আমানতকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে যা যা করা প্রয়োজন, তাও করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানান বেসরকারি ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়া পারভেজ।
যাত্রা শুরুর চার বছরেই ধুকতে থাকা এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ রোববার ঢেলে সাজানো হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায়।
ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ফরাসত আলী পদত্যাগ করার পর ওই দায়িত্ব নেন পারভেজ।
তিনি বলেন, “আমরা ব্যাংকটিকে ঢেলে সাজাতে চাই। শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চাই। ইমেজ ফিরিয়ে আনতে চাই। মোট কথা গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে ব্যাংকটির ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনাই হবে আমাদের প্রধান কাজ।”
নতুন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়েছিলেন। গভর্নর দেশে না থাকায় তারা তিন ডেপুটি গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এ প্রসঙ্গে পারভেজ বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকই আমাদের ব্যাংকটিকে ঢেলে সাজাতে বলেছিল। সে মোতাবেকই আমরা কাজ করেছি। সেই বিষয়টিই আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিত করতে গিয়েছিলাম।
“তিন ডেপুটি গভর্নর পজিটিভ’ মনোভাব দেখিয়েছেন। আমাদের পরিবর্তনে খুশি হয়েছেন। সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।”
তবে এনআরবি ব্যাংকের জন্য আলাদা নীতিমালা না থাকায় সমস্যার কথা বলেন পারভেজ।
“ট্রাস্ট ব্যাংকের জন্য আলাদা নীতিমালা আছে। কিন্তু এনআরবি ব্যাংকের জন্য গতানুগতিক নীতিমালা। অর্থ্যাৎ অন্য বেসরকারি ব্যাংকের জন্য যে পলিসি, আমরা প্রবাসীরা বিদেশ থেকে টাকা এনে বিনিয়োগ করে যে ব্যাংক গড়ে তুলেছি, সেটার পলিসিও এক। এটা ভাবতে হবে। এনআরবি ব্যাংকের জন্য আলাদা কিছু থাকতে হবে। তা না হলে কেন প্রবাসীরা এগিয়ে আসবে?”
এ বিষয়গুলো বাংলাদেশ ব্যাংককে বিবেচনা করতে অনুরোধ করেন পারভেজ।
পারভেজ তমাল দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ায় অবস্থান করছেন। সেখানে তিনি ব্যবসা করেন। তিনি রাশিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি।
২০১৩ সালের এপ্রিলে এনআরবিসি ব্যাংক যখন যাত্রা শুরু করে মূল উদ্যোক্তা ছিলেন ফরাসত আলী। তিনি সে সময় নিউ ইয়র্ক আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
ফরাসত আলীর নেতৃত্বেই বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা মিলে প্রতিষ্ঠা করেন এই ব্যাংকটি। শুরু থেকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন ফরাসত আলী। আর উদ্যোক্তা পরিচালক ছিলেন তমাল পারভেজ।
ব্যাংকটি নিয়ে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এনআরবিসির বোর্ড সভায় অনুপস্থিত পরিচালকদের স্বাক্ষর জাল করে উপস্থিতি দেখিয়ে পর্ষদ সভার কার্যবিররণী করা হয়েছে। নিয়ম ভেঙে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যানের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছে।
ব্যাংকটি গঠনের সময় মূলধন আনায় অনিয়ম, অনিবাসীদের পরিবর্তে বেনামে বাংলাদেশে বসবাসকারী ব্যক্তি কর্তৃক ব্যাংকের শেয়ার কেনা, বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ প্রদান এবং ব্যাংক হতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বের করে দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টির সাথে পর্ষদ সদস্য ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সম্পৃক্ততার কথা আসে প্রতিবেদনে।
পারভেজ বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে যেসব সমস্যা ধরা পড়েছে, তার বেশিরভাগই আমরা (পরিচালনা পর্ষদের অন্য সদস্যরা) জানতাম না। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তায় সব সমাধান করা হবে।”
“একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আমি জানি, জনগণের আমানত ছাড়া একটি ব্যাংক কখনই পরিচালিত হতে পারে না। সেই আমানতের জন্য তাদের আস্থা অর্জন করতে হবে। প্রথমে সেই কাজটিই আমরা করব,” বলেন তিনি।