সর্বোচ্চ বাণিজ্য ঘাটতিতে বাংলাদেশ

বাণিজ্য ঘাটতিতে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে বাংলাদেশ।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 April 2018, 11:59 AM
Updated : 3 April 2018, 12:08 PM

চলতি অর্থবছরের সাত মাসেই (জুলাই-জানুয়ারি) পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে একহাজার ১২ কোটি ৩০ লাখ (১০.১২ বিলিয়ন) ডলার।

এই অংক গত অর্থ বছরের পুরো সময়ের চেয়েও প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বেশি এবং জুলাই-জানুয়ারি সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ।

বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশ মোট ৩১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে।

এই সময়ে বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশের আয় হয়েছে ২১ দশমিক ০৫ বিলিয়ন  ডলার। এই হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১০ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার।

গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের এই সাত মাসে পণ্য বাণিজ্যে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫২৮ কোটি ২০ লাখ (৫.২৮ বিলিয়ন) ডলার; অর্থবছরের পুরো সময়ে ঘটতি ছিল ৯৪৭ কোটি ২০ লাখ ডলার।

আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৬৪৬ কোটি ডলার।

এর আগে ২০১০-১১ অর্থবছরে পণ্য বাণিজ্যে বাংলাদেশের ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৯৯৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার; সেটাই ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বাণিজ্য ঘাটতি। এবার সাত মাসেই সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সরকারের বড় বড় প্রকল্পের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি আমদানি বাড়ায় বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

তথ্য বলছে, এই সাত মাসে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ। আর রপ্তানি আয় বেড়েছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ।

রেকর্ড বাণিজ্য ঘাটতিতেও উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে এখনও ৩২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রিজার্ভ আছে। প্রতি মাসে ৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হলেও এই রিজার্ভ দিয়ে ৬ মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, জ্বালানি তেল এবং খাদ্যপণ্যের দাম কম থাকায় ২০১৫-১৬ অর্থবছর এবং তার আগের দুই অর্থবছরে আমদানি ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম ছিল। অন্যদিকে রপ্তানি আয় সে সময় বাড়ছিল বলে বাণিজ্য ঘাটতি সহনীয় পর্যায়ে ছিল।

 

“এবার সরকারের বড় বড় বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ চলছে। সেগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় সরজ্ঞামাদি আমদানি হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারি-বেসরকারি উভয় পর্যায়েই প্রচুর চাল আমদানি হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দামও প্রায় ৭০ ডলারে উঠেছে। সব মিলিয়েই আমদানি খরচ বেড়ে গেছে।”

সেবা খাতে ঘাটতি ২.৫৮ বিলয়ন ডলার

২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে সেবা বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই সাত মাসে ঘাটতি ছিল ১৯৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য পরিমাপ করা হয়।

লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি ৫.৩৪ বিলিয়ন ডলার

আমদানি ব্যয় বাড়তে থাকায় বাংলাদেশের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যেও বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে এই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৩৪ কোটি ৭০ লাখ (৫.৩৪ বিলিয়ন) ডলার। গত অর্থছরের একই সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ লি মাত্র ৮৯ কোটি ডলার।

কমেছে বৈদেশিক বিনিয়োগ

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে মোট ১৯৯ কোটি ডলারের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে। এর মধ্যে নিট এফডিআইয়ের পরিমাণ ১১০ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১৯৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আর নিট এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল ১১৩ কোটি ডলার।

এ হিসাবে এই সাত মাসে এফডিআই ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ বাড়লেও নিট এফডিআই কমেছে ২ দশমিক ২১ শতাংশ।

বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে মোট যে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ দেশে নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকেই নিট এফডিআই বলা হয়ে থাকে।

পুঁজিবাজারে নিট বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট)। এই সাত মাসে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ৩১ কোটি ২০ লাখ ডলারের নিট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২১ কোটি ১১ লাখ ডলার।