গ্রামীণফোন নিয়ে অভিযোগ অনেক: প্রতিমন্ত্রী

মোবাইল ফোন অপারেটরদের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ডেকে নিয়ে কলড্রপসহ গ্রাহক ভোগান্তির বিষয়গুলো ধরে ধরে দেখিয়ে ‘এই অবিচার’ বন্ধের তাগিদ দিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2015, 03:35 PM
Updated : 19 Oct 2015, 03:35 PM

তিনি বলেছেন, সব অপারেটরের বিরুদ্ধেই গ্রাহকদের অভিযোগ রয়েছে, কিন্তু গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধেই ‘বেশি’।

মোবাইল ফোন গ্রাহকদের অভিযোগ বাড়তে থাকায় অপারেটরগুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের সোমবার সচিবালয়ে ডাকেন প্রতিমন্ত্রী।

বিকেল সাড়ে ৪টায় সংবাদকর্মীদের উপস্থিতিতে এ বৈঠকের শুরুতেই তারানা প্রোজেক্টরের মাধ্যমে গ্রামীণফোনের বিষয়ে ফেইসবুকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের একটি মন্তব্য দেখান।

কলড্রপে বিরক্ত হয়ে চারদিন আগে ফেইসবুকে ওই পোস্টে শাহরিয়ার আলম লেখেন, “জিপির সমস্যাটা কী? কল করা অসম্ভব। কলড্রপ। কয়েক মাস আগে তবুও তারা কলড্রপের জন্য এসএমএস করে ক্ষমা চাইত, এখন তো তার কোনো বালাই নেই।”

এরপর গ্রামীণফোনের ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মত’ আচরণ, প্যাকেজ অফার দিয়ে অতিরিক্ত টাকা কেটে নেওয়া, কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে সেবা নিতে দুর্ভোগ, ইন্টারনেট ধীরগতিসহ গ্রাহকের বিভিন্ন অভিযোগ একে একে প্রোজেক্টরে দেখিয়ে পড়ে শোনান টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী।

গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী রাজীব শেঠিকে উদ্দেশ্য করে তারানা বলেন, “জিপির বিরুদ্ধে কিন্তু অনেক অভিযোগ আছে, আপনাদের সাবসক্রাইবার অনেক বেশি, তাই আপনাদের বিশেষ মনোযোগী হতে হবে এই কমপ্লেইনগুলোর বিষয়ে।”

রাজীব শেঠিকে এ সময় মাথা নিচু করে বসে থাকতে দেখা যায়।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “যাদের গ্রাহক সংখ্যা বেশি তাদের গ্রাহকদের ভাল সেবার আকাঙ্ক্ষাও থাকে বেশি। মানুষের চাহিদার প্রতি সম্মান না দেখানোয় এ রকম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। আপনারা এটি দেখতে পাচ্ছেন।”

১৯৯৭ সালে কার্যক্রম শুরু করা গ্রামীণফোনের ৫৫.৮ শতাংশ মালিকানা রয়েছে নরওয়ের কোম্পানি টেলিনরের হাতে। গত অগাস্ট শেষে গ্রামীণ ফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৫ কোটি ৫০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

“গ্রাহকদের প্রতি যে অবিচার করা হচ্ছে তা মুক্ত করতে হবে। গ্রাহকরা যেন মনে না করে যে তারা প্রতারিত হচ্ছেন। গ্রাহক সন্তুষ্টি অর্জন করাই মূল লক্ষ্য, এখানে বিরোধী কেউ নেই। একসঙ্গে যাত্রা করতে হবে,” অপারেটরদের প্রধান নির্বাহীদের উদ্দেশে বলেন তারানা।

বাংলালিংকের সিইও জিয়াদ সিতারা, রবি’র সিইও সুপন বীরাসিংহে, এয়ারটেলের পিডি শর্মা, সিটিসেলের মেহবুব চৌধুরী এবং রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আহমেদসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রায় দেড় ঘণ্টার এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। 

তারানা হালিম বলেন, অভিযোগ শুধু গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে নয়, অন্য অপারেটরদের বিরুদ্ধেও আছে।

“কলড্রপ হচ্ছে এবং কলড্রপে কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে না। এর সমাধান করতে হবে,” বলেন তিনি।

প্রতিমন্ত্রী এ বিষয়ে রাজীব শেঠির বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিটিআরসি সেবার যে মানদণ্ড ঠিক করে দিয়েছে, গ্রামীণফোন সবসময় তা অনুসরণ করছে। থ্রিজি সেবা ও কলড্রপের ক্ষেত্রে অনেকগুলো ব্যারোমিটার বিবেচনায় নিতে হবে। জিরো কলড্রপ- এটা সম্ভব নয়। অপারেটর হিসেবে আমরা সব সময় মানদণ্ড বজায় রেখে চলি, এতে আরও উন্নতির সুযোগ আছে।”

কলড্রপে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলেও গ্রামীণফোন এখন কেন তা দিচ্ছে না, তা জানতে চান তারানা।

জবাবে রাজীব শেঠি বলেন, ভয়েস কল ড্রপ হলে এক মিনিট ক্ষতিপূরণের যে ঘোষণা  গতবছর দেওয়া হয়েছিল, তা ছিল একটি ‘প্রমোশনাল অফার’।

গ্রামীণ ফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মাহমুদ হোসেন জানান, দেশের উত্তরাঞ্চলের ১১টি জেলায় তাদের থ্রিজি তরঙ্গের একটি স্লটে ‘ইন্টারসেকশন সমস্যা’ (অন্য একটি তরঙ্গের সঙ্গে মিলে যাওয়া) হচ্ছে। এ কারণেও কলড্রপ বেড়েছে। 

বাংলালিংকের সিইও জিয়াদ সিতারা বলেন, কলড্রপের সমস্যাটি কেবল অপারেটরদের নয়, এর সঙ্গে আইজিডব্লিউ, আইসিএক্স, এনটিটিএন সার্ভিসগুলোও জড়িত। কিন্তু গ্রাহকরা কেবল অপারেটরদের দুষছেন।

এ বিষয়ে সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

রবির কোম্পানি সেক্রেটারি মোহাম্মাদ শাহেদুল আলম বলেন, মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো তাদের সেবা দেয় মাইক্রোওয়েভের মাধ্যমে। ফলে কুয়াশার কারণেও অনেক সময় সমস্যা দেখা দেয়। মোবাইল অপারেটরদের ফাইবার কানেক্টিভিটি দেওয়া হলে এর সমাধান সম্ভব।

কলড্রপ সমস্যার সমাধানে মোবাইল অপারেটরদের দুই মাস সময় বেঁধে দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ডিসেম্বরের মধ্যে অপারেটররা কলড্রপ সমস্যার সমাধানে কী উদ্যোগ নিয়েছে তা জানাতে হবে। কলড্রপের বিষয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে একটা সমাধানে আসতে হবে।”

সম্প্রতি ভারতে প্রতি কলড্রপে এক রুপি ক্ষতিপূরণের ঘোষণা আসার কথা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও সে বিষয়টি বিবেচনা করতে বলেন বিটিআরসিকে।

টেলিযোগাযোগ সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী, বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান আহসান হাবীব খান, মহাপরিচালক (সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমদাদ উলবারী এবং মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র হিসাবে গত অগাস্ট শেষে ষোল কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে মানুষের হাতে থাকা মোবাইল সিমের সংখ্যা ১৩ কোটি ছাড়িয়ে গেছে।