রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সুফল রপ্তানিতে

ধারাবাহিক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ও সাম্প্রতিক ডলারের দরবৃদ্ধির সুফল হিসেবে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Jan 2018, 01:55 PM
Updated : 4 Jan 2018, 01:59 PM

চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বাংলাদেশ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে এক হাজার ৭৯১ কোটি ৬০ লাখ (১৭.৯১ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে।

এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সামান্য আয় বেড়েছে। সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে সাড়ে ৮ শতাংশ।

জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনীতিতে অস্থিরতা দেখা না দিলে অর্থবছরের বাকি ছয় মাসেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন অর্থনীতির বিশ্লেষক ও রপ্তানিকারকরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত একবছরে টাকার বিপরীতে ডলারে দর বেড়েছে ৫ শতাংশের মতো; ছয়  মাসে বেড়েছে আড়াই শতাংশের বেশি।

সেপ্টেম্বর মাসে বড় ধসের পর অক্টোবর, নভেম্বর এবং ডিসেম্বর- তিন মাসেই বেড়েছে রপ্তানি আয়।

বৃহস্পতিবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ একহাজার ৭৯১ কোটি ৬০ লাখ ডলার আয় করেছে। এসময়ে লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল এক হাজার ৭৮৫ কোটি ডলার।

গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে একহাজার ৬৭২ কোটি ১০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। এ হিসাবে এই ছয় মাসে আয় বেড়েছে ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি।

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয় ২৯ শতাংশ, অগাস্টে রপ্তানি আয় বাড়ে ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ। এই দুই মাসে (জুলাই-অগাস্ট) রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধি হয় প্রায় ১৪ শতাংশ; লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৮ শতাংশ বেশি।

সেপ্টেম্বর শেষে সেই প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশে নেমে আসে, লক্ষ্যমাত্রাও হোঁচট খায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০১৭ সালটা বাংলাদেশের জন্য সবদিক দিয়েই ভালো গেছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত গেছে; কোন হানাহানি ছিল না। যার সুফল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ রেকর্ড জিডিপি প্রবৃদ্ধি পেয়েছে বাংলাদেশ।”

টাকার বিপরীতে ডলারের দর বৃদ্ধি রপ্তানি আয় বাড়াতে সহায়তা করছে উল্লেখ করে ফরাসউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে টাকা অতিমূল্যায়িত ছিল। এখন বেশ খানিকটা অবমূল্যায়ন হয়েছে। অনেক আগেই এটা হওয়া উচিত ছিল।

দেশের অন্যতম প্রধান তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইভিন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০১৭ সালের প্রথম দিকে রপ্তানি আয়ের গতি বেশ খারাপ ছিল। শেষের দিকে এসে বেড়েছে। তাতে ৭/৮ শতাংশের মতো হবে হয়তো।

২০১৮ সালের শেষে জাতীয় নির্বাচন সামনে ঘিরে পোশাকের ক্রেতারা সতর্ক অবস্থান নিয়েছে বলে মনে করেন রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক এই সভাপতি।

“ইলেকশনকে কেন্দ্র করে ফের রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয় কি না- তা নিয়ে তারা শংকার মধ্যে আছেন,” বলেন পারভেজ।

বিজিএমইএ সহ-সভাপতি ফারুক হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিরাপত্তা, ডিজিটালাইজেশনসহ পোশাক কারখানাগুলোর পরিবেশ উন্নয়নে আমরা নানা পদক্ষেপ নিয়েছি; প্রচুর ইনভেস্ট করেছি। এতে বায়ারদের আস্থা বেড়েছে। তারই ফল পাওয়া যাচ্ছে এখন।

ফাইল ছবি

“কোরবানির ঈদে আট-দশ দিন অনেকগুলো পোশাক কারখানা বন্ধ থাকায় সেপ্টেম্বরে রপ্তানি কমেছিল। এছাড়া অন্য মাসগুলোতে রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে।”

২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে একহাজার ৪৭৭ কোটি ২৭ লাখ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি।

এর মধ্যে নিটওয়্যার খাতের পণ্য রপ্তানিতে ৭৫৯ কোটি ৫২ লাখ ডলার এবং ওভেন পোশাক রপ্তানিতে ৭১৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার আয় হয়েছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৮২ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে। এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

এই ছয় মাসে নিট খাতে রপ্তানি বেড়েছে ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর ওভেনে বেড়েছে ৪ দশমিক ০৪ শতাংশ।

অন্যান্য খাতের মধ্যে এই ছয় মাসে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৪৮শতাংশ। কৃষি পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ২০ শতাংশ। ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ২১ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন হাজার ৭৫০ কোটি (৩৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন) ডলার।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানি থেকে তিন হাজার ৪৬৫ কোটি ৫৯ লাখ (৩৪ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন) ডলার আয় করে, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেশি।