রবি-এয়ারটেল এক হওয়ার প্রস্তাব যাচ্ছে মন্ত্রণালয়ে

বাংলাদেশের দুই মোবাইল ফোন অপারেটর রবি ও এয়ারটেলের ব্যবসা একীভূত করার প্রস্তাব খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2015, 04:05 PM
Updated : 30 Sept 2015, 04:05 PM

বুধবার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কমিশন সভায় এ বিষয়ে আলোচনায় দুই অপারেটরের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

কমিশন সভা শেষে বিটিআরসির সচিব মো. সরওয়ার আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সভায় দুই অপারেটরের প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।”

সভায় উপস্থিত বিটিআরসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুই অপারেটরের ব্যবসা একীভূত করার বিষয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে আইনগত দিকগুলো যাচাই করা হয়েছে।

“ব্যবসা একীভূত করার পর দুই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের চাকরির ক্ষেত্রে যেন কোনো সমস্যা না হয় এবং সেবার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে কি না এগুলো যাচাই করা হয়েছে।”

এই প্রস্তাব এখন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠানো হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

ব্যবসা একীভূত করার চূড়ান্ত অনুমতি পেতে কয়েক মাস লাগবে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, “ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এ বিষয়ে অনুমতি দেওয়ার পর দুই অপারেটরকে উচ্চ আদালতের কোম্পানি ম্যাটার বেঞ্চে যেতে হবে। কোম্পানি বেঞ্চে দুই অপারেটরের দেনা-পাওনার বিষয়টির সমাধান হবে। কারও কোনো আপত্তি না থাকলে সেখান থেকে অনুমতি পাওয়ার পরই বিটিআরসি এ বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে পারবে।”

ব্যবসা একীভূত করার অনুমতি চেয়ে সম্প্রতি বিটিআরসিতে চিঠি দেয় মোবাইল অপারেটর রবি ও এয়ারটেল।

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিতে জমা পড়া ওই চিঠিতে বলা হয়, একীভূত হওয়ার পর ৭৫ শতাংশ শেয়ার থাকবে মালয়েশিয়াভিত্তিক আজিয়াটা গ্রুপ ও এনটিটি ডকোমার কাছে; বাকি ২৫ শতাংশ শেয়ার থাকবে ভারতি এয়ারটেলের কাছে।

গত ৯ সেপ্টেম্বর ব্যবসা এক করার আলোচনা শুরু করে বাংলাদেশের এই দুই মোবাইল ফোন অপারেটর।

বিটিআরসিতে জমা দেওয়া ওই চিঠিতে বলা হয়, ব্যবসা একীভূত হওয়ার পর এয়ারটেলের গ্রাহকদের নম্বর (০১৬ দিয়ে শুরু) অপরিবর্তিত থাকবে। তবে তিন বছর পর থেকে ০১৬ দিয়ে নতুন সংযোগ দেওয়া হবে না।

এতে বলা হয়, দুই অপারেটর একীভূত হওয়ার পর যৌথ গ্রাহকদের কোনো ধরনের অসুবিধা হবে না।

সেবা আরও উন্নত হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশে মোট ১৩ কোটি মোবাইল ফোন গ্রাহকের মধ্যে ২ কোটি ৭৯ লাখ রবির, ৯০ লাখ এয়ারটেলের। এ হিসেবে মোট গ্রাহকের প্রায় এক-চতুর্থাংশ এই দুটি কোম্পানির।

রবির মালিকানা মালয়েশিয়াভিত্তিক আজিয়াটা গ্রুপের। অন্যদিকে এয়ারটেলের মালিক ভারতের ভারতি এয়ারটেল। তারা  বাংলাদেশে ওয়ারিদের ব্যবসা কিনে নিয়েছিল।

এশিয়ার বড় টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানিগুলোর মধ্যে আজিয়াটা অন্যতম। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশের পাশাপাশি ক্যাম্বোডিয়া, ভারত ও সিঙ্গাপুরেও তাদের ব্যবসা রয়েছে।

এশিয়াতে আজিয়াটা গ্রুপ এবং এর সহযোগী ও সহায়ক প্রতিষ্ঠানের মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ২৬ কোটির বেশি। ২০১৪ সালে গ্রুপটির আয় ছিল ১৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত।

অন্যদিকে বাংলাদেশে ভারতি এয়ারটেলের বিনিয়োগ শুরু ২০১০ সালে। তখন ওয়ারিদ টেলিকমের ৭০ শতাংশ শেয়ার কিনেছিল তারা। তিন বছর পর ওয়ারিদের কাছে থাকা বাকি ৩০ শতাংশ শেয়ারও কিনে নেয় সিঙ্গাপুরে ভারতি এয়ারটেলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ভারতি এয়ারটেল হোল্ডিংস লিমিটেড।

বর্তমানে ছয়টি মোবাইল ফোন অপারেটরের মধ্যে গ্রাহক সংখ্যার দিকে থেকে এয়ারটেল বাংলাদেশে চতুর্থ।

গ্রাহক সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশে শীর্ষে অবস্থান করছে গ্রামীণফোন, যার গ্রাহক সংখ্যা গত জুলাই শেষে ছিল ৫ কেটি ৩৯ লাখ। তখন পর্যন্ত বাংলাদেশে মোবাইল ফোন গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৮৭ লাখ।