সোনা চোরাচালানে রাজস্ব ক্ষতি হাজার কোটি টাকা: টিআইবি

সোনা চোরাচালানে বছরে প্রায় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতির তথ্য উঠেছে ট্রান্সফারেন্সি ইন্টার‌ন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণায়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2017, 02:30 PM
Updated : 26 Nov 2017, 03:14 PM

সোমবার টিআইবি প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, “বৈধ পথে আমদানি না হওয়ায় স্বর্ণখাতে সরকারের ন্যূনতম রাজস্ব ক্ষতি বাৎসরিক ৪৮৭-৯৭৪ কোটি টাকা।”

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে বার্ষিক ১৮-৩৬ মেট্রিক টন সোনার চাহিদা থাকার পরও এই চাহিদার ‘সিংহভাগ’ চোরাচালানের মাধ্যমে পূরণ হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন টিআইবির গবেষক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান।

গত চার অর্থবছরে বিমানবন্দরে ১ হাজার ৬৭৪ কেজি সোনা আটকের তথ্যও দেওয়া হয় প্রতিবেদনে।

তিনি বলেন, “উচ্চ শুল্ক, অনুমোদনের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াগত জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা এবং ফ্রেইট ও ইন্স্যুরেন্সের অপ্রাপ্যতা ইত্যাদি কারণে স্বর্ণব্যবসায়ীরা বৈধভাবে স্বর্ণ আমদানি না করে চোরাচালানকৃত স্বর্ণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।”

টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক রফিকুল হাসান ‘বাংলাদেশে স্বর্ণখাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা: একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে পটভূমি বিশ্লেষণ’ শীর্ষক গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করেন।

স্বর্ণ খাতের আইনি কাঠামো পর্যালোচনাসহ বিদ্যমান বহুমুখী সমস্যা ও চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত ও এই খাতকে একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থার অধীনে আনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সুপারিশমালা প্রণয়ণের উদ্দেশ্যে এ গবেষণাটি করা হয়।

গবেষণায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, দুর্নীতি দমন কমিশন, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় বলে রফিকুল জানান।

এছাড়া প্রাসঙ্গিক আইন, বিধিমালা, আদেশ, নির্দেশনা ও দলিলাদিসহ বই, প্রবন্ধ, গবেষণা ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন পর্যালোচিত হয়েছে উল্লেখ করেন রফিকুল হাসান।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “চোরাচালানি নির্ভর স্বর্ণব্যবসায় সংশ্লিষ্ট আইন-সৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাংশ, স্থলবন্দর ও বিমানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ এবং এদের সাথে ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারিদের যোগসাজশের মাধ্যমে অবৈধতা এবং অনিয়ম অব্যাহত রয়েছে।

(ফাইল ছবি)

“শুধু তাই নয়, এই চক্রটির একাংশ এই দেশে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা বা বিস্তৃত আইন প্রণয়ণের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনেক সময় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।”

গবেষণা প্রতিবেদনে স্বর্ণখাত সংশ্লিষ্ট সকল পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন, সকল স্বর্ণ ও স্বর্ণালংকার ব্যবসায়ীকে তাদের প্রতিষ্ঠানের মজুদ স্বর্ণ ও স্বর্ণালংকার কর প্রদান সাপেক্ষে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিবন্ধনের সুযোগ প্রদান এবং সকল ব্যবসায়ী কর্তৃক সরকার নির্ধারিত লাইসেন্স গ্রহণ ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নবায়ন বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়।

ব্যাগেজ রুলের মাধ্যমে আনা স্বর্ণালংকারের বাণিজ্যিক ব্যবহার নিষিদ্ধ ও শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে নির্ধারিত সরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে স্বর্ণ আমদানির সুপারিশও করেছে টিআইবি।