অনলাইন জালিয়াতির অধিকাংশ ব্যাংকারদের যোগসাজশে: বিআইবিএম

অনলাইন ব্যাংকিংয়ে যত জালিয়াতির ঘটনা ঘটে, তার ৬৭ শতাংশে ব্যাংকাররা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Nov 2017, 04:25 PM
Updated : 16 Nov 2017, 04:47 PM

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, আইটি বিশেষজ্ঞ কিংবা আইটি ফার্মের যোগসাজশে ব্যাংকাররা এ জালিয়াতি করে থাকে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম মিলনায়তনে ‘অলটারনেটিভ ডেলিভারি চ্যানেল : অপারচুনিটিজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জ অব দ্য নিউ ব্যাংকিং ইনভারমেন্ট’ শীর্ষক কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদনটি তোলা হয়।

গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান আলমের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি দল।  

ব্যাংক খাতে জালিয়াতির ৫০টি ঘটনা বিশ্লেষণ করে তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, “৪০ শতাংশ জালিয়াতি ব্যাংক কর্মকর্তা এবং আইটি বিশেষজ্ঞরা ঘটায়। ১৮ শতাংশ জালিয়াতিতে শুধু ব্যাংক কর্মকর্তারা জড়িত। এছাড়া ৯ শতাংশ জালিয়াতির সঙ্গে ব্যাংকার এবং আইটি প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশ রয়েছে।”

মোবাইল ব্যাংকিং, এটিএম সেবায় বিভিন্ন ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ব্যাংক খাতে ঝুঁকি তৈরি করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এতে বলা হয়, প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং জালিয়াতির ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে এটিএম এবং প্লাস্টিক কার্ডের মাধ্যমে। প্রায় ৪৩ শতাংশ ঘটনা প্রযুক্তিভিত্তিক। জালিয়াতির ঘটনার মধ্যে ২৫ শতাংশ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঘটছে। অনলাইন চেক ক্লিয়ারিং (এসপিএস) এবং ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রন্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে ঘটছে ১৫ শতাংশ, ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে ১২ শতাংশ, ব্যাংকিং সফটঅয়্যায়ের মাধ্যমে ৩ শতাংশ এবং সুইফটের মাধ্যমে ২ শতাংশ জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট

কর্মশালার প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, বিকল্প ব্যাংকিং ব্যবস্থা খুবই ভালো। কিন্তু এর অপব্যবহার হলে আর্থিক খাতে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে।

ব্যাংকারদের প্রযুক্তির অপব্যবহার সম্পর্কে সতর্ক থাকারা পরামর্শ দেন তিনি।

অনলাইনভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থার সুবিধার দিক তুলে ধরে ডেপুটি গভর্নর বলেন, “এটা চালু হওয়ায় ব্যাংকগুলোর পরিচালন ব্যয় অনেকাংশে কমে গেছে।

“মাত্র ২ লাখ জনবল দিয়ে এতগুলো ব্যাংক কয়েক হাজার শাখা পরিচালনা করছে। অনলাইন ব্যাংকিং চালু না হলে এতগুলো শাখা পরিচালনায় ১০ লাখেরও বেশি জনবল প্রয়োজন হত।”

কর্মশালায় বিআইবিএমের সুপারনিউমারারির অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী ব্যাংক কর্মকর্তাদের তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষতা বাড়ানোর উপর জোর দেন।

ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী বলেন, “আগামী দিনে প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রস্তুতি না থাকলে ভয়াবহ সমস্যার মুখে পড়বে ব্যাংকিং খাত।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারির অধ্যাপক ইয়াছিন আলী বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডির কারণে ব্যাংক খাতে জালিয়াতি অনেক কমে এসেছে।

কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী।