ভোটের বছরে রড নিয়ে ষড়যন্ত্র, অভিযোগ সাংসদের

ভোটের বছরে ‘সিন্ডিকেট করে’ রডের দাম বাড়িয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত করা হচ্ছে বলে সংসদীয় কমিটিতে অভিযোগ করেছেন একজন সংসদ সদস্য।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 April 2018, 03:44 PM
Updated : 5 April 2018, 04:56 PM

সেখানে তিনি বলেছেন, দেশে হঠাৎ করে রডের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, ঠিকাদাররা অনেক জায়গায় কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।

কুমিল্লা সদরের সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন নিজেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য। রডের দাম নিয়ে কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম চৌধুরী বরাবরে পাঠানো তার চিঠি নিয়ে বৃহস্পতিবার কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। তবে তিনি নিজে সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।

বাহাউদ্দিনের চিঠিতে বলা হয়, “নির্বাচনী বছরে মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে উন্নয়ন সাম্গ্রীর দাম বৃদ্ধি করে সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন ব্যাহত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।”

বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টি নিয়ে কমিটি আলোচনা করেছে। কমিটির পক্ষ থেকে বাণিজ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি সুরাহার জন্য বলা হয়েছে।”

এর আগে নির্মাণখাতের উদ্যোক্তাদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রিজের (বিএসিআই) পক্ষ থেকেও একই ধরনের অভিযোগ আনা হয়।

গত ২৯ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে বিএসিআইয়ের সভাপতি মুনীর উদ্দিন আহমেদ বলেন, “২৭ মার্চ সকালে টন প্রতি এম এস রডের দাম ছিল ৬৩ হাজার টাকা আর ওই দিন বিকালে টন প্রতি রডের দাম দাঁড়ায় ৭২ হাজার টাকা। এতেই প্রমাণ হয়, একটি চক্র সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রডের দাম বাড়াচ্ছে।”

রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা টিসিবির হিসাবে, গত ২৯ মার্চ ঢাকায় ৬০ গ্রেডের এমএস রড টনপ্রতি ৭১ হাজার টাকা থেকে ৭২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে; যা এক সপ্তাহ আগে ৬২ হাজার থেকে ৬৫ হাজার টাকা ছিল।

অন্যদিকে ৪০ গ্রেডের এমএস রডের টনপ্রতি দর ছিল ৫৮ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা; আগের সপ্তাহে তা ছিল ৫২ হাজার থেকে ৫৩ হাজার টাকা।

অবশ্য রড উৎপাদনকারীদের দুটি সংগঠন বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ রি-রোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা কারসাজির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তাদের দাবি, উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় রডের দাম বেড়েছে। সরকার কিছু নীতিগত উদ্যোগ নিলে রডের দাম টনপ্রতি অন্তত পাঁচ হাজার টাকা কমানো সম্ভব।

রড, সিমেন্ট, ইট, বালির মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের মানববন্ধন (ফাইল ছবি)

সংসদীয় কমিটির সভাপতি বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কমিটির পক্ষ থেকে বাণিজ্যমন্ত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে রডের দাম কমানোর উদ্যোগ নেবেন।”

এদিকে আসন্ন রোজার মাসে যাতে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল থাকে, সে ব্যাপারে কঠোর নজরদারির সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, “আমরা স্পষ্ট বলে দিয়েছি, কোনো জিনিসের দাম বেড়েছে এটা আমরা দেখতে চাই না। এজন্য যা যা করা দরকার মন্ত্রণালয় সেটা করবে।”

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রোজা উপলক্ষে টিসিবির পরিকল্পনা অনুয়ায়ী ২ হাজার মেট্রিক টন চিনি, ১৫০০ মেট্রিক টন মশুর ডাল, ১০ লাখ ৮৬ হাজার ৯৫৭ লিটার ভোজ্য তেল, ১ হাজার ৯৫৫ মেট্রিক টন ছোলা কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে বৈঠকে তথ্য দেওয়া হয়।

রোজায় সব বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে ১৮৭টি ট্রাকের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে। 

তাজুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ বৈঠকে কমিটির সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, ছানোয়ার হোসেন, লায়লা আরজুমান্দ বানু এবং মোহাম্মদ হাছান ইমাম খান অংশ নেন।