পেঁয়াজের ঝাঁজ আরও বেড়েছে

ঢাকার কাঁচাবাজারে নতুন পেঁয়াজের দেখা মিললেও তার প্রভাব পড়েনি নিত্যপ্রয়োজনীয় এই দ্রব্যের দামে, সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকার মতো বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের দাম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2017, 02:57 PM
Updated : 4 Jan 2018, 11:01 AM

তবে আমদানি করা মোটা পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন।

দেশি পেঁয়াজ গত সপ্তাহে পাইকারিতে কেজিপ্রতি ১০৫ টাকা থাকলেও শুক্রবার ১২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। খুচরায় এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে লাগছে ১৩০ টাকা।

তবে এই সাত দিনে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকার মতো কমে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  

সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির হিসাবে, আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি এক সপ্তাহ আগে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা থাকলেও চলতি সপ্তাহে প্রতিকেজি ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর দেশি পেঁয়াজ ১১০ টাকা থেকে ২০ টাকা বেড়ে ১৩০ টাকায় পৌঁছেছে।

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই বাজারে নতুন শাক সবজির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল পেঁয়াজের কলি। শুক্রবার মিরপুর-১ নম্বর কাঁচাবাজারে কয়েকজনকে নতুন পেঁয়াজও বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এসব পেঁয়াজ দেখে আয়েশা খাতুন নামের একজন প্রাইমারি স্কুলশিক্ষক বলেন, গত সপ্তাহে অপরিপক্ক পেঁয়াজসহ কালি দেখেই মনে হয়েছিল- কিছুদিনের মধ্যে বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসবে।  নতুন পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।

আয়েশা খাতুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নতুন পেঁয়াজের সমস্যা হচ্ছে এতে ঝাঁঝ কম থাকে। যতটানা মসলা হিসাবে কাজ দেয়, তার চেয়ে বেশি কাজে লাগে সবজি হিসাবে। তবে পেঁয়াজের অধিক মূল্য কমিয়ে আনতে নতুন পেঁয়াজ ভূমিকা রাখবে।”

এদিন মিরপুর বাজারে পাইকারিতে দেশি পেঁয়াজের পাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি হয় ৬০০ টাকা, আর আমদানি করা পেঁয়াজের পাল্লার দাম রাখা হয় ৩৬০ টাকা।

কালিসহ পেঁয়াজ; বাজারে এসেছে নতুন পেঁয়াজও

পেঁয়াজ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে মিরপুর বাজারের মুদি দোকানি আবুল বাশার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দোকানিরা অসহায়। আগে পেঁয়াজ বিক্রির জন্য যতটাকা বিনিয়োগ করা প্রয়োজন হত এখন তার দ্বিগুণ বিনিয়োগ করছি, কিন্তু লাভের হার তো আগের মতোই। এখন হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে গেলে তো বেশি দামে কেনা পেঁয়াজ কম দামেই ছাড়তে হবে।”

গত বছর মাঠ থেকে পেঁয়াজ তোলার সময়ে আকস্মিক বৃষ্টিতে মাঠেই অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়। এরপর বন্যায় আড়তে পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ায় পণ্যটির দাম বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশের পেঁয়াজ আমদানির অন্যতম লক্ষ্যস্থল ভারতেও একই কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে।

এদিন মোটা দানার চীনা রসুন প্রতিকেজি ৭৫ টাকায় পাওয়া যায়, যদিও বছরের অধিকাংশ সময় রসুনের দাম পেঁয়াজের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি থাকে।

এছাড়া বাজারে শীতকালীন শাকসবজি বাড়লেও গত সপ্তাহের তুলনায় দাম তেমন কমেনি। হাতেগোনা কয়েকটি সবজির দাম কমেছে।

টমেটোর কেজি গত সপ্তাহে ১০০ টাকায় বিক্রি হলেও শুক্রবার তা ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়। ১২০ টাকা দরের কাঁচামরিচ এদিন ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় পাওয়া যায়। বাজারে ফুল কপি, বাঁধা কপি, শিম, গাজর, করলা, বরবটি, পেঁপেঁ, লাউ, মিষ্টি কুমড়া গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে।

ফুল কপি ও বাঁধা কপি প্রতিটি ২০ থেকে ২৫ টাকায়, শিম প্রতিকেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়, দেশি গাজর ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, বরবটি ৪০ টাকায় কেজি বিক্রি হয়। লাউ পাওয়া যায় ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়।

মিরপুরে বাজার করতে আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল মতিনের মতে, বাজারে প্রচুর শীতকালীন শাক-সবজি এলেও দাম আশানুরূপ কমেনি। অন্য সব জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণেই শাক-সবজির দাম কমছে না বলে মনে করছেন তিনি। তবে কয়েকটি সবজির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কমেছে বলে তিনি স্বীকার করেন।

“মরিচ, টমেটো, গাজর, বেগুনের দাম কিছুটা কমেছে। কিন্তু গাজরের দাম শীতকালে আরও কম থাকে। গ্রামে সবজি চাষের সঙ্গে যুক্ত আছি বলে বলতে পারছি,” বলেন মতিন।

বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৪৮০ টাকা, আর ব্রয়লার মুরগির কেজি ১২০ থেকে ১২৫ টাকার মধ্যে রয়েছে। তবে গত সপ্তাহের মাত্র ৭৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে এক ডজন ফার্মের মুরগির ডিম। মাছের দামও গত সপ্তাহের তুলনায় অপরিবর্তিত রয়েছে।

এই বাজারে বেঙ্গল রাইস এজেন্সির ব্যবস্থাপক তুষার বলেন, বেশ কিছু দিন ধরে চালের বাজার চড়া রয়েছে। তবে গত এক সপ্তাহে নতুন করে দাম বাড়েনি।

পাইকারি বাজারে নতুন আমন ধানের চাল (স্বর্না) প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ২১৫০ টাকায় আর ইন্ডিয়ান মোটা চাল দুই হাজার ২০ টাকায়, মিনিকেট ২৭০০ টাকা থেকে ২৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বস্তা ৩১০০ টাকা থেকে মানভেদে আরও অধিক মূল্যে নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে।