ব্যাংকটিতে সরকারি সমর্থনপুষ্ট দুই ব্যক্তির লড়াইয়ে জামায়াত সমর্থকদের শক্তি সংহত হতে পারে এবং তাতে সরকারের অনানুষ্ঠানিক উদ্যোগটি ভেস্তে যেতে পারে।
গত ১১ মে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজের একটি ফেইসবুক স্ট্যাটাস থেকে দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ হতে থাকে।
এর দুদিন পর ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান (ইভিপি) মাহবুব আলমকে অন্য বিভাগে বদলি করা হয়।
পাশাপাশি জনসংযোগ ও সিএসআর বিভাগের প্রধানকেও বদলি এবং ব্যাংকের জাকাত ফান্ডের ৪৫০ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর জাকাত তহবিলে দেওয়া, ইফতারের ১৩ কোটি টাকা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিতরণের সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা জানান পারভেজ।
তবে চারদিন পর বুধবার ইসলামী ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব সিদ্ধান্তের কথা অস্বীকার করা হয়।
এই প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার মতিঝিলে ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে সংবাদ সম্মেলনে এসে চেয়ারম্যান আরাস্তু খান বলেন, “ভাইস চেয়ারম্যান মিডিয়ায় বলেছেন, ইসলামী ব্যাংকের জাকাত ফান্ডের ৪৫০ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর জাকাত ফান্ডে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আসলে সেটি সত্য নয়। ইসলামী ব্যাংকের জাকাত ফান্ডে টাকাই আছে ২৭ কোটি টাকা।
“পত্রিকায় এটা প্রকাশিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে আমাকে ডাকা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার ৪০ মিনিট কথা হয়েছে…।”
জামায়াতে ইসলামীর বেশ কয়েকজন নেতার সংশ্লিষ্টতা থাকা ইসলামী ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে কয়েকটি পরিবর্তন হয় গত জানুয়ারিতে। সাবেক অতিরিক্ত সচিব আরাস্তু খান ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান হন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে আসেন নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ। সে সময় ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদেও পরিবর্তন আসে।
এরপর ব্যাংকটিকে স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রভাবমুক্ত করতে নতুন নেতৃত্ব বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিলেও সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন হয়নি বলে পারভেজের ভাষ্য। ব্যাংকটিতে জামায়াত সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় বলে ওই ফেইসবুক স্ট্যাটাসে অভিযোগ করেন তিনি।
এরপর বিশেষ নিরাপত্তায় ১৩ মে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপককে পরিচালনা পর্ষদের সভায় নেওয়া হয়। ওই সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো অস্বীকারের জন্য ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল হামিদ মিঞাকে দায়ী করছেন তিনি।
সেই হামিদ মিঞাকে পাশে বসিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আরাস্তু খান বলেন, “ভাইস চেয়ারম্যান তার নিজের ফেইসবুক স্ট্যাটাসে ইসলামী ব্যাংক ফের স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে বলে যে অভিযোগ করেছেন তার কোনো ভিত্তি নেই। তাকে পদত্যাগের জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে যে অভিযোগ তিনি করেছেন তাও ভিত্তিহীন।
“আহসানুল আলম পারভেজ চাইলে স্বেচ্ছায় পদ থেকে পদত্যাগ করতে পারেন। তার থাকা বা পদত্যাগ নিয়ে ব্যাংকের ভেতর থেকে কোনো চাপ নেই।”
এদিকে আহসানুল আলম পারভেজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করায় বৃহস্পতিবারের বৈঠকে যোগ দিতে পারেননি তিনি।