শিক্ষা ব্যবস্থা না বদলালে ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানে সঙ্কট বাড়বে: জব্বার

প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা বদলাতে না পারলে ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান বড় ধরনের সঙ্কটে পড়বে হবে বলে মনে করছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2018, 01:53 PM
Updated : 10 Jan 2018, 02:03 PM

বুধবার রাজধানীর বেসিস মিলনায়তনে আইটি কনসাল্টিং এবং সফটওয়্যার কোম্পানি ইজেনারেশন লিমিটেড আয়োজিত,`বৈশ্বিক অর্থায়ন ব্যবস্থায় ব্লকচেইন- বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনার এ কথা বলেন মন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, “আমরা কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থাকে বদলাতে পারিনি। বদলাতে পারিনি বলে শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্কটটা রয়েছে। যাদেরকে আমরা তৈরি করছি, তাদেরকে ডিজিটাল যুগের কর্মক্ষম শ্রমে দেওয়া ডিফিকাল্ট হবে। তাদেরকে যদি কর্মক্ষম করতে না পারি, প্রতিষ্ঠিত করতে না পারি তাহলে বড় ধরনের সঙ্কটে পড়ব। এক সময় দেখা যাবে যে জনসংখ্যার ঘাড়ের উপর বসে আছে।”

বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি প্রযুক্তি বান্ধব মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ব্লকচেইন প্রযুক্তির সম্ভবনা রয়েছে, একে কাজে লাগাতে হবে। এসব প্রযুক্তিকে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে।”

নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও মানব সম্পদ তৈরিতে বেসরকারি খাতের সাথে কাজ করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “সরকারের যা যা করণীয় আছে তা করা যাবে। আমাদের এমন একজন প্রধানমন্ত্রী আছে, তার কাছে কোনো দাবি নিয়ে ফিরে আসতে হয় না, তার নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে যে আগ্রহ, তা সচারাচর চোখে পরে না।”

ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিয়ে ইজেনারেশন লিমিটেড কাজ করায় একে বাংলাদেশের জন্য গৌরবের বিষয় বলেও মনে করেন মোস্তাফা জব্বার।

গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে ইজেনারেশন গ্রুপের চেয়ারম্যান শামীম আহসান বলেন, ”গণমাধ্যমে ইন্টারনেট যেমন ভূমিকা রেখেছে, ব্যাংকিং খাতে ব্লকচেইনও তেমনি ভূমিকা রাখবে। স্বাস্থ্যসেবা, ব্যাংকিং, রিয়েল স্টেট এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিবর্তন নিয়ে এসেছে এই প্রযুক্তি।

“যেহেতু ক্রিপ্টোকারেন্সির সচেতনতা ছড়িয়ে যাচ্ছে এবং ছোট পরিসরে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটা মনে করা হয় যে, ব্লকচেইন প্রযুক্তি বিনিয়োগ শিল্পকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। বর্তমানে গতানুগতিক ও বিকেন্দ্রীভূত প্রতিষ্ঠানগুলো ইনিশিয়াল কয়েন অফারিং (আইসিও) দ্বারা ব্যবসায় বিনিয়োগের তহবিল সংগ্রহ করছে।“

বাংলাদেশে ব্লকচেইনের সম্ভাবনা নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইজেনারেশন গ্রুপের এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান এসএম আশরাফুল ইসলাম এবং সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তিবিদ, উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী এবং ইউপ্লাস ইনকর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী শওকত শামিম।

বৈঠকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার, এফবিসিসিআই সভাপতি শাফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বাংলাদেশের ব্যাংকের পরিচালক একেএম আফতাব উল ইসলাম ও  ড. জামাল উদ্দিনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্লকচেইন হল ডাটা সংরক্ষণ করার একটি নিরাপদ এবং উন্মুক্ত পদ্ধতি, যে পদ্ধতি অনুযায়ী ডাটাগুলো বিভিন্ন ব্লকে একটির পর একটি চেইন আকারে সংরক্ষণ করা হয় এবং এতে ডাটার মালিকানা সংরক্ষিত থাকে।

এই পদ্ধতিতে ডাটা সংরক্ষণ করলে কোনো একটি ব্লকের ডাটা পরিবর্তন করতে চাইলে সেই চেইনে থাকা প্রতিটি ব্লকে পরিবর্তন আনতে হবে, যা অসম্ভব। তাই এই পদ্ধতিতে ডাটা সংরক্ষণ করাটা বেশ নিরাপদ। 

`তথ্য-প্রযুক্তিতে মেয়েদের সুযোগ অনেক বেশি’

দুপুরে জনতা টাওয়ার সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন) আয়োজিত বাংলাদেশে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিতে মেয়েদের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন মন্ত্রী।

সেখানে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, “বাংলাদেশে মেয়েরা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিতে সচরাচর যায় না। তাদের জন্মের পর  থেকে মানসিকভাবে তৈরি করা হয়- তোমার জন্ম হয়েছে চাকরি না করার জন্য, তোমার জন্য হয়েছে স্বামীর সেবা ও রান্না ঘরে যাওয়ার জন্য। তার মধ্যে থেকেও মেয়েরা শিকল ভেঙে… তা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না।  

“আমরা বিশ্বাস করি, তথ্যপ্রযুক্তি এমন একটা জায়গা- যেখানে মেয়েদের কাজ করার সুযোগ অন্য যে খাতের চেয়ে বেশি। অফিসে গিয়ে বাসে ঝুলে কাজ করতে… এমন অবস্থা নয়, মেয়েরা ঘরে বসে কাজ করতে পারবে” বলেন মন্ত্রী।

বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের আর্ল জি স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের ব্যবসা প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক ড. সামিনা এম সাইফুদ্দিন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।