কমছে কর্পোরেট কর, ইঙ্গিত অর্থমন্ত্রীর

বাংলাদেশে কর্পোরেট করহার বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বেশি স্বীকার করে নিয়ে তা কমানোর আভাস দিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 April 2018, 06:36 PM
Updated : 9 April 2018, 07:12 PM

তিনি বলেছেন, “করপোরেট ট্যাক্সের ব্যাপারে… আই শ্যাল কনসিডার র‌্যাশনালাইজেশন। আমাদের করপোরেট করহার অত্যন্ত বেশি।”

আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর একথা বলেন মুহিত।

বাংলাদেশের কর্পোরেট করহার তুলনামূলক বেশি বলে তা কমাতে ব্যবসায়ীরা বলে আসছিলেন।

কিন্তু ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবের সময়ও ব্যবসায়ীদের যুক্তি খণ্ডন করে মুহিত বলেছিলেন, “আমরা প্রায়ই বলি যে আমাদের কর্পোরেট করহার খুব বেশি। কিন্তু খুঁটিনাটি পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, সে ধারণা ঠিক নয়।”

২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট দেওয়ার আগে সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকের পর সে অবস্থান থেকে স্পষ্টতই সরে এলেন তিনি।

বাংলাদেশে বিভিন্ন স্তরের করহার রয়েছে।

এরমধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান (মার্চেন্ট ব্যাংক ছাড়া) জন্য ৪০ শতাংশ কর এবং অতালিকাভুক্ত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ। মার্চেন্ট ব্যাংকের জন্য ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সকল প্রকার তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানির জন্য ৪৫ শতাংশ কর।

তালিকাভুক্ত মোবাইল ফোন কোম্পানি ৪০ শতাংশ ও অতালিকাভুক্ত মোবাইল ফোন কোম্পানি ৪৫ শতাংশ কর দেয়।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির বিদ্যমান করহার ২৫ শতাংশ এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য এই হার ৩৫ শতাংশ।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত

কর্পোরেট করহারের বিভিন্ন স্তরও কমিয়ে দুটিতে আনতে নিজের ইচ্ছার কথা জানান অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “মাই ইনটেনশন ইজ টু এলিমিনেট সো মেনি লেয়ারস। আইডিয়াল হবে দুইটা রেঞ্জ যদি করতে পারি।”

তবে এটা করতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছেন তার।

“আমি নিশ্চিত না। প্রথমদিকে আমি যখন মিনি কেবিনেটে এটা আলোচনা করি, তখন এটার সম্বন্ধে আপত্তি হয়।”

আপত্তির বিষয়টি মাথায় রেখেই এক্ষেত্রে চেষ্টা চালানোর প্রতিশ্রুতি দেন মুহিত।

সার্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে মতবিনিময়ের উদ্দেশে সম্পাদকদের নিয়ে ডাকা এই সভায় সংবাদপত্র মালিকদের অন্যতম সংগঠন নোয়াবের সভাপতি ও প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান এবং নোয়াব সদস্য ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনান নিউজ প্রিন্টের আমদানি শুল্ক কমাতে পীড়াপীড়ি করেন।

মাহফুজ আনাম বলেন, নিউজ প্রিন্টের আমদানি শুল্ক থেকে সরকারের যা আয় হয়, তা বাদ দিলে তেমন ক্ষতি হয় না।

শুধু নিজেদের শিল্পের সুবিধার বিষয়ে নোয়াবের দুই নেতার কথা উপস্থিত অন্য সম্পাদকদের মধ্যে বিরক্তির উদ্রেক ঘটায় বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।

ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক এ এইচ এম মোয়াজ্জেম হোসেনসহ কয়েকজন সম্পাদক বাজেট ঘিরে সার্বিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনায়  অর্থমন্ত্রীকে নানা পরামর্শ দেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী সব ক্ষেত্রেই নগদ লেনদেন নিরুৎসাহিত করার পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দেন।

একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু বলেন, সরকার যদি বিনামূল্যেও পজ মেশিন কিনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করে, তাহলেও রাজকোষ উপচে পড়বে।

বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ বলেন, ফেইসবুক ও গুগলে বিজ্ঞাপনের অর্থ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবৈধ পথে যাচ্ছে।

এই প্রসঙ্গে আলোচনায় তৌফিক ইমরোজ খালিদী ফেইসবুক ও গুগলকে তদারকির আওতায় আনার পরামর্শ দেন।

“তাদেরকে আপনার তদারকির আওতায় আনুন,” এই পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে তাদের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি খুলতে বলার জন্য অর্থমন্ত্রীকে পরামর্শ দেন তিনি।

গুগল, ফেইসবুকের মতো কোম্পানিকে ভারত কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে, সেই অভিজ্ঞতাও গ্রহণের পরামর্শ দেন তিনি।

কী পরিমাণ অর্থ এভাবে অবৈধপন্থায় পাঠানো হয়েছে তা খুঁজে বের করা আহ্বান জানান তৌফিক ইমরোজ খালিদী।

“যারা বিজ্ঞাপন দিয়েছে তাদের সবার কাছে জানতে চান তারা কত টাকা, কীভাবে পাঠিয়েছে। গুগল ও ফেইসবুককেও জিজ্ঞেস করুন, বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন থেকে কীভাবে তারা অর্থ পেয়েছে।”

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে গুগল-ফেইসবুকে বিজ্ঞাপন যাওয়ার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমরা তাদের জিজ্ঞাসা করব, এই অর্থ কি স্বচ্ছতার সঙ্গে পাঠানো হচ্ছে? তাদের যে আয়, তার ওপর কর বসাবো। এটা সবখানেই দিচ্ছে। এখানে দিচ্ছে না।”

বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপনের অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, এক্ষেত্রেও তা হতে পারে বলে পথ দেখান মোজাম্মেল বাবু ও হানিফ মাহমুদ।

এই প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “ভারতীয় যেসব চ্যানেল বাংলাদেশে দেখানো হচ্ছে, তাদের উপর বাংলাদেশের চ্যানেলের সমান চার্জ বসানো হবে।

“এবার তথ্য মন্ত্রণালয় রাজি হন আর না হন, এই চার্জ এবার আমি বসাতে যাচ্ছি।”

অর্থমন্ত্রী জানান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকদের কাছ থেকে ভ্যাট নেওয়া হবে। 

এই ভ্যাট তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেবেন কি নেবেন না, সে বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য নেই।

নিউজপ্রিন্টের আমদানি শুল্ক কিছুটা কমানো হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

সভায় অর্থসচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ সরকারি কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।