মেঘনা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং শুরু

আনুষ্ঠানিকভাবে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করেছে মেঘনা ব্যাংক লিমিটেড।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2017, 06:11 PM
Updated : 20 March 2017, 06:11 PM

সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে ‘ট্যাপ এন পে’ নামে এই সেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।

ব্যাংকটির পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশে প্রথমবারের মত তারা এ সেবায় ব্যবহার করবে চতুর্থ প্রজন্মের প্রযুক্তি। এ কাজে তাদের প্রযুক্তিগত সহযোগী হিসাবে রয়েছে মোবিলিটি আই ট্যাপ পে বাংলাদেশ লিমিটেড।

‘ট্যাপ এন পে’ হচ্ছে একটি প্রিপেইড অ্যাকাউন্ট, যেখানে মোবাইল নম্বর হবে অ্যাকাউন্ট নম্বর। এএফসি কার্ডের মাধ্যমে পয়েন্ট অব সেল মেশিনের ওপর ট্যাপ করে টাকা লেনদেন ছাড়াই পেমেন্ট করা যাবে।

এনএফসি কার্ড ছাড়াও এনএফসি ব্রেসলেট, এনএফসি অ্যাপ সম্বলিত অ্যান্ড্রয়েড ফোন, ফিচার মোবাইল, এনএফসি ট্যাগড চাবির রিং, ওয়েব পোর্টাল সিস্টেমের মাধ্যমে ‘ট্যাপ এন পে’ সেবা গ্রহণ করা যাবে।

‘ট্যাপ এন পে’র সেবাগুলো মধ্যে রয়েছে, ক্যাশ ইন/ক্যাশ আউট, মোবাইল টপ আপ, টাকা ট্রান্সফার, বেতন/ভাতা প্রদান, বিল পেমেন্ট, ক্ষুদ্র ঋণ, ইন্সুরেন্স প্রিমিয়াম পেমেন্ট, টিকেট ক্রয়/বিক্রয়, শপিং, সরকারি কর প্রদান, সরকারি ভাতা/ভর্তুকি প্রদান, গিফট ভাউচার প্রভৃতি।

ব্যাংকটি বলছে, তারা এই সেবার জন্য সারা দেশে ডিলার ও এজেন্ট নিয়োগ করবে, যাদেরকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা হবে। 

‘ট্যাপ এন পে’র সেবা বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতকে বদলে দেবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তব্যে আশা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে অনেকগুলো ব্যাংক আছে। ৫৬টি ব্যাংক, এর মধ্যে ৩৯টি বেসরকারি। শাখা কিন্তু বেশি না। ৮ হাজারের কিছু বেশি হবে। এটা যথোপযুক্ত নয়। আরও ব্যাপকভাবে ব্যাংকিং বাড়াতে হবে।

“আমাদের দেশে মোবাইল সেবা অনেক উন্নত। কিন্তু সেই মোবাইল থাকা স্বত্ত্বেও মোবাইল ব্যাংকিং তেমন প্রসারিত হয়নি। এখন মাসে ২৫ হাজার কোটি টাকার মত লেনদেন হয়। এটা যথোপযুক্ত না।”

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অন্য অনেক ব্যাংকের অনাগ্রহের মধ্যে এই সেবা নিয়ে আসায় মন্ত্রী ব্যাংকে ধন্যবাদ জানান।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, “ছোটবেলায় মাটির ব্যাংকে ব্যাংকিং করেছি। বৈশাখের মেলা আসলে সেটা ভাঙতাম। পরে একটু বড় হয়ে পোস্ট অফিসে একটা অ্যাকাউন্ট করলাম। এটা কৈশোরের ব্যাংকিং। তখন সেখানে কিছু টাকা জমিয়ে ব্যাট বল কিনতাম। সবাই মিলে খেলতাম।

“এরপর রাজশাহী কলেজে পড়তে আসলাম। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হল। মা টাকা পাঠাতেন। সপ্তাহে সপ্তাহে টাকা তুলে খরচ করতাম। এখন মোবাইল ব্যাংকিং হয়েছে। তিন কোটি মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তার মানে আরও ৫-১০ কোটি মানুষকে মোবাইল ব্যাংকের আওতায় আনা যাবে।”

পলক বলেন, “হয়ত দেখব, সামাজিক মাধ্যম থেকেও ব্যাংকিং করতে পারছি। হয়ত টুইটার ব্যাংকিং, ফেইসবুক ব্যাংকিং দেখব।”

নতুন সেবার উদ্বোধন উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, “মোবাইল ব্যাংকিংয়ে আফ্রিকা ও এশিয়া অগ্রগামী। কেনিয়া, নাইজেরিয়া, তানজানিয়া, উগান্ডা, বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে।

‘২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং নীতিমালা করার পর এ পর্যন্ত ২৮টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লাইলেন্স পেয়েছে। এ যাবৎ ২০টি ব্যাংক এই সেবা চালু করতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে ডাচ বাংলা ব্যাংক ২০১১ সালের ৩১ মার্চ সর্ব প্রথম মোবাইল ব্যাংকিং চালু করে।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান এইচএন আশিকুর রহমান বলেন, মেঘনা ব্যাংকের ‘ট্যাপ এন পে সার্ভিস’ বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রচলিত গতানুগতিক পদ্ধতি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

তিনি বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জাতির অর্থনৈতিক উন্নয়নে ‘দূর হবে নিকট’, ‘অনাত্মীয় হবে আত্মীয়’, সাধারণ মানুষের স্বপ্ন ও অগ্রসরের আকাঙ্ক্ষা হবে বাস্তব।

মোবিলিটি আই ট্যাপ পে বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কামরুল আহসান বলেন, “ব্যাংকের একটি শাখায় যা করা যায়, এই সেবার পয়েন্টেও সব কিছু করা যাবে। একটি মিনি ব্যাংক স্টেটমেন্টও পাওয়া যাবে।

“সাধারণ মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা পাঠাতে হলে নম্বর দিতে হয়। সেটা এখানে দিতে হবে না। এখানে টাকা কোনো এজেন্টের নম্বর থেকে পাঠানো হবে না। ব্যক্তির নিজের ফোন নম্বর ব্যবহার হবে। ফলে অবৈধ টাকা, কালো টাকা, জঙ্গিবাদের টাকা ধরা যাবে।”

তিনি বলেন, “এই কার্ড দিয়ে ক্রয়-বিক্রয়ে রিয়েল টাইম ভ্যাট পরিশোধ হবে। এখানে ভ্যাট চলে যাবে এনবিআরের অ্যাকাউন্টে। দাম যাবে বিক্রেতার অ্যাকাউন্টে।

“বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতিদিন ৭৬০ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। বর্তমানে দেশের প্রায় ৪৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ব্যাংকিং সেবার বাইরে। তাদেরকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার জন্যই মেঘনা ব্যাংকের ট্যাপ এন পের আগমন।

কামরুল আহসান বলেন, “কেবল ব্যাংকিং সেবার বাইরের মানুষকে সেবার আওতায় এনেই মেঘনা ব্যাংক থেমে যাবে না। লক্ষ এজেন্ট তৈরির মাধ্যমে সৃষ্টি হবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা তৈরির সূতিকাগার, যাদের অধিকাংশ হবে নারীরা। আমাদের নতুন দর্শন হবে দ্বৈত উপার্জন।”

মোবিলিটি আই ট্যাপ পে বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. জহির উদ্দিন বলেন, ২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নীতিমালা প্রণয়ন করে বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস প্রদানে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির দুয়ার খুলে দিয়েছে। এতে করে জনসেবার পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের বক্তব্য রাখেন, মোবিলিটি ওয়ান মালয়েশিয়া প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দাতো হুসিয়ান বিন এ রহমান, মোবিলিটি আই ট্যাপ পে বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক কেইকো তানিদা ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব) এমএ লতিফ খান।