রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ৬.৩৩%

তৈরি পোশাকের উপর ভর করে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 April 2018, 01:29 PM
Updated : 3 April 2018, 01:29 PM

চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) সার্বিক রপ্তানি আয় ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ বাড়লেও তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৯ শতাংশের বেশি।

অর্থবছর শেষে তৈরি পোশাকের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করছেন রপ্তানিকারকরা।

তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরো অঞ্চলের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হওয়ার রপ্তানি আয় বাড়ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

আগামী দিনগুলোতে রপ্তানি আয় আরও বাড়বে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন তিনি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, “২০১৭ সালে বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া তরান্বিত হয়েছে। বিশেষ করে, আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের মূল গন্তব্য তথা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরো অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বাড়ায় রপ্তানি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে।

“আশার কথা হল, উদীয়মান ও উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি যেহেতু ঘুরে দাঁড়িয়েছে সেহেতু সামনের দিনগুলোতে আমাদের রপ্তানি খাত আরো গতিশীল হবে।”

টাকার বিপরীতে ডলারের দরবৃদ্ধি রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে অবদান রাখছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত একবছরে টাকার বিপরীতে ডলারে দর বেড়েছে ৫ শতাংশের বেশি। ছয়  মাসে বেড়েছে ৩ শতাংশ।

আগামী জুন পর্যন্ত (চলতি অর্থবছর) রপ্তানি আয় বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করেন বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান খান বাবু।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “চলতি অর্থবছর শেষে সামগ্রিক রপ্তানিতে মনে হয় ৬/৭ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হবে। কিন্তু জুনের পর অর্থাৎ আগামী অর্থবছর থেকে এই প্রবৃদ্ধি মনে হয় থাকবে না।

“এর কারণ দুটি: প্রথমত- জাতীয় নির্বাচন ঘিরে অস্থিতিশীল রাজনীতি। আর দ্বিতীয়ত- পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি।”

“ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে অবার হরতাল-অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও অস্থিরতা শুরু হয় কি না- সে কারণে ক্রেতারা সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন। ঠিকমতো পণ্য পাবেন কি না সে আশঙ্কায় তারা দেশে-শুনে অর্ডার দিচ্ছেন।

“অন্যদিকে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির জন্য ইতোমধ্যে বোর্ড গঠন করা হয়েছে। সেটা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে উৎপাদন খরচ বাড়বে। সে ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হবে।”

দেশের অন্যতম প্রধান তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইভিন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ২০১৭ সালের প্রথম দিকে রপ্তানি আয়ের গতি বেশ খারাপ ছিল। শেষের দিকে এসে বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসের প্রবৃদ্ধিও ভালো।

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বড় ধসের পর অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ- প্রতি মাসেই বেড়েছে রপ্তানি আয়।

মঙ্গলবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ দুই হাজার ৭৪৫ কোটি ১৫ লাখ (২৭.৪৫ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে। এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল দুই হাজার ৭৫৫ কোটি ৭০ লাখ (২৭.৫৫ বিলিয়ন) ডলার।

গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে দুই হাজার ৫৮১ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।

এ হিসাবে এই সাত মাসে আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দশমিক ৩৮ শতাংশ কম।

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয় ২৯ শতাংশ, অগাস্টে রপ্তানি আয় বাড়ে ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ। এই দুই মাসে (জুলাই-অগাস্ট) রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধি হয় প্রায় ১৪ শতাংশ; লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৮ শতাংশ বেশি। সেপ্টেম্বর শেষে সেই প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশে নেমে আসে, লক্ষ্যমাত্রাও হোঁচট খায়।

২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ২ হাজার ২৮৩ কোটি ৪৪ লাখ (২২.৮২ বিলিয়ন) ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে নিটওয়্যার খাতের পণ্য রপ্তানিতে এক হাজার ১৩২ কোটি ১১ লাখ ডলার এবং ওভেন পোশাক রপ্তানিতে এক হাজার ১৫১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার আয় হয়েছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, জুলাই-জানুয়ারি সময়ে মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৮৩ দশমিক ১৮ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে। এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ৩ দশমিক ০৩ শতাংশ।

এই নয় মাসে নিট খাতে রপ্তানি বেড়েছে ১১ দশমিক ৬১ শতাংশ। আর ওভেনে বেড়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

অন্যান্য খাতে রপ্তানি

জুলাই-মার্চ সময়ে হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। কৃষি পণ্য রপ্তানি ১৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি ১১ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়েছে।

ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১৫ শতাংশ।

তবে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি ১৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি ৮ শতাংশ কমেছে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন হাজার ৭৫০ কোটি (৩৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন) ডলার।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানি থেকে তিন হাজার ৪৬৫ কোটি ৫৯ লাখ (৩৪ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন) ডলার আয় করে, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেশি।