দুই বছরে শ্রেষ্ঠ হতে হবে সোনালী ব্যাংককে: অর্থমন্ত্রী

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংককে আগামী দুই বছরের মধ্যে ‘শ্রেষ্ঠ’ ব্যাংক হওয়ার লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Feb 2017, 12:42 PM
Updated : 5 Feb 2017, 12:42 PM

রোববার ব্যাংকটির বার্ষিক সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন, “সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন সূচক দেখে আশান্বিত হওয়ার সুযোগ নেই। মূলধন ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। খেলাপি ঋণ এক চর্তুথাংশের বেশি। লোকসানি শাখাও এক চর্তুথাংশের মতো। এসব সূচক খুব বেশি আশার সঞ্চার করে না।

“আমি টার্গেট দিচ্ছি, আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশের শ্রেষ্ঠ ব্যাংক হতে হবে। এটা মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ। সোনালী ব্যাংকের এটা নেওয়া উচিত।”

বৃহত্তম সরকারি ব্যাংক হিসেবে সোনালী ব্যাংকের গ্রহণযোগ্যতা উঁচু মানের দাবি করে মুহিত বলেন, “এই গ্রহণযোগ্যতা যেকোনো ব্যাংকের জন্য কৃতিত্ব ও মূলধন। এই মূলধনের উপর ভিত্তি করেই এগিয়ে যেতে হবে।

“মূলধন ঘাটতি পূরণে সরকার সাহায্য করবে। খেলাপি ঋণ কমানোর দায়িত্বও তাদের। যদিও সরকারি হুকুমে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা ঋণ দিয়েছে।”

শুধু সোনালী নয়, অন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অবস্থাও ভালো নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ শতাংশ খেলাপি। কিন্তু সোনালী ব্যাংকে খেলাপি ঋণের হার ২৬ শতাংশের মতো।

“এটা উদ্বেজনক, কমাতে হবে।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার কোটি টাকার মতো। অবলোপনকৃত ঋণসহ দেশে এখন প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এই সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আশরাফুল মকবুল, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান এবং সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বক্তব্য রাখেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “সোনালী ব্যাংক কিছুদিন আগেও সরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংক ছিলো। বর্তমানে এই অবস্থান থেকে একটু পেছনে পড়ে গেছে। সাময়িক এই অবস্থা থেকে অতিসত্বর তারা আগের অবস্থান দখল করবেন বলে আমার বিশ্বাস।”

মুহিত বলেন, “ব্যাংকিং খাত আমাদের দেশে বেশ প্রবৃদ্ধ। আমি মনে করি, ৪৮টি ব্যাংক অনেক বেশি নয়। যখনই চাপ পড়বে স্বাভাবিকভাবেই মার্জার (একীভূত)… ইত্যাদি হতে থাকবে। সরকার এজন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। এজন্য আইন ও দেউলিয়া আইন প্রয়োজন রয়েছে; যেগুলো আমাদের নেই। আশা করছি, আগামী দু’বছরের মধ্যে প্রস্তুত থাকবো।”

অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমাদের ব্যাংকিং সেক্টর বেশ উন্নত, এর হয়তো দুর্বলতাও রয়েছে। অনেকেই বলেন, একটা ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা দরকার। আমি এতোদিন পর্যন্ত সেই ধারণা নেইনি।

“তবে আইন-কানুন রীতিনীতি ইত্যাদি দেখার জন্য একটা ব্যাংকিং কমিশন দরকার। আমাদের সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা হবে। যাতে নতুন সরকার এটি বাস্তবায়ন করতে পারে।”
মুহিত বলেন, বাংলাদেশের জন্মলগ্নের পর সামান্য কিছু মানুষ ব্যাংকিং সেবা পেতেন। আজ এই সেবা ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ পাচ্ছে। এদিক দিয়ে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি।

১৬ কোটি মানুষের দেশে ব্যাংকের সাড়ে নয় হাজার শাখা নিয়ে গর্ববোধ করতে পারি। ব্যাংকিং সার্ভিস জনগণের কাতারে নিয়ে চলে গেছি।”