সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিলের ‘সিদ্ধান্ত’

সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিলের ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নিয়ে এর গ্রাহকদের অপারেটর পরিবর্তনের জন্য আরও সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2016, 11:20 AM
Updated : 16 August 2016, 04:13 PM

এই মোবাইল ফোন অপারেটরের কার্যক্রম বন্ধ করা হবে কি হবে না- সে সিদ্ধান্ত সরকারই নেবে জানিয়ে তিনি বলেছেন, বুধবার ‘সরকারের কাছে ফাইল পাঠানো হচ্ছে’।

বকেয়া না দেওয়ায় সিটিসেলের কার্যক্রম যে কোনো সময় বন্ধ করে দেবেন জানিয়ে এর গ্রাহকদের ১৬ অগাস্টের মধ্যে বিকল্প সেবা নিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ।

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার ওই সিদ্ধান্তে দৃশ্যত অসন্তুষ্ট প্রতিমন্ত্রী তারানা মঙ্গলবার সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এক বৈঠক করেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সচিবসহ বিভাগের কর্মকর্তারা ছাড়াও বিটিআরসি চেয়ারম‌্যানও ছিলেন।

এরপর প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিলের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

“গ্রাহকরা বিকল্প সেবা গ্রহণের জন্য ১৬ আগস্ট পর্যন্ত সময় পেলেও ১৭ আগস্ট থেকে আরও সাত দিন বর্ধিত করা হল।”

সিটিসেল বন্ধের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে বুধবার সরকারের কাছে সংশ্লিষ্ট ‘ফাইল’ পাঠানো হবে বলেও তিনি জানান।

বাংলাদেশের প্রথম মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেলের গ্রাহক সংখ‌্যা কমতে কমতে এখন দুই লাখের চেয়ে কম।

বকেয়া পৌনে ৫শ কোটি টাকা তাগিদ দিয়েও না পাওয়ায় সিটিসেলের কার্যক্রম বন্ধ করে দেবেন বলে সম্প্রতি জানান বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ।

টু-জি তরঙ্গ ফি, বার্ষিক লাইসেন্স ফি, বার্ষিক তরঙ্গ ফি, রেভিনিউ শেয়ারিংসহ বিভিন্ন খাতে সিটিসেলের কাছে সরকারের পাওনা দাঁড়িয়েছে ৪৭৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও পাওনা না পাওয়ার কথা তুলে ধরে তারানা বলেন, “সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিলের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া আজ থেকে শুরু হবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আগামীকাল সরকারের কাছে ফাইল পাঠানো হবে।

“এই সিদ্ধান্ত সরকারের কাছে গেলে সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পর সিটিসেল বন্ধ হয়ে যাবে।”

সেক্ষেত্রে সাত দিন পর সিটিসেল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কি না-সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে তারানা বলেন, “চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।”

সিটিসেল বন্ধে বিটিআরসির উদ‌্যোগের মধ‌্যে সিটিসিলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহবুব চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, এই মাসের শেষ নাগাদ নতুন বিনিয়োগ নিয়ে তারা নতুনভাবে শুরু করতে চান। সেজন‌্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।

প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে থাকা ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “বকেয়া আদায়ে টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বিটিআরসি থেকে নোটিস প্রদানসহ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হল স্পেকট্রাম ও লাইসেন্স বাতিল হবে।”

সিটিসেলের বকেয়া আদায় কীভাবে হবে- জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী তারানা বলেন, “বকেয়া রাজস্ব আদায় করবই, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুক সকল অপারেটরের জন্যই, যে আমরা বকেয়ার ব্যাপারে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি।

“সিটিসেলের বকেয়া আদায়ের জন্য যত মামলা-মোকদ্দমা যা করা দরকার, তা আমরা করব,  দ্রুততার সাথে বকেয়া আদায়ের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করব।”

সিটিসেল বন্ধ হলে এই প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০০ কর্মীর চাকরির কী হবে- সাংবাদিকদের প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এটি তাদের ইন্টারনাল বিষয়। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় বা বিটিআরসি কোনো মতামত বা অভিমত প্রদান করতে পারে না।”

সিটিসেলের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটক ও বিটিসিএলের কাছেও বিটিআরসির পাওনা রয়েছে।

তা আদায়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে তারানা বলেন, “এ দুটি প্রতিষ্ঠানের কোনো বকেয়া থাকলে সেটি সরকার তার ইচ্ছাধীন ক্ষমতাবলে নৈতিক ও আইনগত ক্ষমতা বলে অ্যাসেট হিসেবে বিবেচনা করতে পারে, ঋণ হিসেবে অ্যাডজাস্ট করতে পারে।

“টেলিটকের বকেয়া বিষয়ে পেইড আপ ক্যাপিটাল হিসেবে গ্রহণ করা যায় কি না, সে বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।”