মাগুরায় ‘২০ কোটি’ টাকার লিচু বিক্রির আশা

মাগুরা থেকে এ বছর অন্তত ২০ কোটি টাকার লিচু বিক্রির আশা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

মাগুরা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2017, 06:08 AM
Updated : 20 May 2017, 06:37 AM

ব্যবসায়ীদের মতে, দেশে যেসব আগাম জাতের লিচু পাওয়া যায় তার অধিকাংশই আসে মাগুরা সদরের কয়েকটি গ্রাম থেকে। এর মধ্যে হাজরাপুরের লিচু সবচেয়ে বিখ্যাত।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানান, সদরের তিন ইউনিয়নে ৫৮০ হেক্টর জমিতে প্রায় ২১০০ লিচুবাগান রয়েছে। এ বছর সেখান থেকে ২০ কোটির টাকার লিচু বিক্রি হতে পারে।

সরজমিনে হাজরাপুর, ইছাখাদা, বারোমাইল, সাঁইত্রিশ, আলমখালী এলাকায় মাগুরা-ঝিনাইদহ সড়কের দুপাশে দেখা গেছে শুধু লিচু আর লিচু।

বাগান থেকে ভেঙে আনা লিচু কার্টন ভরে রাখা হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর জন্য। গত এক সপ্তাহ ধরে এ এলাকা থেকে প্রতিদিন ১৫-২০ ট্রাক লিচু চালান হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে, জানালেন কৃষি কর্মকর্তা রুহুল আমিন।

হাজরাপুরের লিচু চাষী শরিফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, লিচু চাষে তার ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে।

“লিচুর টাকায় বাড়িঘর করেছি। বাজারে দোকানপাট করেছি। কয়েক বিঘা জমি কিনেছি।”

ওই এলাকার অধিকাংশ মানুষ লিচু চাষ করে ভাগ্য ফিরিয়েছে বলে সরজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে।

ইছাখাদা গ্রামের আব্দুল হালিম বলেন, ১৯৯৪ সালে প্রাথমিক পরীক্ষায় বৃত্তির টাকায় তিনি বাড়ির আঙিনায় মাত্র ১০টি লিচুগাছ লাগান।

“বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ায় আমার লিচুগাছ সম্প্রসারিত হয়ে এখন গাছের সংখ্যা দেড় শতাধিক। মোট বাগান তিনটি। এ থেকে প্রতিবছর কমপক্ষে দুই লাখ টাকার লিচু বিক্রি করি। এ বছর প্রায় একশ গাছের লিচু বিক্রি করেছি দেড় লাখ টাকায়।”

হাজরাপুর, হাজিপুর, রাঘবদাইড় ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের প্রত্যেক লিচু চাষীর সাফল্যের চিত্র এ রকমই। কেবল গল্পটা ভিন্ন।

হাজরাপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবু জাফর বলেন, তার আছে চারটি বাগন। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, পরিচিতজন, জেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মাঝে বিতরণ করেও তিনি তিন লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছেন।

তবে তার অভিযোগ, ঢাকায় নেওয়ার পথে লিচু চাষীরা বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন।

এই লিচুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে চাষী ছাড়াও অনেকের জীবন-জীবিকা।

ঢাকার বাদামতলী থেকে আসা ব্যাপারি মিজানুর রহমান বলেন, আকারে বড়, রসালো ও টক-মিষ্টির সমন্বয়ে মাগুরার হাজরাপুরি লিচুর স্বাদ অসাধারণ। অনান্য জায়গার চেয়ে কমপক্ষে ১৫ দিন আগে পাক ধরায় হাজরাপুরি লিচুর চাহিদা বেশি।

“মে মাসের শুরুতে সারাদেশে ভালোমানের যে আগাম লিচু পাওয়া যায় তার প্রায় পুরোটাই হাজরাপুরি। যদিও অনেক ব্যবসায়ী একে রাজশাহীর বলে বিক্রি করে থাকেন।”

মিজানুর রহমান হাজরাপুর থেকে এ বছর প্রায় ২০ লাখ টাকায় একাধিক লিচুর বাগান কিনেছেন বলে জানান।

“এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন এখান থেকে এক থেকে দুই ট্রাক লিচু ঢাকায় চালান করছি।”

একইভাবে স্থানীয় ব্যাপারি নূর নবী, রবিউল ইসলাম, আমজাদ হোসেন জানান, তারা প্রত্যেকেই অর্ধকোটি টাকার লিচুবাগান কিনেছেন। প্রদিন তারা এক-দুই ট্রাক লিচু ঢাকায় পাঠাচ্ছেন।

এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তিন ইউনিয়নে ৩০টি গ্রামে লিচু পাহারা, গাছ থেকে পাড়া, বাজারে পৌঁছানোসহ নানা কাজে হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

ইছাখাদা গ্রামের কৃষক ও সার-কীটনাশক বিক্রেতা সাইফুল কাজী বলেন, একসময় এ এলাকার কৃষক ধান-পাটসহ প্রচলিত ফসল চাষে অভ্যস্ত ছিল। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে তারা লিচু চাষ শুরু করেন। পরে তা হাজরাপুর, হাজিপুর, রাঘবদাইড় ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম ও পৌর এলাকাসহ আঠারখাদা ইউনিয়নেরও বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে।

স্থানীয় হাজরাপুরি লিচুর পাশাপাশি এখানকার কৃষকরা বোম্বাই, চায়না থ্রি ও মোজাফ্ফরি জাতের লিচু চাষ করেন বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা রুহুল আমিন।