ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড: ‘অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে’ দিনবদল

তাদের কেউ শিক্ষার্থী, কেউ পেশাজীবী, কেউবা ছিলেন ঋণগ্রস্ত, তবে সবাই চেয়েছিলেন অর্থ উপার্জনের জন্য প্রথাগত পেশার বাইরে কিছু করতে; ‘অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং’ বদলে দিয়েছে তাদের জীবন।

রিফাত রহমান নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2017, 10:49 AM
Updated : 9 Dec 2017, 11:57 AM

সেই ঋণগ্রস্ত বা শিক্ষার্থী-পেশাজীবীদের অনেকেই এখন মাসে আয় করছেন দুই থেকে নয় হাজার ডলার; কারো কারো বছরে আয় ছাড়িয়েছে এক লাখ ডলার।

শনিবার তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উৎসব ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের শেষ দিন ‘অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের’ মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে।

‘ডিজিটাল মার্কেটিং ফর ফিউচার’ শীর্ষক সেশনে নিজেদের সফলতার গল্প শোনালেন এমন উদ্যোক্তা তরুণরা।

সেশনে ‘অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং’ সম্পর্কে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার রফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হল- কমিশনের বিনিময়ে অ্যাফিলিয়েশনের সুযোগ দিচ্ছে এমন অনলাইন মার্কেট প্লেসের, যেমন অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম, ক্লিক ব্যাংক, সিপিএ এম্পায়ার, শেয়ার এ সেল, কমিশন জাংশন ইত্যাদির প্রমোশন করে বিভিন্ন পণ্য বিক্রির সুযোগ করে দেওয়া।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় ব্যক্তিগত কম্পিউটার পর্যন্ত ছিল না রফিকুলের; অথচ বর্তমানে তার বার্ষিক আয় এক লাখ ডলার।

রফিকুল বলেন, “২০১৬ সালের শুরুতে এই ব্যবসা সম্পর্কে জানতে পারি ও শেখা শুরু করি। সেই বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস থেকে এই ব্যবসায় পুরোদমে জড়িয়ে পড়ি। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত, এই এক বছরে আমার আয় প্রায় এক লাখ ডলার। ভবিষ্যতেও এই ব্যবসাতেই থাকতে চাই।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর শেষ করে বেসরকারি ব্যাংকে কাজ করছিলেন শামসুল আনাম ইমন। কর্মনিষ্ঠার গুণে চার বছরে তিনটি পদোন্নতিও পেয়েছিলেন, কিন্তু ২০১০ সালে শেয়ারে বাজারে প্রায় ৪০ লাখ টাকা হারিয়ে পথে বসেন তিনি।

ইমন বলেন, “দেনাদাররা টাকার জন্য নানাভাবে হেনস্তা করা শুরু করে। আমার মাসিক আয় থেকে দেনা শোধ করে দুই সন্তানের সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল আমার। সেই সময় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে জানতে পারি।

“২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আমি প্রায় সাড়ে চারশ প্রজেক্টে কাজ করেছি; ২০১৫ সালে সব দেনা আমি পরিশোধ করে চাকরি ছেড়ে দেই। এখন আমি একজন ফুল টাইম অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার।”

তরুণদের এই ব্যবসায় আসতে আহ্বান জানান ইমন।

“এ ব্যবসায় নেমেই সফলতা পাওয়া যাবে না। আপনার থাকতে হবে শেখার প্রবল ইচ্ছা, ধৈর্য্য, আর হতে হবে সময়ানুবর্তী,” বলেন চার বছর ধরে এই ব্যবসায় জড়িত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম পলাশ।

অনলাইনে প্রবন্ধ লেখক হিসেবে কাজ শুরু করা পলাশ বলেন, “শুরুতে আমি যার অধীনে প্রবন্ধ লিখতাম, তিনি মাসে আমাকে আড়াই হাজার টাকা দিতেন। অথচ এখন আমার লেখককে মাসে আড়াই লাখ টাকা পারিশ্রমিক দেই আমি।”