সাফল্য নতুন বছরেও ধরে রাখতে চায় বিমান

এ বছর ছোটখাটো কিছু ঘটনা ছাড়া মোটামুটি ভালোই কেটেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সময়। বিশেষ করে আগের দুই বছরের মতো এবছরও মুনাফার ধারায় ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত এই সংস্থা।

গোলাম মুজতবা ধ্রুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Dec 2017, 11:18 AM
Updated : 31 Dec 2017, 11:29 AM

নতুন বছরেও মুনাফার ধারা ধরে রাখার ব্যাপারে আশার কথা শুনিয়েছেন এর কর্মকর্তারা, পাশাপাশি বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রেক্ষাপটে টিকেটের মূল্য বাড়ানোসহ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও সামলাতে হতে পারে বলে মনে করেন তারা।

গত ২৫ অক্টোবর নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পরপরই বিমানের একটি উড়োজাহাজের চাকা খুলে পড়ার ঘটনা ঘটে। তবে উড়োজাহাজটি ৬৬ জন যাত্রীকে নিয়ে নিরাপদেই ঢাকায় পৌঁছায়।

একবছর আগে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের ক্রুটির মামলায় আসামিদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয় গত ৭ ডিসেম্বর।

ওই ঘটনায় দায়ের করা বিমানের মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অন্তর্ঘাতমূলক কার্যক্রমের অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে সবার অব্যাহতির আবেদন করে পুলিশ।

বছরের শেষ দিকে এসে ইজিপ্ট এয়ার থেকে লিজে আনা দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ ফেরত পাঠানোর খবর আসে। কয়েকশ কোটি টাকা গচ্চা দেওয়ার পর চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ফেরত পাঠানো হচ্ছে উড়োজাহাজ দুটি।

এছাড়া শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগুন লাগা, বিমান নিয়ে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে বৈমানিক গ্রেপ্তার, হাজীদের ভোগান্তি নিয়ে আলোচনাও ছিল।

মুনাফায় ধারাবাহিকতা

আগের দুই বছরের মতো বিদায়ী বছরে টানা তৃতীয়বারের মতো লাভের মুখ দেখে বিমান। যদিও গত অর্থবছর তাদের নিট মুনাফার পরিমাণ আগের চেয়ে কমেছে।

প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী উড়োজাহাজে ত্রুটির ঘটনায় বিমানের এই কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়, চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল সবাইকে

বিমানের জনসংযোগ বিভাগের জিএম শাকিল মেরাজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিদায়ী বছর বিমানের জন্য অত্যন্ত সাফল্যের একটি বছর ছিল।

“২০১৬-১৭ অর্থবছরে কর শোধ করে বিমানের নিট মুনাফা হয়েছে ৪৭ কোটি টাকা। আগের অর্থবছর এর পরিমাণ ছিল ২৩৫ কোটি টাকা; ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ৩২৪ কোটি টাকা।”

নতুন বছরেও বিমান মুনাফা অর্জনের এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায় বলে জানান তিনি।

নতুন দিগন্তে ডানা মেলবে বিমান

শাকিল মেরাজ বলেন, “২০১৮ সাল ঘিরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের স্টেশন ও রুটের সংখ্যা বাড়ানো হবে। আমরা একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি ২৫ মার্চের মধ্যে চীনের অন্যতম বাণিজ্যিক নগরী গুয়াংজুতে ফ্লাইট শুরু করব। এরপর কলম্বো ও মালেতে বিমানের ডানা বিস্তৃত করব। পাশাপাশি মদিনায় ফ্লাইট চালু নিয়ে মার্কেট স্টাডি করেছি।”

সৌদি আরবে বসবাসকারী ২৫ লাখ বাঙালির জন্য বর্তমানে জেদ্দা, দাম্মাম, রিয়াদে বিমানের ফ্লাইট চলছে।

আসছে চারটি ড্রিম লাইনার

নতুন বছরে বিমানের বহরে যুক্ত হচ্ছে স্টেট অব দ্য আর্ট টেকনোলজির বোয়িং ৭৮৭-৮ মডেলের চারটি  ড্রিম লাইনার এয়ারক্রাফট।

এসব এয়ারক্রাফটের ককপিট হবে পেপারলেস। গ্রাউন্ড টু এয়ার সব সময় এটি আইটি এনাবলিং সার্ভিসের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। যাত্রীরা বিশ্বমানের সেবার পাশাপাশি ৪৩ হাজার ফুট উঁচুতে নিরবচ্ছিন্ন ওয়াইফাই সুবিধা এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কথা বলতে পারবেন। এছাড়াও বিশ্বের খ্যাতনামা নয়টি টেলিভিশন চ্যানেল দেখার সুযোগও পাবেন যাত্রীরা। থাকবে উড়ন্ত অবস্থায় থ্রিডি অ্যাকটিভেটেড ম্যাপ।

ড্রিম লাইনারগুলোতে বিজনেস ক্লাসে ২৪টি ও ইকোনমি ক্লাসে ২৪৭টি আসন রয়েছে। টানা ১৬ ঘণ্টা দূরপাল্লায় চলতে পারবে এয়ারক্রাফটগুলো। বিজনেস ক্লাসের প্রতিটি আসন হবে একটি বিছানা, যা বিমানে প্রথম।

“বিমানটি ২০ ভাগ ফুয়েল ইকোনমি হওয়ার কারণে আশা করছি আগামী বছর মুনাফাও বাড়বে,” বলেন শাকিল মেরাজ।

বিদায়ী বছরের মূল্যায়ন, নতুন বছরে চাওয়া-পাওয়া, চ্যালেঞ্জ- সবকিছু নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মো. ইনামুল বারী।

তিনি বলেন, “আগামী বছর মুনাফা অর্জনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।  আগামী বছর অনেকগুলো চ্যালেঞ্জও রয়েছে।

বিমান নিয়ে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন বৈমানিক সাব্বির এমামসহ চারজন

“আগামী বছর নতুন এয়ারক্রাফট ৭৮৭-৮ আসছে। এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ছে। এয়ারক্রাফট অপারেশনের একটা বড় অংশ তেলের দাম। গত ২/৩ মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ২০ শতাংশ বেড়েছে। আমরা এখনো তেলের দাম অ্যাডজাস্ট করতে পারিনি।

“আগামী বছরও আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে বেশি দামে তেল কিনতে হলে আন্তর্জাতিক ও আভ্যন্তরীণ দুই ধরনের টিকিটের দামই বাড়তে পারে। এটা মোকাবেলা করাটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হবে।”

বাংলাদেশ থেকে কার্গো পরিবহনে যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা এবছর উঠে যাওয়ার ব্যাপারে সরকার আশা করলেও তা হয়নি।

ইনামুল বারী বলেন, “সবার প্রত্যাশা ছিল এই বছরই নিষেধাজ্ঞা ওঠে যাবে। এটি ওঠে গেলে বিমান আরো বেশি মুনাফা অর্জন করতে পারত। এটা গত বছর মুনাফার ওপরও যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। এটা উঠে গেলে মুনাফার পাশাপাশি সুনামও আরো বাড়ত।”

তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম বেড়েছে। বিমানের সব কিছু ডলারে পে করতে হয়। এজন্য গত ছয় মাসে একশ কোটি টাকা কোনো কারণ ছাড়াই খরচ করতে হয়েছে। এগুলোই আগামী বছরের চ্যালেঞ্জ। সঠিক পরিকল্পনা করে এগুতে না পারলে বিমান লসেও যেতে পারে।”

গত বছর বিমানের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান বলেন, “ছোট দুইটা চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রথমত বিমান সঠিক সময়ে আসবে ও গন্তব্যে পৌঁছাবে। প্রথমদিকে ভালো মতো চললেও নভেম্বরের শেষ ও ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তবে প্রত্যাশার ৮০ ভাগ পূরণ হয়েছে বলা যায়। 

“গত বছর আরেকটি চ্যালেঞ্জ ছিল যাত্রীদের লাগেজ সময় মতো পাওয়া।  আমরা এখন সমস্যাটা অনেক কমিয়ে এনেছি।”

যাত্রীদের শতভাগ চাহিদা পূরণে অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার বলেও মত দেন তিনি।