রপ্তানিতে মন্দা, বিপাকে বাগেরহাটের চিংড়ি চাষিরা

আমদানিকারক দেশগুলোয় ‘অর্থনৈতিক মন্দার কারণে’ বাগেরহাটে সাদা সোনাখ্যাত গলদা চিংড়ির দাম কেজিতে ৩০০ টাকার বেশি কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।

বাগেরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Sept 2017, 08:33 AM
Updated : 19 Sept 2017, 02:35 PM

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জিয়া হায়দার বলেন, এ জেলার প্রায় ৪৩ হাজার চাষি প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ করেন। দাম পড়ে যাওয়া সবাই বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছেন।

“যুক্তরাজ্যসহ আমদানিকারক দেশগুলোয় অর্থনৈতিক মন্দার কারণে চিংড়ির দাম পড়ে গেছে বলে আমাদের দেশের রপ্তানিকারকরা দাবি করছেন।”

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণত ভাদ্র ও আশ্বিন মাসের এ সময়টিতে চাষিরা নতুন করে ঘের প্রস্তুত করার জন্য সব চিংড়ি ধরে বাজারে বিক্রি করে দেন। কিন্তু মন্দার কারণে অনেকেই চিংড়ি ধরা বন্ধ রেখেছেন।

জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সুমন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ চিংড়ি চাষের সঙ্গে জড়িত।

“বাজারে গলদা চিংড়ির দাম কেজিতে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা দাম কমে যাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছে। এর আগে অতিবৃষ্টিতে প্রায় ১১ হাজার ঘের ভেসে ও বাগদা চিংড়িতে ভাইরাস সংক্রমণেও তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন।”

অনেক চাষিই ব্যাংক, এনজিও ও মহাজনদের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়ে চিংড়ি চাষ করেন জানিয়ে তিনি বলেন, সব মিলিয়ে চিংড়ি চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

রপ্তানির জন্য চিংড়িগুলোকে বিভিন্ন গ্রেডে ভাগ করা হয়।

পঞ্চম গ্রেডের বর্তমান দর ৭৫০ টাকা জানিয়ে মহিতুল বলেন, মাস তিনেক আগে এটা ছিল ১১০০ টাকা। ১০ গ্রেডের দাম ৯৫০ টাকা থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ৬৫০ টাকায়।

সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের শ্রীঘাট গ্রামের শেখ লিয়াকত আলীর পাঁচ বিঘা জমিতে চিংড়ির ঘের রয়েছে জানিয়ে হতাশার কথা বললেন।

“রেণুর দাম, খাবার ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে এ বছর আমার খরচ হয়েছে প্রায় দুই লাখ টাকা। বিক্রির মৌসুম শুরু হলেও এখনও ২০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করতে পারিনি। হঠাৎ বাজার পড়ে যাওয়ায় মাছ ধরা বন্ধ রেখেছি। লাভ তো দূরে, এ বছর আসল উঠা নিয়েই শঙ্কায় আছি।”

অনেকেই এ রকম দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন।

কচুয়া উপজেলার বিলকুল গ্রামের আব্দুল বারেক পাইক বলেন, তিনি ১২ বিঘা জমিতে ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঝণ নিয়ে গলদা চাষ করেছেন।

“সব মিলিয়ে খরচ প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। মৌসুম শুরু হলেও দাম পড়ে যাওয়ায় মাছ ধরা বন্ধ রেখেছি। বাজার এ রকম থাকলে ঝণের টাকা কিভাবে শোধ করব আর সংসার কিভাবে চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি।”

তবে দাম আবার আগের জায়গায় ফিরবে বলে আশা করছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জিয়া হায়দার।

তিনি বলেন, “দাম খুব শিগগির আবার আগের জায়গায় ফিরবে বলে আশা করছি।

“বছরের এ সময়টায় চাষিরা ঘের প্রস্তুত করার জন্য সব চিংড়ি ধরে বিক্রি করে দেন। রপ্তানিকারকরা মাছের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার এ সুযোগটা অনেক সময় নিয়ে থাকে। বাজার পরিস্থিতি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”

বারাকপুর মৎস্য আড়ৎদার সমিতির সভাপতি জাকির হোসেন অভিযোগ করেন, “এজেন্টরা আমাদের যেভাবে বুঝান সেভাবেই চিংড়ির বাজারটা চলছে। দাম বাড়া-কমায় সরকারের মৎস্য বিভাগের তদারক না থাকায় তারা এ সুযোগ নিয়ে যাচ্ছে।”

চিংড়িশিল্প বাঁচিয়ে রাখতে সরকারকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান তিনি।