বৈধ-অবৈধ মোবাইল যাচাইয়ের পদ্ধতি আসছে

অবৈধ বা নকল মোবাইল হ্যান্ডসেট যাচাই করার সুযোগ পেতে যাচ্ছেন গ্রাহকরা।

শামীম আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 April 2016, 02:51 PM
Updated : 3 April 2016, 02:56 PM

শিগগিরই একটি ওয়েব সাইটের মাধ্যমে গ্রাহরা তাদের মোবাইল হ্যান্ডসেটের ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুপমেন্ট আইডেনটিটি (আইএমইআই) নম্বর দিয়ে জানতে পারবেন হ্যান্ডসেটটি বৈধ কিনা।

আইএমইআই নম্বর হলো ১৫ ডিজিটের একটি স্বতন্ত্র সংখ্যা যা বৈধ মোবাইল ফোনে থাকে। একটি মোবাইল ফোনের কি-প্যাডে *#০৬# পরপর চাপলে ওই মোবাইল ফোনের বিশেষ এই শনাক্তকরণ নম্বরটি পর্দায় ভেসে উঠে।

বাংলাদেশে মোবাইল ফোন আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিআইএ) এবং টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি যৌথভাবে এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে।

এ প্রক্রিয়ায় বৈধপথে আসা মোবাইল হ্যান্ডসেটের ডাটাবেজ তৈরির জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ডাটাবেজ সফটওয়্যারও চালু করেছে বিটিআরসি।

এই ডাটাবেজ আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর অবৈধ ও নকল হ্যান্ডসেট অপারেটরদের সংযোগ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। এর আগেই গ্রাহকরা জেনে নিতে পারবেন তাদের হ্যান্ডসেটটি অবৈধ বা নকল কিনা।

গত ২০১২ সালে নকল সেটে আইএমইআই নম্বর দেওয়ার একটি পরিকল্পনা (জেনুইন আইএমইআই ইমপ্ল্যান্ট প্রোগ্রাম) নিয়েছিল বিটিআরসি। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও অগ্রসর হচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

বিএমপিআইএ এর সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই সফটওয়্যারের আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হলে আমদানিকারকরা তাদের হ্যান্ডসেট আইএমইআই নম্বর সেই ডাটাবেজ এ অন্তর্ভুক্ত করবে। এ প্রক্রিয়া শুরু হলে গ্রাহকরা আইএমইআই নম্বর দিয়ে বিএমপিআইএ ওয়েবসাইট থেকে যাচাই করতে পারবেন তার হ্যান্ডসেটটি বৈধভাবে এসেছে কিনা বা নকল কিনা।

আসল বা বৈধপথে আসা মোবাইল হ্যান্ডসেট হলে তা যাচাইয়ে বলবে ‘সঠিক’, আর অবৈধ হলে ওয়েবসাইটে উঠে আসবে ‘নকল’।

বিটিআরসি স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক কর্নেল মো. নাসিম পারভেজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বৈধভাবে আসা মোবাইল হ্যান্ডসেটের আইএমইআই নম্বর ডেটাবেজ করতে কাজ শুরু করা হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের নির্দেশনা রয়েছে যাতে খুব দ্রুত এই কাজ শুরু করা হয়।

এ প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট বিটিআরসি’র এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ডাটাবেজ তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। এখন পরীক্ষামূলক কাজের মাধ্যমে দেখা হচ্ছে এখানে কোনো ক্রটি রয়েছে কিনা। সব ধরনের ক্রটি ঠিক করে এর আনুষ্ঠানিকভাবে ‘পাইলট প্রজেক্ট’ শুরু করা হবে।

বিএমপিআইএ’র সাথে একযোগে কাজ করলেও ডাটাবেজ এর পুরো নিয়ন্ত্রণ বিটিআরসি’র হাতে থাকছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, আমদানিকারকরা বৈধভাবে যে হ্যান্ডসেট নিয়ে আসবে সেই আইএমইআই নম্বর ‘ইনপুট’ করবে এবং এর পর তা বিটিআরসি যাচাই করে লক করে দেবে, যাতে পুণরায় কোন আইএমইআই সংযুক্ত করা না যায়।

এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এক সময় দেশে নকল বা অবৈধ হ্যান্ডসেট থাকবে না জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, “সহসাই এইসব নকল হ্যান্ডসেট বন্ধ করা সম্ভব হবে না। এখানে গ্রাহক স্বার্থের বিষয় রয়েছে। অবৈধ ও নকল হ্যান্ডসেটগুলোর ‘লাইফ টাইম’ এক বা দুই বছরে শেষ হয়ে যায়। তাই একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর ওইসব হ্যান্ডসেট আর থাকবে না।”

নকল সেটে আইএমইআই নম্বর দেওয়ার একটি পরিকল্পনা (জেনুইন আইএমইআই ইমপ্ল্যান্ট প্রোগ্রাম) বাস্তবায়নেও বিটিআরসি অগ্রসর হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বাজারে যেসব মোবাইল হ্যান্ডসেট আছে সেগুলোর প্রতি তিনটিতে একটিই নকল বা অবৈধ বলছেন ব্যবসায়ীরা।

তাদের হিসাবে প্রতি বছর এক কোটির বেশি অবৈধ ও নকল মোবাইল হ্যান্ডসেট বাজার আসছে। এগুলোর বাজার মূল্য প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা, আর এর পুরোটাই যাচ্ছে গ্রাহকের পকেট থেকে।

প্রতিটি সেট আমদানিতে তার মূল্যের ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও ৫ শতাংশ শুল্কসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ সরকারকে দিতে হয় বলে জানান হ্যান্ডসেট ব্যবসায়ীরা।

সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে আইএমইআই নম্বরবিহীন সেট বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন সময় জানিয়েছেন।

বিটিআরসি’র হিসাবে গত ফেব্রুয়ারি মাস শেষ নাগাদ দেশে মোবাইল ফোন গ্রাহক সংখ্যা ১৩ কোটি ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ৮ কোটির মতো সিম সক্রিয় থাকে বলে ধারণা করে অপারেটরটা।

বিটিআরসি’র হিসাবে দেশে বর্তমানে একশত ৮টি প্রতিষ্ঠান হ্যান্ডসেট আমদানি করে থাকে। ২০১৫ সালে দেশে বৈধভাবে হ্যান্ডসেট আমদানির সংখ্যা দুই কোটি ৭৬ লাখ পিস।