নওগাঁর ইসরাফিল আলম বৃহস্পতিবার সংসদে ‘বেসরকারি সদস্যদের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব’টি উত্থাপন করেন।
প্রস্তাবে তিনি বলেন, “ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনিয়ম ও ত্রুটিমুক্তভাবে পরিচালিত করার জন্য স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হোক।”
প্রথা অনুযায়ী, তার প্রস্তাব নিয়ে অর্থমন্ত্রী মুহিত তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থা পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত নয়। তবে সরকারের চেষ্টার কমতি নেই।
মুহিত বলেন, “মাননীয় সদস্য যে প্রস্তাব দিয়েছেন সেখানে তিনি যা চেয়েছেন, সেটি হচ্ছে এসব কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হোক। দেশের ব্যাংকসমূহের অনিয়ম ও ত্রুটি বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে শুরু হয় এবং এক সময় মারাত্মক আকার ধারণ করে।
“একসময় ডিফল্ট ঋণ হয়ে যায় ৪০ শতাশং। এখন দুই ডিজিটে আছে-১১/১২ শতাংশ। ২০১৩ সালে সরকার ব্যাংকিং আইন সংশোধন করে। এটা একটা চলামান প্রসেস। দু‘দিন আগে আরেকটি সংশোধনী পাস করেছি।”
বেসরকারি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব উঠলে তা সরকারের পক্ষে মন্ত্রী তা গ্রহণ করতে পারতেন; আর না চাইলে তিনি তা প্রত্যাহারের অনুরোধ করতে পারেন। তবে প্রস্তাব উত্থাপন হয়ে গেলে তা গ্রহণ কিংবা প্রত্যাহার দুটো ক্ষেত্রেও সংসদে ভোটে দিতে হয়।
এক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী মুহিত সংসদ সদস্য ইসরাফিলকে তার তোলা প্রস্তাবটি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। তখন ইসরাফিল তা প্রত্যাহার করে নেন। পরে কণ্ঠভোটে প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করা হয়।
ব্যাংক খাতে অব্যস্থাপনা নিয়ে সরকারের সমালোচনার মধ্যে ইসরাফিল প্রস্তাবটি তুলেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, “আমাদের আর্থিক ও ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে সবসময় কোনো না কোনো বিতর্ক সমস্যা এবং সমালোচনা আমাদেরকে প্রায়ই বিব্রত করে। আমাদেরকে বাকরুদ্ধ করে, হতাশ করে।
“আমাদের সরকারের প্রচেষ্টা নেই, আইন নেই, জনবল নেই, একথা বলতে পারি না। কিন্তু যারা এসব আইন প্রয়োগের দায়িত্বে আছে, প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে আছে, তাদের ব্যর্থতার জন্য আর্থিক সেক্টর বিপর্যয়ের মুখে, বিপন্নতার মুখে পতিত হয়েছে, তার দায়িত্ব সরকার ও সংসদকে গ্রহণ করতে হচ্ছে।”
ব্যাংক খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে দাবি করে ইসরাফিল বলেন, “খোলা চোখে মানুষ দেখেছে, জেনেছে। মন্ত্রণালয়, সরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় নাই। কিছু কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যা জোড়াতালি দেওয়ার মতো।”
ইসরাফিল বলেন, “যেসব ব্যাংক টাকা আত্মসাৎ করে সেসব ব্যাংক টিকিয়ে রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। যারা শর্ত পূরণ করতে পারে না, তাদের লাইসেন্স নবায়ন না করে কেন বাতিল করা হচ্ছে না। কেন তাদের সনদ নবায়ন করা হচ্ছে?
“ব্যাংকিং সেক্টরের দুরবস্থা থেকে বের হতে অর্থমন্ত্রী যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন তা দৃশ্যমান হোক। কারা খেলাপি তাদের নাম ঘোষণা করা হোক। কুঋণ দেওয়ায় কোন কোন অফিসার জড়িত তা প্রকাশ করা হোক। স্বচ্ছতা না হলে এ খাত শক্তিশালী হবে না।”