এমএনপি নিলাম: যোগ্যতার মূল্যায়ন হবে ৯ সূচকে

মোবাইল ফোন নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদলের কাজ কারা পাবে, সেই প্রক্রিয়া ‘স্বচ্ছ’ করতে কয়েকটি মূল্যায়ন মানদণ্ড যুক্ত করে ‘মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি’ (এমএনপি) নীতিমালার সংশোধিত খসড়া চূড়ান্ত করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2016, 12:48 PM
Updated : 15 Jan 2016, 01:07 PM

বিটিআরসি সচিব মো. সরওয়ার আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এই খসড়া সম্প্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ এই কাজের লাইসেন্স দেওয়ার নিলাম পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠার প্রেক্ষাপটে যোগ্যতার নতুন শর্ত যোগ করার উদ্যোগের কথা টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম আগেই জানিয়েছিলেন।

এর ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি খসড়া সংশোধন করে কয়েকটি বিষয় নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় বলে বিটিআরসি লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

তিনি বলেন, “নিলাম প্রক্রিয়ায় আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের যোগ্যতা মূল্যায়ন করতে আগে নীতমালায় সুনির্দিষ্ট কোনো মানদণ্ডের উল্লেখ ছিল না। সংশোধনের পর এখন নয়টি মানদণ্ডের ভিত্তিতে মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে।”

খসড়ায় বলা হয়েছে, এমএনপি পরিচালনার অভিজ্ঞতা, টেকনিক্যাল ও সিস্টেম ডিজাইনের অভিজ্ঞতা, গ্লোবাল ফুট প্রিন্ট (কয়টি দেশে অপারেশনে রয়েছে), টেকনিক্যাল ক্যাপাসিটি, ফিনানশিয়াল অ্যানালাইসিস (আর্থিক বিশ্লেষণ), রোল আউট ম্যানেজমেন্ট, রিস্ক ম্যানেজমেন্টসহ নয়টি মানদণ্ডে ১০০ নম্বরের ভিত্তিতে আগ্রহী দরদাতাদের যোগ্যতা মূল্যায়ন করা হবে।

বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পর আগ্রহীদের আবেদনের সঙ্গে দেওয়া তথ্যর ভিত্তিতে মূল্যায়ন কমিটি যোগ্যতা নিরূপণ করে নম্বর দেবে। এরপর যোগ্য প্রার্থীদের একটি তালিকা প্রকাশ করবে বিটিআরসি। সেই ‘যোগ্য’ প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়েই নিলামের আয়োজন করা হবে।

অপারেটরের সেবায় সন্তুষ্ট না হলেও এখন অনেকে নম্বর পরিবর্তনের ঝক্কিতে যেতে চান না। এমএনপি চালু হলে তারা নম্বর ঠিক রেখেই অন্য অপারেটরে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। বহু প্রতীক্ষিত এই সুযোগ তৈরির জন্য গত ২ ডিসেম্বর এমএনপি নীতিমালায় অনুমোদন দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়।

এরপর এমএনপি অপারেটর নিয়োগের নিলাম প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা শুরু করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম আগামী মার্চে এমএনপি প্রক্রিয়া শুরু করার পরিকল্পনার কথা জানান।

কিন্তু এরই মধ্যে সম্ভাব্য নিলাম প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। নিলামের ভিত্তিতে কাজটি দিলে নিম্নতম দরদাতা প্রতিষ্ঠান কাজ পায়; সেক্ষেত্রে যোগ্যতম প্রতিষ্ঠান বাদ পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন টেলিকম খাত সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ।

এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম গত ১৫ ডিসেম্বর এ প্রসঙ্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লাইসেন্স এর ক্ষেত্রে বিডিং প্রসেসটা হয় কি না, বিষয়টি নিয়ে যাচাই-বাছাই করতে হবে। টেকনিক্যাল কোয়ালিফিকেশন বিষয়ে গুরুত্বারোপ করতে হবে, তার ভিত্তিতে গ্রেডিং করা হবে। স্বচ্ছতাকে নিশ্চিত করতে কিছু রিভিশন করতে হবে।”

সেই সংশোধনীর পর যে খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে, তাতে বিড আর্নেস্ট মানি পাঁচ লাখের বদলে ১০ লাখ টাকা, বেইজ প্রাইস ৫০ লাখের জায়গায় এক কোটি টাকা, বার্ষিক লাইসেন্স নবায়ন ফি ১০ লাখের বদলে ২০ লাখ টাকা এবং ব্যাংক গ্যারান্টি ৫০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক কোটি টাকা করা হয়েছে বলে বিটিআরসির একজন কর্মকর্তা জানান।

এছাড়া নীতিমালায় এমএনপি সংশ্লিষ্ট ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস (ভিএএস) দেওয়ার সুযোগ, এক শতাংশ ক্যাপাসিটি নিয়ে কার্যক্রম (রোলআউট অবলিগেশন) শুরুর বিধান রাখা হয়েছে।

‘রোলআউট অবলিগেশন’ পূরণে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করে নিলামে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে সংশোধিত নীতিমালার খসড়ায়।

লাইসেন্সের নিলাম হলে কোনো বড় মোবাইল অপারেটর পেছনে থেকে অন্য কোনো কোম্পানির মাধ্যমে এমএনপির কাজ নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে এবং তা সম্ভব হলে লাইসেন্স পাওয়ার পর এমএনপি’র বাস্তবায়ন বিলম্বিত করানোর চেষ্টা হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন টেলিকম খাতে অভিজ্ঞ একজন। সেই ফাঁক বন্ধ করতেই ‘রোলআউট অবলিগেশন’ এর এই শর্ত যোগ করা হয়েছে নীতিমালায়।

অবশ্য নিলাম প্রক্রিয়ার জন্য পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হবে কিনা- তা এখনো চূড়ান্ত করেনি বিটিআরসি।

খসড়ায় বলা হয়েছে, দেশি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিদেশি প্রতিষ্ঠানও এ নিলামে অংশ নিতে পারবে। তবে তাদের বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে আসতে হবে। এক্ষেত্রে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হবে ৫১ শতাংশ এবং দেশি প্রতিষ্ঠানের ৪৯ শতাংশ।

নিলাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স পাবে ১৫ বছরের জন্য এবং এই প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসা শুরুর দ্বিতীয় বছর থেকে সাড়ে ৫ শতাংশ হারে সরকারকে রাজস্ব দিতে হবে।

এমএনপি সুবিধা দিতে অপারেটরা গ্রাহকদের কাছ থেকে ৩০ টাকা নিতে পারবে। অর্থ মন্ত্রণালয় আগেই বিষয়টি অনুমোদন করেছে। একবার এমএনপি সুবিধা নেওয়ার পর গ্রাহক আবার নতুন কোনো অপারেটরে যেতে চাইলে তাকে ৪৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে।

বর্তমানে ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশ ছাড়াও প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি বা এমএনপি পরিষেবা চালু রয়েছে।