সোনার দোকানে ধর্মঘ্ট ডেকে আবার প্রত্যাহার

আপন জুয়েলার্সে শুল্ক গোয়েন্দাদের অভিযানের প্রেক্ষাপটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ তুলে দেশজুড়ে অনির্দিষ্টকাল ধর্মঘট ডাকার তিন ঘণ্টার মধ্যে তা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন সোনার দোকান মালিকরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2017, 04:15 PM
Updated : 18 May 2017, 06:06 PM

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির এক বৈঠকে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হয়েছিল; তার তিন ঘণ্টার মধ্যে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খানের সঙ্গে বৈঠকের পর কর্মসূচি থেকে পিছু হটেন তারা।

রাজধানীর কাকরাইলে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরে বৈঠকের পর জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি গঙ্গা চরণ মালাকার রাত ১০টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দাবি পূরণের আশ্বাসে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন।

“আমাদের সমিতির নেতাদের সঙ্গে শুল্ক গোয়েন্দাদের বৈঠক হয়েছে। আমরা আমাদের যে সমস্ত দাবিতে ধর্মঘট ডেকেছিলাম, তা মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।”

হয়রানি বন্ধের পাশাপাশি ‘জুয়েলারি ব্যবসাবান্ধব আমদানি নীতিমালা’ প্রণয়নের দাবিও রয়েছে গহনার দোকান মালিকদের।

জুয়েলার্স সমিতির নেতারা ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফসিসিআইয়ের নতুন সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের সঙ্গেও বৈঠক করেন।

সফিউলকে নিয়েই শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরে বৈঠকে যান তারা। তিনিও দাবি পূরণে উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান মালাকার।

শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান বলেছেন, ফলপ্রসূ আলোচনার পর ধর্মঘট তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জুয়েলার্স সমিতির নেতারা।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সদস্য সংখ্যা এখন ৭০০ জনের মতো; এর বাইরে সারাদেশে হাজার দশেকের মতো গহনার দোকান রয়েছে।

আপন জুয়েলার্সে শুল্ক গোয়েন্দাদের অভিযানের মধ্যে রাজধানীর নিউ মার্কেটে আমিন জুয়েলার্সের একটি দোকানে কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেটের কর্মকর্তাদের অভিযানের পর ধর্মঘটের ঘোষণা আসে।

সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সিরাজুল ইসলামের মালিকানাধীন আমিন জুয়েলার্সে ওই অভিযান নিয়ে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হয়েছিল দাবি করে মইনুল খান বলেন, তা মিটে গেছে।

সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররম মার্কেটে বৈঠকের পর ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়ে সমিতির যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি এসেছিল, তাতে বলা হয়েছিল, “সভায় উপস্থিত সকলে সর্বসম্মতিক্রমে জুয়েলারি দোকানে হয়রানিমূলক অভিযান ও আমিন জুয়েলার্সে অভিযানের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।”

তবে কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেটের ঢাকা দক্ষিণের কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিউ মার্কেটে আমিন জুয়েলার্সে আমাদের অফিসাররা গিয়ে তাদের ভ্যাটের প্রয়োজনীয় কাগজ নিয়ে আমাদের অফিসে আসতে বলেছেন।

“এরপর তাদের কয়েকজন কর্মকর্তা কাগজ নিয়ে আমাদের কাকরাইলের অফিসে আসে। অফিসে বসে কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে কোনো ভুল পাইনি। এই ঘটনায় আমরা কাউকে হয়রানি করিনি বা কাউকে আটকও করিনি।”

জুয়েলার্স সমিতির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আপন জুয়েলার্সের কোনো নাম উল্লেখ করা হয়নি।

তবে ধর্ষণের মামলায় ছেলে আসামি হওয়ার পর বুধবার শুল্ক গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “ব্যক্তিগতভাবে আমার দোকান বন্ধ হলে সারাদেশে সবার দোকান বন্ধ করা উচিৎ।”

শুল্ক গোয়েন্দাদের অভিযানে সিলগালা আপন জুয়েলার্সের একটি শাখা

জুয়েলার্স সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক দিলদারের ছেলে সাফাত আহমেদ বর্তমানে গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ড শেষে কারাগারে  রয়েছেন।

গত ৬ মে সাফাতের বিরুদ্ধে মামলার পর তাদের ব্যবসায় অবৈধ বিষয় থাকার অভিযোগ ওঠার পর তার তদন্তে নামে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

অভিযানে আপন জুয়েলার্সের একটি বিক্রয় কেন্দ্র সিলগালা করে দেওয়ার পাশাপাশি ১৩ মণের মতো সোনা ও হীরা আটক করার পর দিলদারকে তলব করা হয়।

এই অভিযানকে হয়রানিমূলক দাবি করে তার প্রতিবাদও জানিয়েছিল জুয়েলার্স সমিতি। আপনসহ সব জুয়েলার্স বৈধভাবেই ব্যবসা করছে বলে দাবি করেন তারা।

তবে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান বলেন, আপন জুয়েলার্সে ‘ব্যাপক অনিয়ম, চোরাচালান এবং অবৈধ অর্থ সরবরাহের’ প্রমাণ তারা পেয়েছেন। অভিযানের সময় স্বর্ণালঙ্কার এবং হীরার বিপরীতে তারা যথেষ্ট কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।

আপন জুয়েলার্সের কোনো বিক্রয় কেন্দ্র বন্ধ করেননি জানিয়ে তিনি আরও বলেছিলেন, “পূর্ণাঙ্গ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় স্বর্ণালঙ্কার এবং হীরা আটক করার পর স্থানীয় দোকান মালিক সমিতি, জুয়েলার্স সমিতির প্রতিনিধির অনুরোধে এবং স্বাক্ষরে আপন জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।”

দেশে সোনা আমদানি বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার দিকটি তুলে ধরে বাণিজ্যিকভাবে আমদানির প্রক্রিয়া সহজ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠিও দিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর; পাশাপাশি আটক চোরাই সোনার নিলামের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বানও জানানো হয় চিঠিতে।