‘বোর্ডের সিদ্ধান্তের’ পরও প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে টাকা দেবে না ইসলামী ব্যাংক

ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে জাকাত ফান্ডের অর্থ ‘প্রধানমন্ত্রীর জাকাত তহবিলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও’ এখন তা অস্বীকার করছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 May 2017, 06:23 PM
Updated : 17 May 2017, 06:23 PM

ওই বোর্ড সভার পর ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্য কাজী শহীদুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন।

তবে এর চার দিন পর বুধবার ইসলামী ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

আহসানুল আলম পারভেজ বুধবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটি মহলের ইশারায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল হামিদ মিঞাও পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত মানছেন না।”

তাকে ফের ‘খুব ঝুঁকিপূর্ণ’ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে জানিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, তার উপর চাপ ও হুমকি বাড়ছে। নিরাপত্তার অভাবে বুধবার ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির (ইসি) সভায় যোগ দিতে পারেননি তিনি।

১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী জামায়তে ইসলামীর নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংকটিতে সরকারি উদ্যোগে হস্তক্ষেপের পর থেকে গত পাঁচ মাসে রাজনৈতিক দলটির সমর্থকদের সঙ্গে নতুন ব্যবস্থাপনার মধ্যে টানাপড়েন চলছিল।

গত ১১ মে ইসলামী ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যানের পদ ছাড়তে অধ্যাপক আহসানুল আলম পারভেজকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার পর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ১৩ মে পরিচালনা পর্ষদের সভায় যোগ দেন তিনি।

ওই সভা শেষে পারভেজ ও শহীদুল আলম জানান, পরিচালনা পর্ষদের সভায় মানব সম্পদ বিভাগের প্রধান (ইভিপি) মাহবুব আলমকে ওএসডি এবং জনসংযোগ এবং সিএসআর বিভাগের প্রধানকে বদলির সিদ্ধান্ত হয়।

এছাড়া এবার জাকাতের ৪৫০ কোটি টাকা ব্যাংকের উদ্যোগে সরাসরি বিতরণের পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রীর জাকাত তহবিলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি ইফতারের ১৩ কোটি টাকা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সারা দেশে বিতরণের সিদ্ধান্ত হয়।

ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

তাদের ওই বক্তব্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলেও কেউ কোনো প্রতিবাদ জানানি।

চার দিন পর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে সিদ্ধান্তগুলো অস্বীকার করার প্রতিক্রিয়ায় পারভেজ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডাহা মিথ্যা কথা বলছে ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট। চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের উপস্থিতিতে পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এখন তারা মিথ্যা বলে প্রেস রিলিজ পাঠিয়েছে।”

তিনি বলেন, ওই সভায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান জামায়াতে ইসলামীর রোকন মাহবুব আলমকে ওএসডি করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তাকে এখন রুরাল ডেভেলপমেন্ট স্ক্রিমে (আরডিএস) বদলি করা হয়েছে।

“এ সবই ব্যাংকটির ম্যানেজমেন্টের ষড়যন্ত্রের অংশ।”

বুধবার ইসলামী ব্যাংকের সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ সাইদুল হাসান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “গত ১৩ মে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভার বরাত দিয়ে ব্যাংকের জাকাত ফান্ড, শিক্ষাবৃত্তি, ইফতারের অর্থ ব্যয়, শীর্ষ নির্বাহীদের বদলি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত যেসব সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা বিভ্রান্তিকর।

“ব্যাংকের জাকাত ফান্ডের ৪৫০ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর জাকাত ফান্ডে প্রদানের কোনো সিদ্ধান্ত বোর্ড সভায় গৃহীত হয়নি। এছাড়া ব্যাংকের ১৯ কোটি টাকার শিক্ষাবৃত্তিপ্রাপ্ত সুবিধাভোগীদের বিষয়ে খতিয়ে দেখা এবং সিএসআর সুবিধাভোগীদের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।”

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “আসন্ন রমজানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্যাংকের ১৩ কোটি টাকার ইফতার বিতরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে মর্মে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তাও সঠিক নয়।”

এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষকরা বুধবার এক বিবৃতিতে তাদের বিভাগের শিক্ষক আহসানুল আলম পারভেজকে প্রাণনাশের হুমকির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

সরকারের কাছে পারভেজের জান-মালের নিরাপত্তা চেয়েছেন তার সহকর্মীরা।