বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার পেলেন অর্থনীতিবিদ আজিজুর ও মাহবুব

মৌলিক অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখায় ‘বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার ২০১৭’ পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, রিভারসাইডের ইমেরিটাস অধ্যাপক আজিজুর রহমান খান এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও ব্র্যাকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক প্রয়াত মাহবুব হোসেন।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Feb 2018, 03:35 PM
Updated : 18 Feb 2018, 04:04 PM

রোববার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে আজিজুর রহমান খান এবং মাহবুব হোসেনের স্ত্রী হাতে পুরস্কার তুলে দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

দুইজনকে একটি করে স্বর্ণপদক, ক্রেস্ট এবং দুই লাখ টাকা করে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে মূল্যবান গবেষণা ও গুরুত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০০ সাল থেকে এই পুরস্কার দিয়ে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এবার পঞ্চমবারের মত এ পুরস্কার দেওয়া হল।

২০০০ সালে অধ্যাপক রেহমান সোবহান, ২০০৯ সালে ড. নুরুল ইসলাম, ২০১১ সালে অধ্যাপক মুশাররফ হোসেন এবং ২০১৩ সালে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ (মরণোত্তর) এবং ড. স্বদেশ রঞ্জন বোস (মরণোত্তর) এই পুরস্কার পেয়েছিলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের নেতৃত্বে চারজন অর্থনীতিবিদের একটি জুরি বোর্ড এই পুরস্কারের জন্য ড. আজিজুর রহমান খান এবং ড. মাহবুব হোসেনকে (মরণোত্তর) মনোনীত করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকে আজিজুর রহমানকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন জানিয়ে অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, “ছাত্রাবস্থা থেকেই আজিজুরের বেশ সুনাম ছিল, তাকে সবাই চিনত পারফেকশনিস্ট হিসেবে। স্বাধীনতার পর তিনি ‘ইকোনমি অব বাংলাদেশ’ নামে একটি গ্রন্থ লিখেন, যা সে সময় বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর লেখা অন্যতম দলিল হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। আমি আমার কর্মজীবনে সেই বইটি সাথে রাখতাম, কোনো বিষয়ে আটকে গেলে বইতে চোখ বুলিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিতাম।”

অর্থমন্ত্রী বলেন, “আজকে আমার অনেক বেশি খুশি লাগছে, যদিও একটুখানি শোকের ব্যাপারও আছে, কারণ মাহবুব নেই। সে অনেক আগেই আমাদের ছেড়ে চলে গেছে, তার দেওয়ার আরও অনেক কিছু ছিল।”

অনুষ্ঠানে মাহবুব হোসেনকে ‘একজন মেধাবী ছাত্র’, ‘দক্ষ গবেষক’ ও ‘দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ কৃষি গবেষক’ হিসেবে অভিহিত করেন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, “ড. মাহবুব শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র এশিয়ার কৃষি অর্থনীতি গবেষণার পথিকৃৎ। গ্রামীণ অর্থনীতি ও কৃষির উন্নয়নে তার কাজের বিশেষ স্থান রয়েছে।”

আর আজিজুর রহমানের গবেষণা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাথেয় হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আজিজুর রহমান তার পুরস্কারের অর্থ দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির উন্নয়নের জন্য কাজ করা সংগঠন ‘উৎস বাংলাদেশ’কে দান করেন।

তিনি তার বক্তব্যে উন্নত ও অনুন্নত অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি, বিতরণ ও বাজার ব্যবস্থার সঠিক তথ্য, বিভিন্ন মৌলিক দিকের ওপর আলোকপাত করেন। আর প্রয়াত ড. মাহবুব হোসেনের পক্ষে বক্তব্য রাখেন তার ছোট ভাই এসএম ফারুক হোসেন।

উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ আজিজুর রহমান বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, রিভারসাইডের অর্থনীতি বিভাগের এমিরেটাস অধ্যাপক। উন্নয়ন অর্থনীতিতে বিশেষ করে উন্নয়ন পরিকল্পনা, কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ও ভূমি সংস্কার এবং আয় বণ্টন ও অসমতা বিষয়ে গবেষণা কর্মে তার অবদান রয়েছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ থেকে পিএইচডি করেছেন।

কর্মজীবনে তিনি বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক, বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রধান, লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্সের প্রভাষক, আইএলওর এশিয়ান এমপ্লয়মেন্ট প্রোগ্রামের পরিচালক এবং বিশ্ব ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্সের সম্মানীত ফেলো।

অন্যদিকে মাহবুব হোসেন গ্রামীণ অর্থনীতি ও শিল্প, কৃষিভিত্তিক কাঠামো, ভূমি সংস্কার, আয় বণ্টন, দারিদ্র্য বিমোচন কৃষিতে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, ক্ষুদ্রঋণের প্রভাব ও প্রান্তিক কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে নিবিড় গবেষণা করে দেশে-বিদেশে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন।

তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও কেমব্রিজ পিএইচডি করেছেন।

কর্মজীবনে তিনি বিআইডিএসের মহাপরিচালক, আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (ইরি) সোস্যাল সায়েন্সেসের ডিভিশনের অর্থনীতিবিদ এবং ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

কৃষির উন্নয়নে অবদানের জন্য তিনি ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতি থেকে স্বর্ণপদক লাভ করেন। ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি মারা যান তিনি।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পিকেএসএফ চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, বিআইবিএমের মহাপরিচালক তৌফিক আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামান।