আন্তর্জাতিক কলরেট পুনর্নির্ধারণ

আন্তর্জাতিক ইনকামিং কলের টার্মিনেশন রেট পুনর্নির্ধারণ করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2018, 04:00 PM
Updated : 22 Feb 2018, 07:23 PM

সর্বনিম্ন পৌনে দুই সেন্ট (০.০১৭৫ মার্কিন ডলার) এবং সর্বোচ্চ আড়াই সেন্ট (০.০২৫০ মার্কিন ডলার) কল টার্মিনেশন রেট পুননির্ধারণ করে বৃহস্পতিবার সব মোবাইল ফোন অপারেটর, আইজিডব্লিউ এবং আইসিএক্সের নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি দিয়েছে বিটিআরসি।

চিঠিতে বলা হয়েছে, সর্বনিম্ন কল টার্মিনেশন রেটের ভিত্তিতে রাজস্ব ভাগাভাগি হবে। পত্র জারি অর্থাৎ বৃহস্পতিবার থেকেই এ সিদ্ধান্ত কার‌্যকর হচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া চিঠিতে বলা হয়, বৈদেশিক মুদ্রা আহরণে বিটিসিএলসহ সব আইজিডব্লিউ অপারেটর কমিশন নির্ধারিত সীমানায় সর্বোচ্চ রেটে আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন করবে। এর ব্যত্যয় হলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা কম আনা হয়েছে বলে গণ্য হবে এবং প্রয়োজনে বিটিআরসি এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা নেবে।

অপারেটররা বলছে, এ সিদ্ধান্তে আইজিডব্লিউ অপারেটরদের আয়ের পথ আরেক ধাপ বাড়ল। এর ফলে বৈধপথে আন্তর্জাতিক কলের পরিমাণ কমে যাবে এবং ওটিটি (ভাইবার, হোয়াটঅ্যাপস ইত্যাদি) কল বাড়বে ফলে অপারেটরদের রাজস্ব কমবে বলেও আশংকা প্রকাশ করেছে তারা।

তবে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টা অনেকটা পরীক্ষামূলকভাবে নেওয়া হয়েছে। বিটিআরসি ইচ্ছা করলে যে কোনো সময় এই কলরেট পুনর্নির্ধারণ করতে পারবে।”

বর্তমানে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগে ‘ইনকামিং কল টার্মিনেশন রেট’ সর্বনিম্ন দেড় সেন্ট থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ সেন্ট।

আন্তর্জাতিক কল পরিচালনায় কর্তৃত্ব পাওয়া আইজিডব্লিউ অপারেটরদের ফোরাম ‘আইওএফ’ ২০১৫ সালের অগাস্ট থেকে এই হার দেড় সেন্ট থেকে বাড়িয়ে দুই সেন্ট নির্ধারণ করে।

তখন ‘ইনকামিং কল টার্মিনেশন রেট’ বাড়লেও সরকার, ইন্টার এক্সচেঞ্জ অপারেটর (আইসিএক্স) এবং মোবাইল অপারেটদের মধ্যে দেড় সেন্ট দাম ধরেই রাজস্ব ভাগাভাগি হচ্ছে এবং বাড়তি .৫ সেন্ট (০.০০৫ ডলার) যাচ্ছে আইজিডব্লিউ অপারেটরদের হাতে।

কল টার্মিনেশন রেট দুই সেন্ট করার পর বৈধ পথে কলের পরিমাণ কমে আসে, ফলশ্রুতিতে সরকার ও অন্যান্য অপারেটরদের আয়ও কমে যায় বলে গত বছর বিটিআরসির এক  প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। দৈনিক ১১ কোটি কল নেমে আসে সাড়ে সাত কোটিতে।

এ ঘটনার পর কল কমে আসায় এবং অবৈধ পথে কলের সংখ্যা বাড়ায় সরকার দৈনিক প্রায় দুই কোটি টাকা করে রাজস্ব হারাচ্ছে বলেও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল।

বর্তমানে রাজস্ব আয়ের ৪০ শতাংশ বিটিআরসি, ২০ শতাংশ আইজিডব্লিউ, ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ আইসিএক্স এবং ২২ দশমিক ৫ শতাংশ এএনএস পায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোবাইল ফোন অপারেটরদের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, এ সিদ্ধান্তে প্রাথমিকভাবে মনে হতে পারে ইন্টার এক্সচেঞ্জ অপারেটর (আইসিএক্স) এবং মোবাইল অপারেটদের মধ্যে দেড় সেন্ট দাম থেকে পৌনে দুই সেন্ট হিসেবে রাজস্ব ভাগাভাগিতে লাভ বাড়বে।

তবে এ ধারণা ঠিক নয় জানিয়ে তারা বলছেন, সর্বোচ্চ কল টার্মিনেশন রেট আড়াই সেন্ট করাতে (আগে দুই সেন্ট হিসেবে ছিল) আইজিডব্লউ অপারেটররা বেশি দামে কল আনবে, দাম বেশি হওয়াতে অবৈধ পথে কল বাড়বে এতে বৈধপথে কলের পরিমাণ কমে যাবে, কল কম আসাতে রাজস্বও কমে যাবে।

এ সিদ্ধান্তে আইজিডব্লউ অপারেটরদের সেলিং ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি হওয়ায় আয়ের পথ আরেক ধাপ বাড়ল বলে মনে করছে মোবাইল ফোন অপারেটররা। সরকার যদি পৌনে দুই সেন্ট ফ্ল্যাট রেট হিসেবে সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে এ সমস্যা থাকবে না বলেও জানিয়েছে অপারেটররা।