শুক্রবার রাজধানীর বিসিসি অডিটোরিয়ামে ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের এগিয়ে যাওয়ার আরও ৪ বছর’ শীর্ষক বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে প্রযুক্তি খাতের রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনা ও হাই টেক পার্কে বিনিয়োগে কর অবকাশের সুবিধার বিষয়েও কথা বলেন তিনি।
সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট দিতে উদ্যোগ নেওয়া হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ এক রেটে সারা দেশে ইন্টারনেট পাবে, এটা হওয়া উচিত। গ্রামাঞ্চলে বসবাস করা তো কোনো অপরাধ না, দেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের জন্য সমান দামে ইন্টারনেট দেওয়া উচিত, এটা বিবেচনা করা উচিত।”
বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গতি তার প্রয়োজন অনুযায়ী হতে পারেনি মন্তব্য করে নতুন বছরে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া মোস্তাফা জব্বার বলেন, “আমরা যদি সিঙ্গাপুর বা কোরিয়ার দিকে তাকাই, সিঙ্গাপুরে ২০১৫ সালে প্রতি বাড়িতে এক জিপিবিএস ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল, আমরা কেন এক এমপিবিএস পৌঁছাতে পারব না।
“ইন্টারনেটের গতি পৌঁছাতে হবে, কেবল মাত্র মোবাইল ব্রডব্যান্ড দিয়ে জনগণের ইন্টারনেট চাহিদা পূরণ করা যাবে না। সেই পরিকল্পনা চলছে।”
আইএসপিগুলোর উদ্দেশে মন্ত্রী প্রশ্ন তুলে বলেন, “সরকার ব্যান্ডইউডথ বিক্রি করে.... আমাদের ডেটা কিনতে হয়। ব্যান্ডইউডথ কিনে ব্যবসা করবেন, মুনাফা যোগ করে জনগণের কাছে পৌঁছাবেন- এটাই স্বাভাবিক, তবে কেন আনলিমিটেড ডেটা পাব না।”
ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ইন্টারনেটের মহাসড়ক তৈরি করা বড় চ্যালেঞ্জ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশ নতুন প্রজন্মের, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে নতুন প্রজন্মের জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের জন্য কাজ করা।”
“নতুন প্রজন্মকে কেবল মাত্র ইন্টারনেট দিতে পারলে তার চেয়ে বেশি খুশি হয়ত তারা হবে না।”
তবে নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে ইন্টারনেট অপব্যবহারকারীদের নিয়ন্ত্রণের কথা বলেন মন্ত্রী জব্বার।
“ইন্টারনেট অপব্যবহারকারীদের এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে যাতে মানুষের জীবন কঠিন করে না তোলে।”
প্রযুক্তি খাতের রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে উঠে আসতে দেশীয় উৎপাদকদের উৎসাহিত করার নানা উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন জানান মন্ত্রী।
“বাংলাদেশে পণ্য উৎপাদনে এমন একটি জায়গা... আশেপাশে খুঁজে পাওয়া যাবে না। হাইটেক পার্কে যারা পণ্য উৎপাদন করবে, তারা ট্যাক্স হলিডে পাবে, আর্থিক বেনিফিট তো দিচ্ছি, রপ্তানি করলে ক্যাশ ইনসেনটিভ দিচ্ছি।”
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের এগিয়ে যাওয়ার আরও ৪ বছর বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন হলেও আগামীতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগসহ দুই বিভাগের অর্জন একসাথে উপস্থাপনা করা হবে বলে জানান মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
তিনি বলেন, “টেলিকম বিভাগের এখানে কিছু প্রতিষ্ঠান আছে- যারা ঐতিহাসিকভাবে রুগ্ন, ডাক বিভাগের পোস্ট অফিসগুলোকে ডিজিটাল হাবে পরিণত করা হবে।”
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টেলিটককে লাভজনক ও জনপ্রিয় করতে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আশার খবর হচ্ছে, গত কয়েক মাসে গ্রাহক সংখ্যা ৩২ থেকে ৪৫ লাখে উন্নীত হয়েছে। (টেলিটক) এমডি বলেছেন- ফোন কলের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বার দেওয়া হয়েছে, এর নিচে দেওয়া যাবে না। এই বারটা ঠিক করা যায় কিনা, কত কমালে কী করলে এক নম্বরে যেতে পারবে তা চেষ্টা করা হবে।
“প্রতিযোগিতামূলকভাবে জনগণের কাছে যেতে পারে এবং কোনো বার যেন তাকে আটকাতে না পারে, সেই চেষ্টা করা হবে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যেন প্রতিযোগিতা করতে পারে, সে অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হবে।”
টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস) ও বিটিসিএলকে লাভজনক করার উদ্যোগ নেওয়া হবে জানিয়ে মন্ত্রী জানান, আগামী ২৬ থেকে ৩১ মার্চের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে।
ডটবাংলা ও ডটবিটি ডোমেইনের নিবন্ধন ও পেটেন্ট পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে নেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ডটবাংলা ডোমেইন নিতে ‘বিশেষ শব্দ’ নামে ১০ হাজার বা ১৫ হাজার করা হয়েছে। ডোমেইন নিবন্ধন করার ক্ষেত্রে এই বিশেষ শব্দ থাকবে না, আশা করি সকল বাংলা শব্দের জন্য একই হার প্রযোজ্য হবে।
আইসিটি বিভাগের চার বছর ও সামনের পথ
চার বছরের অগ্রগতি জানাতে আসা সংবাদ সম্মেলনে উদ্ভাবক ও উদ্যোক্তা তৈরিতে নানা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বলে জানান আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
২০১৭ সালে তথ্য প্রযুক্তি খাতে রপ্তানি আয় ৮০০ মিলিয়ন হয়েছে জানিয়ে ২০১৮ সালে তা এক বিলিয়ন এবং ২০২১ সালে ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন পলক।
শিক্ষার আধুনিকায়নের জন্য আইসিটিকে কার্যকর টুল হিসেবে ব্যবহার করা হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ক্লাসরুম ধারণা থেকে লার্নিং স্পেস করা হবে, লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালে নতুন করে ৪০ হাজার ছেলেমেয়ে যেন ঘরে বসে কাজ করতে পারে সেজন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
তিনি জানান, ‘শি পাওয়ার’ নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ হাজার ৫০০ নারীকে তথ্য প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষিত করে উদ্যোক্তা তৈরি করা হবে। এখানে তাদের নয় মাসের প্রশিক্ষণে ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা থাকবে।
এ বছর জুনে টিয়ার ফোর ডেটা সেন্টার নির্মাণের কাজ শেষ হবে এবং ২০২১ সালের মধ্যে দেশে ২৮টি আইটি পার্ক নির্মাণ হলে তিন লাখ তরুণ-তরুণীর কাজের ক্ষেত্র হবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
ই-গভর্নেন্সের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে ৮২টি মন্ত্রণালয় ও ১২০টি সংস্থাকে ডিজিটাইজড করে সেবা আরো সহজলভ্য করা হবে এবং ডিজিটাল পেইমেন্ট ওয়ালেটের মাধ্যমে ইউটিলিটি সার্ভিসগুলো নিয়ে আসা হবে বলেও জানান পলক।
ন্যাশনাল ইর্মাজেন্সি সার্ভিস ‘৯৯৯’ শুরু করা হয়েছে এবং বড় পরিসরে জনগণ এর সেবা পাচ্ছে।
২০১৭ সালে সফটওয়্যার খাত ‘ট্যাক্স হলিডে’ পেয়েছে জানিয়ে হার্ডওয়্যার খাতেও তা পাওয়ার আশা প্রকাশ করে প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, হার্ডওয়্যার সংযোজন ও উৎপাদনে ৯৪টি পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়ে এক শতাংশ করার ফলে দেশে হার্ডওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারিং এ নতুন দিগন্ত তৈরি হয়েছে।
সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ও সার্ভিস রপ্তানিতে ১০ শতাংশ প্রণোদনা নতুন বিনিয়োগের সম্ভবনা তৈরি করেছে। এ খাতে তারা ১০ শতাংশ ক্যাশ ব্যাক পাবে।
স্মার্ট সিটি, গ্লোবাল সিইও আউটরিচ, জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি এবং শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফিউচার টেকনোলজি মাদারীপুরে করার পরিকল্পনার কথা জানান প্রতিমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে আইসিটি বিভাগের সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এছাড়া বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।