এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদত্যাগ

যাত্রা শুরুর চার বছরেই ফারমার্স ব্যাংকের মতো ধুকতে থাকা এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে পরিচালনা পর্ষদও ঢেলে সাজানো হল।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Dec 2017, 03:28 PM
Updated : 10 Dec 2017, 03:57 PM

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার পর পদত্যাগ করেছেন ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ফরাসত আলী; পদ ছেড়েছেন অন্য সব কমিটির চেয়ারম্যানও।

নতুন চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদেও পরিবর্তন আনা হয়েছে।

রোববারের এই পরিবর্তনে নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন তমাল এস এম পারভেজ।

তিনি শীর্ষ পদে পরিবর্তনের কথা নিশ্চিত করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যাংকের ভাবমূর্তি রক্ষায় এ পরিবর্তন এসেছে। আমরা ব্যাংকটিকে ভালো করতে চাই। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতা ছাড়া এটা সম্ভব নয়।”

নতুন চেয়ারম্যান তমাল এস এম পারভেজ (বাঁয়ে) ও এমডি কাজী মো. তালহা

ভাইস চেয়ারম্যান তৌফিক রহমান চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনজুরুল ইসলাম, নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান নুরুন নবী ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুনসেফ আলীকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এমডি দেওয়ান মুজিবর রহমানকে তিন মাসের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এ পদে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ডিএমডি কাজী মো. তালহাকে।

আইনি জটিলতার কারণে এমডিকে অপসারণ না করে তিন মাসের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান নতুন চেয়ারম্যান পারভেজ।

গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি এই ব্যাংকটির এমডি মুজিবরকে অপসারণ করার পর তিনি আদালতে গিয়েছিলেন, তাতে হাই কোর্টে তার অপসারণের আদেশ স্থগিত করে।

তার কয়েক দিনের মাথায় ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে পরিচালনা পর্ষদের জরুরি সভায় মুজিবরকে ছুটিতে পাঠানোসহ অন্যসব পরিবর্তন হয়।

সভায় পদত্যাগী পর্ষদ ও নতুন পর্ষদের বেশির ভাগ সদস্য উপস্থিত ছিলেন বলে পারভেজ জানান।

এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ধুকছে যাত্রা শুরুর চার বছরেই

এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের মতোই ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করেছিল ফারমার্স ব্যাংক; ঋণ কেলেঙ্কারিতে ধুকতে থাকার মধ্যে সম্প্রতি ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মহীউদ্দীন খান আলমগীর পদত্যাগ করেন।

ফারমার্স ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক নিয়ে সম্প্রতি সংসদীয় কমিটিতে অর্থ মন্ত্রণালয় একটি প্রতিবেদন দিয়েছিল।

তার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছিল, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ফারমার্স ব্যাংক পরিচালনায় অনিয়ম ও দুর্নীতি সম্পর্কে অধিকতর তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করে ব্যাংকগুলোকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে গ্রাহকদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এনআরবিসির বোর্ড সভায় অনুপস্থিত পরিচালকদের স্বাক্ষর জাল করে উপস্থিতি দেখিয়ে পর্ষদ সভার কার্যবিররণী করা হয়েছে। নিয়ম ভেঙে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যানের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছে।

ব্যাংকটি গঠনের সময় মূলধন আনায় অনিয়ম, অনিবাসীদের পরিবর্তে বেনামে বাংলাদেশে বসবাসকারী ব্যক্তি কর্তৃক ব্যাংকের শেয়ার কেনা, বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ প্রদান এবং ব্যাংক হতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বের করে দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টির সাথে পর্ষদ সদস্য ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সম্পৃক্ততার কথা আসে প্রতিবেদনে।

পদত্যাগী চেয়ারম্যান ফরাসত আলী

প্রতিবেদনে বলা হয়, কোম্পানি আইনের বিধান এবং ব্যাংকের আর্টিক্যালস অব অ্যসোসিয়েশনের সংশ্লিষ্ট ধারা লঙ্ঘন করে ব্যাংকের একজন পরিচালকের অনুপস্থিতিতে তার শেয়ার হস্তান্তরের বিষয়ে পর্ষদ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এছাড়া নিয়ম না মেনে ৬ জন পরিচালকের শেয়ার বাজেয়াপ্তকরণ ও ৩ জন পরিচালককে অপসারণ করেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকটির শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ ডিসেম্বর ২০১৬ প্রান্তিকে ছিল প্রায় ১৯ কোটি ৩০ কোটি টাকা। কিন্তু জুন ২০১৭ প্রান্তিকে শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ ১৭২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা থেকে বেড়ে ১৯১ কোটি ৬৯ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। যা মোট ঋণের ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

নতুন স্থাপিত ব্যাংকগুলোর মধ্যে শ্রেণীকৃত ঋণের হারের বিবেচনায় এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের অবস্থান দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ফারমার্স ব্যাংক রয়েছে প্রথম অবস্থানে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে ৭০১ কোটি টাকা ঋণে গুরুতর অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে আসার পর গত বছর এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

চলতি বছরের ২০ মার্চ ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও এমডির কাছে পাঠানো পৃথক নোটিসে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, আমানতকারীদের স্বার্থে ও জনস্বার্থে এনআরবিসি ব্যাংক চালাতে ব্যর্থ হয়েছে ফরাছত আলীর নেতৃত্বাধীন পরিচালনা পর্ষদ। আর এমডি ব্যর্থ হয়েছেন ব্যাংকটিতে যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে। এমনকি তারা গুরুতর প্রতারণা ও জালিয়াতি করেছেন, যা ফৌজদারি আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয়।