রবি ও এয়ারটেলের ব্যবসা একীভূত করতে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করেছে দুই কোম্পানির মূল প্রতিষ্ঠান।
Published : 28 Jan 2016, 06:26 PM
একীভূত কোম্পানি রবি নামেই ব্যবসা চালাবে বলে বৃহস্পতিবার রবি আজিয়াটা লিমিটেডের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এই দুই কোম্পানি এক হলে তাদের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৪ কোটিতে, যা বাংলাদেশের মোট মোবাইল ফোন গ্রাহকের এক-চতুর্থাংশ। ৫ কোটি গ্রাহক নিয়ে গ্রামীণফোন আছে সবার উপরে।
আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ ও ভারতি এয়ারটেল বাংলাদেশে রবি আজিয়াটা লিমিটেড ও এয়ারটেল বাংলাদেশ লিমিটেডের (এয়ারটেল) কার্যক্রম একীভূত করতে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে চুক্তি সই করে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর দুই কোম্পানি থেকে বাংলাদেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম একীভূত করার সম্ভাবনার বিষয়ে একান্ত আলোচনা শুরুর ঘোষণা দেওয়ার পর এই চুক্তি হল।
এই চুক্তির কার্যকারিতা টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ (রেগুলেটরি), সরকার এবং আদালতের অনুমোদন পাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। এই প্রক্রিয়া আগামী দুই মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করছে রবি।
চুক্তি সম্পাদনের ফলে শেয়ার মূলধনের পুনর্বিন্যাস হবে এবং এতে আজিয়াটা একীভূত সত্তার ৬৮.৭% নিয়ন্ত্রণ করবে।
অন্যদিকে ভারতী ২৫ শতাংশ এবং বাকি ৬.৩% বর্তমানের অন্য শেয়ারহোল্ডার জাপানের এনটিটি ডকোমোর কাছে থাকবে।
দুই কোম্পানি একীভূত হলে বাংলাদেশের গ্রাহকদের আরও সাশ্রয়ী মূল্যে টেলিযোগাযোগ এবং উচ্চ গতির মোবাইল ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছে রবি।
রবির প্রধান নির্বাহী সুপুন বীরাসিংহে বলেন, “বাংলাদেশের বর্তমান অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং প্রতিযোগী বহুল টেলিকমিউনিকেশন খাতে একীভূতকরণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
“আমরা মনে করি, এই একীভূতকরণের মাধ্যমে আজিয়াটা এবং ভারতী এয়ারটেল উভয়েই বর্ধিত আকার এবং দক্ষতার ফলশ্রুতিতে ব্যয় সংকোচনের সুবিধা পাবে।”
আজিয়াটার প্রেসিডেন্ট ও গ্রুপের প্রধান নির্বাহী জামালুদ্দিন ইব্রাহিম বলেন, “ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং ক্যাম্বোডিয়ার মতো বাজারে এ ধরনের একীভূতকরণ এবং আত্মীকরণে আমাদের সাফল্য বাংলাদেশের বাজারেও একীভূতকরণে আজিয়াটার নেতৃত্বদানের যৌক্তিকতা প্রমাণ করে।।”
ভারতী এয়াটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও (ভারত ও দক্ষিণ এশিয়া) গোপাল ভিত্তাল এই একীভূত হওয়াকে ‘যৌক্তিক’ উল্লেখ করে এর মাধ্যমে সমন্বয় ঘটিয়ে গ্রাহকদের বিশ্বমানের সেবা দেওয়ার আশা প্রকাশ করেন।
রবির মালিকানা মালয়েশিয়াভিত্তিক আজিয়াটা গ্রুপের। অন্যদিকে এয়ারটেলের মালিক ভারতের ভারতি এয়ারটেল; তারা ওয়ারিদের ব্যবসা বাংলাদেশে কিনে নিয়েছিল।
এশিয়ার বড় টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানিগুলোর মধ্যে আজিয়াটা অন্যতম। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশের পাশাপাশি ক্যাম্বোডিয়া, ভারত ও সিঙ্গাপুরেও তাদের ব্যবসা রয়েছে।
২০১৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে মূলধনী ব্যয়ে ৭১০ কোটি টাকা বিনিয়োগসহ এ পর্যন্ত বাংলাদেশে রবির মোট মূলধনী ব্যয়ের পরিমাণ ১৫ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা।
দেশজুড়ে ৮ হাজার ১১৯টি সাইটের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ সেবা দিচ্ছে রবি, যার মধ্যে ৩.৫জি সাইটের সংখ্যা ২ হাজার ৪৫০টির বেশি।
মালয়েশিয়ায় ‘সেলকম’, ইন্দোনেশিয়ায় ‘এক্স এল’, শ্রীলঙ্কায় ‘ডায়লগ’, বাংলাদেশে ‘রবি’, ক্যাম্বোডিয়ায় ‘স্মার্ট’, ভারতে ‘আইডিয়া’ ও সিঙ্গাপুরে ‘এমওয়ান’ ব্র্যান্ড হিসেবে কাজ চালায় আজিয়াটা।
এশিয়াতে আজিয়াটা গ্রুপ এবং এর সহযোগী ও সহায়ক প্রতিষ্ঠানের মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ২৬ কোটির বেশি। ২০১৪ সালে গ্রুপটির আয় ছিল ১৮.৭ বিলিয়ন মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত।
বাংলাদেশে ভারতি এয়ারটেলের বিনিয়োগ শুরু হয় ২০১০ সালে। তখন ওয়ারিদ টেলিকমের ৭০ শতাংশ শেয়ার কিনেছিল তারা। তিন বছর পর ওয়ারিদের কাছে থাকা বাকি ৩০ শতাংশ শেয়ারও কিনে নেয় সিঙ্গাপুরে ভারতি এয়ারটেলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ভারতি এয়ারটেল হোল্ডিংস লিমিটেড।
বাংলাদেশে ব্যবসা বাড়াতে তারা আশাবাদী হলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়ে ওঠেনি। বর্তমানে ৬টি মোবাইল ফোন অপারেটরের মধ্যে গ্রাহক সংখ্যার দিকে থেকে এয়ারটেল চতুর্থ।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির হিসাবে গত ডিসেম্বর শেষ নাগাদ মোট মোবাইল ফোন গ্রাহক সংখ্যা ১৩ কোটি ৩৭ লাখ। এ সময়ে অপারেটর রবির গ্রাহক সংখ্যা ২ কোটি ৮৩ লাখ এবং এয়ারটেলের ১ কোটি ৭১ হাজার।