বন্ধ হবে অবৈধ ও নকল মোবাইল সেট: তারানা

অবৈধভাবে আমদানি করা বা নকল মোবাইল হ্যান্ডসেটে বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Jan 2016, 11:21 AM
Updated : 26 Jan 2016, 03:25 PM

বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের কাজ শেষ হওয়ার পর ‘অবৈধ’ হ্যান্ডসেট বন্ধের এই উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে টেলিকম খাতের প্রতিবেদকদের সংগঠন 'টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) এর নতুন কমিটির নেতা ও সদস্যদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এ কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।

তারানা এর আগে জানিয়েছিলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে গ্রাহকের কাছে থাকা মোবাইল হ্যান্ডসেট নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু হবে।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “মোবাইল হ্যান্ডসেটের ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুইপমেন্ট আইডেনটিটি (আইএমইআই) নম্বরের জন্য একটি ডেটাবেইজ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনও (বিএমপিআইএ) তাদের নিজস্ব ডেটাবেইজ করছে। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি তাদের সফটওয়্যার চালু হবে।”

বেসরকারি উদ্যোগে চালু হলেও এ ডেটাবেইজ বিটিআরসি সংরক্ষণ করবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বৈধপথে আসা হ্যান্ডসেটগুলোর আইএমইআই নম্বর সেখানে থাকবে।”

এ পদ্ধতি চালু হওয়ার পর এক সময় অবৈধ হ্যান্ডসেটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে তারানা হালিম জানান।

“সিম নিবন্ধনে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি নিবন্ধনের কাজ শেষ হলে সবার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে। কোনো অবৈধ বা নকল আইএমইআই এর হ্যান্ডসেট যেন চালু না থাকে সে বিষয়েও উদ্যোগ নেবে বিটিআরসি।”

কোনো হ্যান্ডসেট চালু হওয়ার পর তার আইএমইআই নম্বর স্বয়ংক্রিয়ভাবে অপারেটরদের কাছে চলে যায়। অপারেটররা ইচ্ছা করলে সেই হ্যান্ডসেটের সংযোগ বন্ধ করতে পারেন বলে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জানান।

তবে কবে নাগাদ ওই প্রক্রিয়া শুরু হবে তার সুনির্দিষ্ট সময় তারানা হালিম জানাননি।   

আগামী এপ্রিলে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এ কাজের অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী।

অনেক ক্ষেত্রেই বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন করতে গিয়ে গ্রাহকদের ফিরে যেতে হচ্ছে- এমন অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে তারানা বলেন, ‘একজনকেও ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না, আগামী বৃহস্পতিবার অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হবে।”

ব্যবসায়ীরা বলে আসছেন, বাজারে যেসব মোবাইল হ্যান্ডসেট আছে সেগুলোর প্রতি তিনটিতে একটিই নকল বা অবৈধ। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইএমইআই নম্বরবিহীন সেট ব্যবহার করা হচ্ছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন।

আর এ কারণে মোবাইল নম্বর থাকার পরও অপরাধীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া হারিয়ে গেলে বা ছিনতাই হলেও তা উদ্ধার করা যায় না।

এসব অপকর্ম বন্ধে অপারেটরদের এনইআইআর যন্ত্র বসানোর নির্দেশনা দিয়েছিল বিটিআরসি। এরপর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও সে নির্দেশনা বাস্তবায়িত হয়নি।

ওই ব্যবস্থা চালু হলে আইএমইআই নম্বরহীন হ্যান্ডসেট দিয়ে ব্যবহৃত সিম বন্ধ করে দেওয়া যাবে। এছাড়া নম্বরযুক্ত কোনো হ্যান্ডসেট চুরি হলে তা সহজে শনাক্ত করা যাবে। সিম বদলে ফেললেও একজন কলারকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে।

আইএমইআই নম্বর হলো ১৫ ডিজিটের একটি স্বতন্ত্র সংখ্যা যা বৈধ মোবাইল ফোনে থাকে। একটি মোবাইল ফোনের কি-প্যাডে *#০৬# পরপর চাপলে ওই ফোনের বিশেষ এই সনাক্তকরণ নম্বর পর্দায় ভেসে ওঠে, যা নকল হ্যান্ডসেটে থাকে না।

ফেইসবুকে পাওয়া অভিযোগের ‘সমাধান’

টেলিযোগাযোগ সেবা নিয়ে কেউ সরাসরি প্রতিমন্ত্রীর ফেইসবুক পেইজে অভিযোগ জানালে তা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারানা হালিম।

তিনি জানান, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে একটি সার্বক্ষণিক হটলাইন চালু করতে বলা হয়েছিল, যেখানে মোবাইল থেকে ফোন করে বিনামূল্যে অভিযোগ জানিয়ে সেবা পাওয়া যাবে। এ জন্য বিটিআরসিকে একটি সেলও খুলতে বলা হয়েছে।

সেই ব্যবস্থা না হওয়ায় নিজের ফেইসবুক পেইজেই অভিযোগ নেওয়ার কথা জানান তারানা।  

“আমার ভেরিফাইড পেইজে (https://www.facebook.com/TaranaHalimMP ) রেগুলার সরাসরি অভিযোগ আসছে। একটা একটা ধরে নিয়ে সমাধান করছি। অভিযোগ এলাকা ভিত্তিকও হয়- যেমন ওমুক জেলার ওমুক উপজেলার বা এলাকায় সমস্যা। তাও সামাধান করা হচ্ছে।”

ফেইসবুকে পাওয়া অভিযোগও যত্নের সঙ্গে দেখা হচ্ছে মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সকলে সমান গতিতে দৌড়ায় না। একা দৌড়েও কিছু করা যায় না। বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে সবার আমলে নেওয়া উচিৎ।”

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ফয়জুর রহামন চৌধুরী, টিআরএনবি সভাপতি রাশেদ মেহেদি ও সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।