বিপিও খাতে বছরে ২ লাখ কর্মসংস্থান হবে: জয়

বাংলাদেশের বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং বা বিপিও খাতে ২০২১ সালের মধ্যে প্রতিবছর দুই লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2016, 12:16 PM
Updated : 28 July 2016, 12:56 PM

সরকারের এ মেয়াদে ২০১৮ সালের মধ্যে আইসিটি খাতে রপ্তানি আয় এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে দুই দিনের ‘বিপিও সম্মেলন ২০১৬’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জয় এই আশার কথা শোনান।

অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “অভ্যন্তরীণ বাজার শক্তিশালী করতে না পারলে বিশ্ব বাণিজ্যে ভালো করা যাবে না। আমাদের স্থানীয় বিপিও প্রতিষ্ঠানগুলোকে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্র্যান্ডিং করতে হবে।”

স্থানীয় অভিজ্ঞতার আলোকে বিশ্ববাজারে নিজেদের সক্ষমতা তুলে ধরতে এবারের বিপিও সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘স্থানীয় অভিজ্ঞতা, বৈশ্বিক ব্যবসা।’

বিপিও খাতে সরকারের সরাসরি সহযোগিতার কথা তুলে ধরে জয় বলেন, বাংলাদেশে এ খাতে প্রতিবছর প্রচুর কর্মী প্রয়োজন। এ জন্য আইসিটি বিভাগ ৪০ হাজার প্রযুক্তিবিদ তৈরির প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

“২০২১ সালের মধ্যে প্রতিবছর বিপিও খাতে দুই লাখ কর্মসংস্থান গড়ে তোলার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।”

সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, বিপিও খাতকে সহযোগিতা করতে দেশে ১০টি আইটি ট্রেনিং সেন্টার করা হবে, যাতে তরুণদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এ খাতে তাদের কাজে লাগানো যায়।

প্রতি বছর দেশে ১০ হাজার কম্পিউটার সায়েন্স স্নাতক তৈরি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এদের মধ্যে অনেকেই গুগল, ফেইসবুক বা মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে।

“ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, বর্তমানে প্রতিটি গ্রামের জনগণ সরকারি সেবা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফল, স্বাক্ষ্য, শিক্ষাসহ অন্যান্য তথ্যসেবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নিতে পারছে। দেশে ছয় কোটির বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে, বর্তমানে ১০০ শতাংশ টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক রয়েছে।”

আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, “২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। এ লক্ষ্য অর্জনে আইসিটি খাতকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। ”

স্কুলের পাঠ্যবইয়ের ছাপা সংস্করণের পাশাপাশি এখন পিডিএফ সংস্করণ পাওয়া যাওয়ার কথা তুলে ধরে জয় বলেন, শিগগিরই পাঠ্যবইয়ের ই-বুক সংস্করণও পাওয়া যাবে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক অনুষ্ঠানে বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যে ভালো করতে হলে বিপিও খাতকে দেশের বাজারেও শক্তিশালী করতে হবে।

“এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ৩২ বিলিয়ন ডলার আয় করছে, যার মধ্যে শুধু গার্মেন্ট খাত থেকেই আসে ২৮ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি বাণিজ্য থেকে এক বিলিয়ন ডলার আয় হয় এ রকম আর কোনো খাত আমাদের নেই। আমরা সে সুযোগটাই নিতে চাই।”

বিপিও খাতে প্রবৃদ্ধি প্রায় শতভাগ জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বিপিও থেকে আমরা ১৮০ মিলিয়ন ডলার আয় করছি। ২০২১ সালের মধ্যে আইসিটি খাত থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সরকার কাজ করছে তার মধ্যে শুধু বিপিও খাত থেকেই এক বিলিয়ন ডলার আয় করার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।”

২০০৯ সালে বিপিও খাত ৩০০ কর্মী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার কর্মী এ খাতে কাজ করছেন বলে জানান তিনি।

দেশে ও আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং বা বিপিও খাতের অবস্থান ও সক্ষমতা তুলে ধরতে দ্বিতীয়বারের মতো এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি(আইসিটি) বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্য) যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করছে।

এবারের আয়োজনে মোট ১০টি অধিবেশন ও দুইটি কর্মশালা হবে। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা ছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ২০ জন বিদেশি বক্তা এসব অধিবেশনে আলোচনায় অংশ নেবেন।

বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় টেলিকম ও ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এডিএন টেলিকম লিমিটেড বিপিও সম্মেলন আয়োজনে সহযোগিতা করছে। সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আরও আছে সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেড, ঢাকা ব্যাংক, বিটিআরসি, এ-টু-আই ও বেসিস।

অন্যদের মধ্যে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সংস্থা আইটিইউ’র মহাসচিব হাউলিন ঝাউ; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ইমরান আহমেদ; বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার এবং বাক্যের সভাপতি আহমাদুল হক সম্মেলনের উদ্বোধনী উনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।