এখনও গতবারের দ্বিগুণ পেঁয়াজের দর

কয়েক মাসে অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পর পেঁয়াজের দর কিছুটা কমলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটি এখনও গতবছরের চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে।

ফয়সাল আতিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Nov 2017, 03:19 PM
Updated : 19 Nov 2017, 02:03 PM

শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারসহ একাধিক কাঁচাবাজার ঘুরে দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা টিসিবির হিসাবে, ঠিক এক বছর আগে মওসুমের শেষ পর্যায়ে এসে দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। অর্থাৎ গতবছরের তুলনায় এবার মওসুমের শেষ পর্যায়ে দ্বিগুণ দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে।

মওসুম শেষে সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা দাবি করলেও তাতে একমত নন ভোক্তা অধিকারকর্মীরা।

পেঁয়াজের দাম নিয়ে বাজারে এক ধরনের কারসাজি চলছে বলে মনে করছেন ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মওসুমতো প্রতি বছরই শেষ হয়, কিন্তু দাম তো এমন বাড়ে না। দেশে এই পণ্যটির ঘাটতিও নেই। তাহলে বুঝতে হবে সাপ্লাই চেইনে বড় কোনো চক্র রয়েছে যারা কাজটি করছে।

“সরকার ব্যবসায়ীদের প্রতি অনেক সহনশীল। সেই কারণেই তারা সুযোগ নিচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য দেওয়া প্রয়োজন।”

চালের দাম বাড়ার সময় সংবাদমাধ্যম ও সরকার যেভাবে সক্রিয় হয়েছিল পেঁয়াজের ক্ষেত্রে তেমনটি দেখা যাচ্ছে না বলে ক্ষোভ ঝাড়লেন মিরপুরের চাল ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার।

তিনি বলেন, “মওসুম শেষ হলেও সরবরাহে তো ঘাটতি নেই। তাহলে দাম কেন বাড়ছে?”

গত তিন মাসে পেঁয়াজের দর বাড়তে বাড়তে প্রায় একশোর ঘরে চলে গিয়েছিল। গত মাসেও খুঁচরার বাজারে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে পেঁয়াজ। 

একবছর আগে মওসুম শেষে আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ২৫ টাকা, আর দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। ফলে এই পণ্যটির দাম শতভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

নতুন মওসুমের পেঁয়াজ বাজারে আসতে আরও এক মাস অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

তবে মিরপুর-১ নম্বর সেকশনের পাইকারি দোকান ‘মা বাণিজ্য বিতানের’ কর্মী জীবন মিয়ার দাবি, দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে খুচরা দোকানগুলোতে এক কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্তও বিক্রি হতে দেখা গেছে।

শীতের মওসুমি প্রভাব কিছুটা পড়েছে শাক-সবজির বাজারে; অধিকাংশ সবজির দামই কমে এসেছে।

মিরপুর-১ নম্বর সেকশনের বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া শিম বিক্রি হচ্ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। পাকা টমেটোর দামও বেশ কিছুটা কমে ৮০ টাকায় নেমেছে।

এছাড়া মুলা ২৫ থেকে ৩০ টাকা, করলা ৪০ টাকা, ঝিঙে ৩০ টাকা, পটল ৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ একশ থেকে ১২০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা ও দেশি গাজর ৬০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি করছিলেন খুচরা বিক্রেতারা।

মা বাণিজ্য বিতানের কর্মী জীবন বলেন, গত সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন এলাকার মোকামগুলোতে আলুর দাম কমেছে।

‘এক হাজার টাকা করে কেনা বস্তা (৮০ কেজি) এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ৮০০ টাকায়।’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাতালে আমন মওসুমের নতুন ধানের উপস্থিতি ও ভারত থেকে ‘নির্বিঘ্নে’ চাল আমদানির ইতিবাচক প্রভাব চালের বাজারে পড়তে শুরু করেছে।

মিরপুরে নিউ বিল্লাল রাইস এজেন্সির মালিক ওয়াহিদুজ্জামান জানান, ভারতীয় চালের প্রভাবে অনেকটাই ‘কোণঠাসা’ হয়েছেন দেশীয় মিল মালিকরা। ফলে নিজ থেকেই তারা একটু একটু করে চালের দাম কমাচ্ছেন।

“এতদিন আমরা অগ্রিম টাকা জমা দিয়েও চাল পেতাম দেরিতে। এখন মিলগুলো থেকে ফোন করা হচ্ছে চাল আনার জন্য। বিক্রি কমে গেলে আমরা চাল মজুদ করে কী করব?”

ভারতের চাল আসার কারণেই চালের দাম কমছে দাবি করে এই ব্যবসায়ী বলেন, এতদিন সরকার বহু বক্তব্য দিয়েও দাম কমাতে পারেনি। কারণ মিল মালিকরা জানো সরকারের মজুদে চাল নেই।

এদিন পাইকারিতে মিনিকেট কেজিপ্রতি ৫৪ থেকে ৫৭ টাকা, বিআর ২৮ চাল ৪৪ থেকে ৪৭ টাকা, মোটা চাল ৩৯ টাকা এবং নাজিরশাইল ৫৭ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হয়।

এই বাজারের আরেক পাইকারি দোকান বেঙ্গল রাইস এজেন্সির মালিক আবুল কাশেম জানান, চালের দাম কমতির দিকে থাকায় তিনি সতর্কতার সঙ্গে নতুন চাল কিনছেন। বাজারে এখন ১৯০০ টাকা থেকে ২৮০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন মানের চালের বস্তা (৫০ কেজি) পাওয়া যাচ্ছে।

পুরান ঢাকার মৌলভী বাজারে ডালের পাইকারি প্রতিষ্ঠান রাজ্জাক বিতানের মালিক চুন্নু হাজী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, দেশে এখন মসুর ডালের প্রচুর মজুদ। বিপরীতে বিশ্ববাজারেও মসুর ডালের দাম অনেক কম। সব মিলিয়ে ডালের ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে। দাম অনেক কমে গেছে।

টিসিবির হিসাবে, ঠিক এক বছর আগে মসুর ডালের সর্বনিম্ন দাম ছিল কেজিতে ৯০ টাকা। বছরের ব্যবধানে এই পণ্যটির দাম ৩৩ শতাংশ কমেছে। আর এক মাসের ব্যবধানে দাম কমেছে কেজিতে ৫ টাকা।