ব্লেজার-গরম কাপড়ের বিক্রি বেড়েছে বাণিজ্য মেলায়

মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা প্রায় অর্ধেকে এসে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার সারাদিন ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছিল মেলাপ্রাঙ্গণ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2018, 07:07 PM
Updated : 12 Jan 2018, 07:07 PM

এদিন বিকালে মেলাপ্রাঙ্গণে ঢুকতে গিয়ে আগারগাঁওয়ে র‌্যাব-২ এর ক্যাম্পের সামনে থেকে যানবাহন ও দর্শনার্থীদের জটে পড়তে হয়। ভিড় ছিল সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও বিজয় সরণি-আগারগাঁও এলাকায়ও।

মেলা শুরুর পর এতদিন বেচাকেনায় ধীর গতি থাকলেও এদিন প্রায় সব ধরনের স্টলেই বেচাকেনা বেড়েছে। দর্শনার্থীরাও দুই হাত ভর্তি মালামাল নিয়ে মেলা প্রাঙ্গণ ছেড়েছেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনায় এবার শীতের তীব্রতা বাড়ায় মেলায় বেড়েছে ব্লেজারসহ গরম কাপড়ের চাহিদা। বেশ বিক্রি হওয়ার কথা জানিয়েছেন দোকানিরা।

এদিন ব্লেজার-কটির দোকানে দেখা গেছে উপছে পড়া ভিড়। পাশাপাশি শীতের গরম জামা, শাল, চাদরের দোকানেও ক্রেতা উপস্থিতি ছিলে চোখে পড়ার মতো।

গত বছর বাণিজ্য মেলায় ১২০টির মতো ব্লেজারের স্টল থাকলেও এবার এর সংখ্যা কিছুটা কমেছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। মেলায় স্টল দিয়ে লোকসানের মুখে পড়ে অনেকে এবার আর ব্লেজার নিয়ে বসেননি বলে তারা মনে করছেন।

মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার দর্শনার্থীদের ঢল নামে।

মেলার পূর্বপ্রান্ত থেকে শুরু করে মূল ফটক পর্যন্ত দক্ষিণের সারিতে স্টলগুলোর মধ্যে অন্তত ৩০টি স্টল দেখা গেছে ব্লেজার-কটির পসরা।

ডেসিনি ফ্যাশনের বিক্রয়কর্মী রাজন বলেন, “মেলা শুরুর পর এতদিন বেচাকেনা হয়নি বললেই চলে। তবে আজ বেশ বেচাকেনা হচ্ছে। আমি নিজেই সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০ হাজার টাকার বিক্রি করেছি।”

গত বছর ৮৫০ টাকা, এক হাজার টাকা, ১২৫০ টাকা মূল্যে স্টলগুলোতে ব্লেজার পাওয়া গেলেও এবার ১৩৫০ টাকার নিচে কোনো স্টলেই ব্লেজার বিক্রি হচ্ছে না।

দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে শিউলি ফ্যাশনের বিক্রয়কর্মী শাওন বলেন, এখন সব কিছুরই দাম বাড়তি। খরচ বেড়েছে। এর চেয়ে কম দামে বিক্রি করলে চলে না।

মেলা থেকে ১৩০০ ও ১৪০০ টাকায় দুটি ব্লেজার কিনেছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী কৃষ্ণ মণ্ডল ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী বিবেক গায়েন।

মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার দর্শনার্থীদের ঢল নামে।

তাদের মতে, মেলার শুরুর দিকে হওয়ায় এখন ব্লেজারের দাম বাড়তি। শেষ দিকে দাম কিছুটা ছেড়ে দেবে স্টলমালিকরা।

শতরূপা বস্ত্রবিতানের এক কর্মী জানান, শুক্রবার সকাল থেকেই কিছুটা বিক্রি হয়েছে। তাদের স্টলে ৪০০ টাকায় শাড়ি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মেয়েদের অন্যান্য পোশাকেও মূল্য ছাড় রয়েছে।

সবজি কাটার জন্য ভারত, পাকিস্তান ও ইরানের প্যাভিলিয়নগুলোতে বিক্রি হচ্ছে বিশেষ যন্ত্র। স্টলগুলোতে ৫০০ টাকায় সালাদ তৈরি, সবজি কাটা, মসলা মেশানোর কিছু পণ্যের কথা লাউড স্পিকারে অবিরাম বলছিলেন বিক্রেতারা। পেঁয়াজ, টমেটো, গাজার কেটেও ক্রেতাদের দেখিয়ে দেন তারা।

বাণিজ্য মেলায় যারা আসছেন তাদের অধিকাংশই দু-এক বাক্স বিস্কুট না কিনে ফিরছেন না। দেশীয় বিভিন্ন কোম্পানি বিস্কুট, চানাচুর, চকলেটসহ অন্যান্য পণ্যে বড় ধরনের মূল্য ছাড় দিয়ে রেখেছেন মেলায়।

মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার দর্শনার্থীদের ঢল নামে।

বিস্ক ক্লাব নামে একটি প্যাভিলিয়নে গিয়ে দেখা যায়, বাজার মূল্য ২২৫ টাকার বিস্কুট তারা বিক্রি করছেন ১৫০ টাকায়। এসব বিস্কুট রাখতে আরএফএলের তৈরি কনটেইনারও দিচ্ছেন তারা।

বিস্ক ক্লাবের এক বিক্রয়কর্মী বলেন, মেলায় তাদের বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজে বড় ধরনের ছাড় রয়েছে। মূলত ক্রেতাদের খুশি করতেই কোম্পানি মেলার মাসজুড়ে খুচরা মূল্যের চেয়ে হ্রাসকৃত মূল্যে ক্রেতাদের হাতে, বিস্কুটসহ অন্যান্য শুকনো খাবার তুলে দিচ্ছে।

মেলায় প্রাণ গুড়া মসলার নামে একটি মিনি প্যাভিলিয়ন থেকে প্রাণের ৪৫০ টাকার পণ্য কেনেন আজিজ আহমেদ ও তার স্ত্রী শরীফা। প্রাণ মসলা, চিনিগুড়া চাল, আচার, পিনাটবারসহ আরও পণ্যের সঙ্গে তিনি পেয়েছেন কয়েকটি প্লাস্টিক বাটি। স্ক্র্যাচ কার্ড ঘষে প্রাণ গুঁড়া মরিচের একটি প্যাকেট জিতলেও বায়না ধরে আরেকটি বাটি নিয়ে যান শরীফা।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়া।

এই স্টলের বিক্রয়কর্মীরা জনান, অন্তত সাড়ে চারশ টাকার কেনাকাটা করলেই স্ক্র্যাচ কার্ড দেওয়া হচ্ছে। কার্ড ঘষে নানা পুরস্কার জিতছেন ক্রেতারা। এছাড়া প্রাণের সব পণ্যেই কমবেশি মূল্য ছাড় রয়েছে।

বাণিজ্য মেলার প্রবেশ মুখের সোজা দক্ষিণ পাশ জুড়ে রয়েছে গৃহসজ্জা, ফ্যাশন হাউজ ও ব্লেজারের স্টল। একটি স্টলে ৮০০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে কাশ্মিরি শাল বিক্রি করতে দেখা যায়।

স্টলমালিক সেলিম বলেন, “আমরা মেলার পেছনের পাশে পড়ে গেছি। এই দিকটাই দর্শনার্থীদের আনাগোনা কম। তবে আজ শুক্রবার হওয়ায় কিছু বেচাকেনা হয়েছে।”