সব অভিযোগ অসত্য, দাবি মহীউদ্দীন খান আলমগীরের

ঋণ কেলেঙ্কারি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে চাপের মুখে ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ছাড়লেও কোনো অনিয়মে জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করেছেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Feb 2018, 01:32 PM
Updated : 12 Feb 2018, 01:33 PM

সোমবার সংসদে বক্তব্যে ক্ষমতাসীন দলের এই সংসদ সদস্য তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলেও দাবি করেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি স্পিকারের ‘প্রটেকশন’ও চেয়েছেন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীর বর্তমান সংসদে সরকারি হিসাব কমিটির সভাপতি। শেখ হাসিনার গত সরকারে কিছু দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকার কয়েকটি ব্যাংক অনুমোদন দিলে তার একটি পান মহীউদ্দীন খান আলমগীর।

তবে যাত্রা শুরুর কয়েক বছরেই তা ধুকতে থাকে। ব্যাংকটিতে ঋণ বিতরণে শত শত কোটি টাকা অনিয়ম ধরা পড়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যবেক্ষকও বসিয়েছিল।

সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে দেওয়া এক প্রতিবেদনে ফারমার্স ব্যাংককে দেশের আর্থিক খাতের জন্য ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

এর মধ্যে গত ২৭ নভেম্বর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে মহীউদ্দীন খান আলমগীর পদত্যাগ করার পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, “ফারমার্স ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতারাই ব্যাংকটিকে লুটপাট করে শেষ করে দিয়েছে।”

মহীউদ্দীন খান আলমগীর (ফাইল ছবি)

এই সময়টাতে নিশ্চুপ থাকা মহীউদ্দীন খান আলমগীর সোমবার আইনসভার প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় দাঁড়িয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

তিনটি সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে অসত্য তথ্য প্রকাশের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “তারা বলেছেন, ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে আমি ব্যক্তিগতভাবে ঋণ বিতরণের আগে কমিশন নিয়েছি।

“আমার ৭৭ বছর বয়সে আমি কখনও এত বড় অসত্য কথার সম্মুখীন হইনি। শিল্প ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় ছিলাম, কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলাম। শিল্পঋণ সংস্থার সভাপতি ছিলাম। আমার কার্যকলাপ সম্পর্কে এ ধরনের কোনো উদাহরণ কেউ দিতে পারেননি।”

সাবেক আমলা মহীউদ্দীন খান সরকারি চাকরি ছাড়ার পর ১৯৯৬ সালে আওয়া্মী লীগের টিকেটে সংসদ সদস্য  হন; পরে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী করা হয় তাকে।

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে দুর্নীতি মামলায় সাজা হয়েছিল তার। পরে উচ্চ আদালত তা বাতিল করে।

ফারমার্স ব্যাংক নিয়ে  অভিযোগের জবাব দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে থাকা নিজের ব্যাংক হিসাবের ‘পুরো অংশ’ সংসদে নিয়ে আসেন মহীউদ্দীন খান।

তিনি বলেন, “এই অংশে কোথাও কেউ প্রমাণ করতে পারবেন না যে কোনো ঋণ গ্রহীতার কাছ থেকে আমার এখানে কোনো অর্থ ঢুকেছে। এ প্রসঙ্গে বলা প্রয়োজন, পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী আমি ১৭ জুলাই ১৩ কেটি টাকা গ্রাহকের হিসাব থেকে আমার হিসাবে নিয়ে এসেছি। আমি এ হিসাবটি উপস্থাপন করতে চাই। এখানে ১৭ জুলাই থেকে পরবর্তী ৭ বা ১০ দিনের হিসাব আছে।

“এ ধরনের অপরাধ সমাজে একটি সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি করার প্রতিকূল। সুস্থ সমাজিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠার জন্য আপনার (স্পিকার) প্রত্যবেক্ষণ চাইব।”

ফারমার্স ব্যাংক এখন ধুঁকছে

তিনি বলেন, “প্রতিবেদনে বলেছেন, আমি চেয়ারম্যান থাকতে অননুমোদিত বিল দিয়েছে। কোনো অনুমোদন বহির্ভূত ঋণ ফারমার্স ব্যাংক, আমরা প্রক্রিয়াজাত করিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন পর্যবেক্ষক দু’বছর ধরে ছিল, তারাও এটা অবলোকন করেছেন।

“এ ধরনের অনুমানভিত্তিক প্রতিবেদন আর্থিক ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা রাখার প্রতিকূল। এক্ষেত্রেও আপনার প্রতিরক্ষণ চাই।”

“একই প্রতিবেদনে বলেছেন, ফারমার্স ব্যাংক অনুমোদিত ঋণের চেয়ে বেশি অননুমোদিত ঋণ দিয়েছি। এই অভিযোগও অস্বীকার করছি। ঋণ দেওয়ার কর্তব্য ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। তারা অনুমোদনের বাইরে কোনো ঋণ যদি দিয়ে থাকেন, তা তাদের দায়িত্ব। আমার জানা মতে, যত দিন চেয়ারম্যান ছিলাম এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।”

কর্মচারী নিয়োগেও কোনো অনিয়ম ঘটেনি বলে দাবি করেন মহীউদ্দীন খান।

তিনি বলেন,“তারা তথ্য পেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার করার ক্ষেত্রে আমার কিঞ্চিৎ ভূমিকা ছিল। আপনি (স্পিকার) অনুশাসন দেবেন যাতে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার মেনে চলে।”

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা না মেনে ফারমার্স ব্যাংকের নতুন ঋণ দেওয়ার কথাও আসে। এসব অনিয়মের কথা ফারমার্স ব্যাংক স্বীকারও করেছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে যে অনিয়মগুলো চিহ্নিত করা হয়, সেগুলো হল

>> নীতিমালা অনুসরণ না করে গ্রাহকদের ঋণ দেওয়া

>> অস্তিত্ববিহীন/সাইন বোর্ড সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া

>> ঋণ নিয়মাচার লঙ্ঘন করে ব্যাংকের পরিচালকসহ অন্য ব্যাংকের পরিচালকদের ঋণ দেওয়া

>> অপর্যাপ্ত/ত্রুটিপূর্ণ জামানতের বিপরীতে ঋণ দেওয়া

>> এক ঋণগ্রহীতার সর্বোচ্চ ঋণসীমার অতিরিক্ত ঋণ সুবিধা দেওয়া

সংসদীয় কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক প্রতিবেদন দেখে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “ব্যাংকগুলো যেসব অনিয়ম করেছে, পড়লেই গা শিউরে ওঠে। এসব অনিয়মের দায় বোর্ডকে নিতে হবে। তারা দায় এড়াবে কীভাবে?”

প্রভাবশালী চেয়ারম্যানের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফারমার্স ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভয় পায় কি না- এই প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন, “কিছুটা তো পায়ই।”