেদুল কাদের, সাজ্জাদুল ইসলাম ও অপূর্ব কুমার বিশ্বাস। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি মোতাহার হোসেন সাজু।