আলোচিত ফারমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম শামীমকে অপসারণের নোটিস দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
Published : 27 Nov 2017, 03:48 PM
ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৬ ধারা অনুযায়ী তাকে অপসারণে রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চিঠি গেছে সাবেক মন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের মালিকানাধীন ব্যাংকটির কর্তৃপক্ষের কাছে।
এদিকে এমডি শামীম বলেছেন, অপসারণ নয়, ব্যাংকের লিকুইডিটি ক্রাইসিসসহ কয়েকটি বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তিনি সোমবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যাংক কোম্পানি আইন ৯১ ধারা অনুযায়ী জাস্ট ব্যাখ্যা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাখ্যা তো চাইতেই পারে…। আগেও একবার চেয়েছিল, গতকাল আবার চেয়েছে, স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা চেয়েছে।”
শামীম বলেন, “ব্যাংকের এসএলআর এবং তারল্য সঙ্কট যাচ্ছে… বাংলাদেশ ব্যাংক তার ব্যাখ্য চেয়েছে। ম্যানেজমেন্ট ফেইল করে যাচ্ছে, তারল্য সঙ্কট কমছে না, তারও ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।”
এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু গ্রাহক এবং তাদের ঋণের বিষয়ে জানতে চেয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে ওই চিঠিতে দেখা যায়, আগামী সাত দিনের মধ্যে শামীমকে এমডি পদ থেকে কেন অপসারণ করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে দুটি কারণের কথা বলা হয়েছে।
প্রথমটি হল, ব্যাংকটিতে তারল্য ব্যবস্থাপনায় এমডি ব্যর্থ হয়েছেন। এ কারণে নগদ জমা বা সিআরআরের এবং সংবিধিবদ্ধ জমা বা এসএলআরের অর্থ রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।
দ্বিতীয়টি হল, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা না মেনে ব্যাংকটি ঋণ বিতরণ করেই চলছে।
ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৬ (১) ধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, কোনো ব্যাংক-কোম্পানির চেয়ারম্যান বা কোনো পরিচালক বা [ প্রধান নির্বাহী কর্তৃক] , কোনো ব্যাংক-কোম্পানি বা উহার [আমানতকারীদের জন্য ক্ষতিকর] কার্যকলাপ রোধকল্পে বা জনস্বার্থে ওই ব্যাংক-কোম্পানীর যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, উক্ত চেয়ারম্যান, পরিচালক বা প্রধান নির্বাহীকে, যে নামেই অভিহিত হউক না কেন, অপসারণ করা প্রয়োজন, তাহা হইলে বাংলাদেশ ব্যাংক, কারণ লিপিবদ্ধ করিয়া, আদেশের মাধ্যমে, উক্ত চেয়ারম্যান, পরিচালক, প্রধান নির্বাহীকে তাহার পদ হইতে অপসারণ করিতে পারিবে৷
কাউকে এভাবে অপসারণের আগে তাকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা আছে আইনে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নিয়মের বেশি ঋণ দিয়েছে ফারমার্স ব্যাংক। এসব ঋণ এখন আদায়ও হচ্ছে না। এতে ব্যাংকটিতে বড় ধরনের তারল্য সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে, সাধারণ গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করতে গিয়ে খুব বেশি সাড়া পাচ্ছে না ব্যাংকটি। উল্টো আমানত তুলে নেওয়ার চাপ বাড়ছে দিন দিন।
এ পরিস্থিতিতে ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করা নতুন এ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে।
গত সেপ্টেম্বর শেষে ফারমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৩৭৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ, বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশই খেলাপি।
শীর্ষ ১০ খেলাপি গ্রাহকের কাছেই ব্যাংকটির পাওনা ১৩৪ কোটি টাকা। মার্চ-জুন সময়ে ব্যাংকটি খেলাপি গ্রাহকদের থেকে মাত্র সাত কোটি টাকা আদায় করেছে।
তারল্য সঙ্কটে পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৩০০ কোটি টাকা আমানত চেয়ে চিঠি দিয়ে কোনো সাড়া পায়নি ব্যাংকটি।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও ফারমার্স ব্যাংকের অব্যবস্থাপনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মহীউদ্দীন খান আলমগীর সংসদের সরকারি হিসাব কমিটির সভাপতি।
এমডি শামীম ফারমার্স ব্যাংকে যোগ দেওয়ার আগে ছিলেন মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে, তার আগে অগ্রণী ব্যাংকে ছিলেন তিনি।