রপ্তানি বাড়াতে সম্ভাবনাময় খাতে নগদ সহায়তার পরামর্শ

রপ্তানিখাতে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে পোশাকখাতের মতো অন্যান্য উদীয়মান শিল্পে সরকারি নগদ সহায়তা (ক্যাশ ইনসেনটিভ) দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতির অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Nov 2017, 07:45 PM
Updated : 9 Nov 2017, 07:45 PM

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট (বিইআই) আয়োজিত রপ্তানি উন্নীতকরণ বিষয়ক কর্মশালায় তিনি বলেন, “কোনো একটি খাত উপরে উঠতে শুরু করলেই যে কেবল তাদের জন্য সহায়তার হাত বাড়াতে হবে তা নয়, বরং যেসব খাত এখনও দৃশ্যমান নয় কিন্তু সম্ভাবনা রয়েছে সেদিকেও নজর দিতে হবে।” 

ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, “ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের দিকে নজর দিতে হবে। কারণ রপ্তানি বাড়ানোর মতো ন্যাচারল রিসোর্স বাংলাদেশের জমি ও শিল্পের কাঁচামাল তৈরির মতো প্রকৃতিক সম্পদের অভাব রয়েছে।

“পোশাক খাত আমদানি করা কাঁচামালের ওপর ভর করে এগিয়েছে। পরিকল্পিতভাবে আগালে অন্যান্য খাতের ফিনিসিং ও ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে ভালো করা সম্ভব। এসব খাতে সরকারের নগদ সহায়তা (ক্যাশ ইনসেনটিভ) থাকা প্রয়োজন। তাহলে সরকারের ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার দিকে এগিয়ে যাওয়া যাবে।”

সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষক (সম্মানীয় ফেলো) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “শুধু বিদেশ থেকে আমদানি আর রপ্তানি নয়; ভ্যালু চেইনে আমাদের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে কি না সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।”

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম বলেন, “২০২১ সালে যখন আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হব, সেই সময় দেশের জনসংখ্যা বাড়বে এবং মাথাপিছু আয়ও বাড়তে হবে। মধ্যম আয়ের দেশে যেতে হলে আরও ২০ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।

“রপ্তানিখাতের উন্নতি করতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। সরকার ইতোমধ্যেই একটি স্কিল ডেভেলপমেন্ট স্কিম হাতে নিয়েছে। অচিরেই তা বাস্তাবায়ন হবে বলে আশা রাখি।”

এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম বলেন, শিল্পের বিকাশের অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের একটি হচ্ছে শ্রমিক দক্ষতা। অনেক দেশ প্রযুক্তির সংযোগে শ্রম নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসেছে। বাংলাদেশেও এক সময় স্যুয়েটার ফ্যাক্টরিতে অনেক শ্রমিক ছিল। এখন অনেক কাজ যন্ত্রে হয়।

রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য অবকাঠামোকে অন্যতম বাধা বলে চিহ্নিত করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।

তিনি বলেন, “দেশে এতো আমদানি-রপ্তানি শিল্প থাকা স্বত্ত্বেও চট্টগ্রাম বন্দর কীভাবে মাত্র চারটি ক্রেন দিয়ে চলে? বিমানবন্দরে একটি লাগেজ পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হয়। এসব সমস্যার সমাধান না হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।”

ইপিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট বিজয় ভট্টাচার্য বলেন, শিল্পায়নের মূল শক্তি সরকারি সহায়তা। তাই পরিকল্পিতভাবে সরকারি সহায়তা বাড়াতে হবে।

বেসরকারি আইএফআইসি ব্যাংকের সহায়তায় রপ্তানি বিষয়ক দুই বছরব্যাপী প্রকল্পের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিইআইয়ের প্রকল্প পরিচালক অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কাসহ বাংলাদেশের সমসাময়িক অনেক দেশ প্রাকৃতিক সম্পদের কারণে অর্থনীতিতে কিছুটা এগিয়ে গেছে। তবে বাংলাদেশের সাফল্যের অনেক নজির আছে।

“স্বাধীনতার পর অনেকে ভেবেছিল, এই দেশ হবে দরিদ্র দেশের একটি উদাহরণ। অথচ স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ৩১৮ মিলিয়ন রপ্তানি এখন বেড়ে ৩৮ দশমিক ৫ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে।”

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের দুই বছর মেয়াদি একটি প্রকল্পের অংশ হিসাবে স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে এই কর্মশালা। ভবিষ্যতে এই ধরনের আরও কর্মশালা হবে।