ব্যাংকাররা ইচ্ছে করেই ঋণখেলাপি বানায়: অর্থমন্ত্রী

ঋণ খেলাপ হওয়ার জন্য ব্যাংক কর্মকর্তাদের দায়ী করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, তারা ইচ্ছে করেই ঋণখেলাপি তৈরি করে।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 August 2017, 05:57 PM
Updated : 26 August 2017, 06:05 PM

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অবস্থা নিয়ে শনিবার এক কর্মশালায় তিনি বলেন, “ব্যাংকাররা ঋণ দেওয়ার পরের দিন থেকেই উদ্যোক্তাকে খেলাপি বাননোর চেষ্টা করে। উদ্যোক্তাকে কব্জায় (বাগে) আনতে ইচ্ছা করেই তাকে খেলাপি বানানো হয়। প্রকল্পে এমনভাবে ঋণ দেওয়া হয় যাতে সে কোনোভাবেই সফল হতে না পারে।”

ব্যাংকারদের উদ্দেশ্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আপনারা মনে কষ্ট পেতে পারেন, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে-এটাই সত্য।”

রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের অবস্থা পর্যালোচনা: চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপায়’ শীর্ষক এই কর্মশালারে আয়োজন করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

এতে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল এই ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের সমস্যা এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়।

এসময় বেসিক ব্যাংকে ‘লুটপাটের হোতা’ সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুকে অভিযুক্ত করতে না পারা সরকারের ব্যর্থতা বলে স্বীকার করেন অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, “বেসিক ব্যাংকের সাবেক এই চেয়ারম্যান ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা এমন লোকজনকে দিয়েছিল যাদের কোনো হদিস খুঁজে পাওয়া যায়নি। আজ পর্যন্ত দুদক বা আমরা (সরকার) কিছুই করতে পারিনি। সংসদীয় কমিটিতে তাকে বার বার ডাকা হলেও তিনি আসেননি। এটা আমাদের ব্যর্থতা।”

খেলাপি ঋণ ৭৮ হাজার কোটি টাকা

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান জানান, গত ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭৮ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৪০ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে মোট বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশ। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ২৭ শতাংশ।

শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপির কাছে বিপুল অংকের টাকা আটকে আছে জানিয়ে ইউনুসুর রহমান বলেন, জনতা ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের ৪৯ শতাংশই আটকে আছে ২০ জনের কাছে। রূপালী ব্যাংকের আরও বেশি, ৫১ শতাংশই শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছে। আর সোনালী ব্যাংকের ২০ শীর্ষ খেলাপির কাছে আছে ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ।

একে উদ্বেগজনক বলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব।

কর্মশালায় অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ সচিব হেদায়েতউল্লাহ আল মামুন, অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীরা বক্তব্য রাখেন।