ইন্দোনেশিয়ার বালিতে চলমান বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য উন্নত দেশগুলোর বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
Published : 05 Dec 2013, 06:52 PM
ভারত, চীন ও ইন্দোনেশিয়াসহ কয়েকটি দেশ কৃষি ভর্তুকি বিষয়ে ডব্লিউটিওর নীতি সংশোধনের দাবিতে অনড় রয়েছে।
এর মধ্যে সংস্থাটির প্রস্তাবিত বাণিজ্য সহজীকরণ (ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন) প্রস্তাবও গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়েছে ভারত।
উন্নত দেশগুলোর আচরণকে অনায্য দাবি করে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা কড়া বলেছেন, যেনোতেনো সমাধানের চেয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়াই ভালো।
এবারের সম্মেলনে বাণিজ্য সহজীকরণ বিষয়ে চুক্তি, খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ কৃষি ভর্তুর্কি ও এলডিসিগুলোর জন্য শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধার বিষয়ে সমঝোতা নিয়ে বালি প্যাকেজ ঠিক করা হয়েছে।
কিন্তু কোনো একটি বিষয়েও সমঝোতা না হলে পুরো প্যাকেজ নিয়েও সমঝোতা হবে না। আর তাহলে এবারের ডব্লিউটিও সম্মেলনও ফলশূন্যভাবে শেষ হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেমলনে শর্মা বলেন, বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে ক্ষুধার্ত রেখে ভারত সরকার কোনো ধরনের সমঝোতা করবে না।
তিনি বলেন, “উন্নত দেশগুলো কৃষিপণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারকে বিকৃত করে রেখেছে। ভর্তুকি দেয়ার মাধ্যমে তারা বাজার মূল্যকে প্রভাবিত করছে।
“ভর্তুকির ক্ষেত্রে তারা কৃষিপণ্যের ২৯ বছর আগের মূল্যকে ভিত্তি মূল্য ধরছে। এটি দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশের কৃষকের স্বার্থের পরিপন্থী। তাই এ বাজারব্যবস্থা ও ভর্তুকি পদ্ধতির সংস্কার জরুরি।”
ভারতের মন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পরই সম্মেলন স্থলে সমঝোতা নিয়ে হতাশার সুর বাজতে থাকে।
বিভিন্ন দেশ থেকে আসা হাজার খানেক সাংবাদিকসহ অনেকেই বলাবলি করতে থাকেন এবারও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়েই শেষ হবে ডব্লিউটিও সম্মেলন।
ভারতসহ জি-৩৩ ভুক্ত ৪৬টি দেশের দাবি, গরীব কৃষককে ভর্তুকি দিয়ে তার কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে উৎপাদিত ফসল কিনে নিতে হবে, যাতে গরীব মানুষকে স্বল্পমূল্যে খাবারের যোগান দেয়া যায়।
বিশ্বজুড়ে খাবারের দাম বহুগুণে বাড়লেও ১৯৮৬-৮৮ সালের ভিত্তিমূল্য ধরে কৃষি ভর্তুকির হিসাব করে ডব্লিউটিও। এতেই আপত্তি ভারতসহ অনেক স্বল্পোন্নত দেশের।
আনন্দ শর্মা বলেন, “উন্নয়নশীল দেশগুলো কেবল উন্নত দেশের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাবে- এই ধারণা ভুলে যাওয়ার সময় এসেছে। সমতা ও ন্যায্যতার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সবাইকে এগুতে হবে। এই মুহূর্তে এটাই সবচেয়ে ভালো পথ।”
একঘণ্টার সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ১৫ মিনিট সূচনা বক্তব্য রাখেন ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী। পরে তিনি প্রায় ৩০ জন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর দেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে কৃষি খাতে ভারত সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন শর্মা।
খাদ্য নিরাপত্তা ইস্যুতে কোন ছাড় নয়
এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে শর্মা বলেন, “ডব্লিউটিওতে দর কষাকষি প্রক্রিয়ায় খাদ্য নিরাপত্তা ইস্যুতে কোনো ছাড় দেবে না ভারত।
“আমরা একা নই। আমাদের সঙ্গে আছে বিশ্বের প্রায় সব দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশ। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ এসব দেশে বাস করে।”
তিনি বলেন, “১২০ কোটি মানুষের দেশ ভারত ৭০ কোটি দরিদ্র মানুষকে তাদের ন্যূনতম খাদ্য চাহিদা পূরণে বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
“এটি আমার দেশের নাগরিকদের আইনসঙ্গত অধিকার। এই ইস্যুতে আপসের কোনো সুযোগ নেই।”
প্রস্তাবিত বাণিজ্য সহজীকরণ (ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন) প্রস্তাবও ভারতের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় বলে উল্লেখ করেন শর্মা।
চলমান মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে আলোচনার জন্য আনা এই প্রস্তাব পর্যালোচনা করার দাবি জানিয়েছে ভারতসহ কিছু প্রভাবশালী।
তাদের অভিযোগ, এ প্রস্তাবনা উন্নত দেশের পক্ষে যায়। দরিদ্র দেশগুলোর মানুষের স্বার্থ সংরক্ষিত হচ্ছে না তাতে।
ভারতের একগুঁয়ে অবস্থানের কারণে বালি সম্মেলন ব্যর্থ হতে পারে- উন্নত দেশগুলোর এমন অভিযোগকে বাস্তবতাহীন বলে উড়িয়ে দেন আনন্দ শর্মা।
তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন, “স্বল্পোন্নত দেশগুলোর দরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবির বিরোধিতা দুঃখজনক।”
তিনি বলেন, “উন্নত দেশগুলো দারিদ্র্য বিমোচন ও বিশ্ববাসীর জীবন মান উন্নয়নে সহস্রাব্দের লক্ষ্যমাত্রা বা এমডিজি ঘোষণায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু তারাই এখন দরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ইস্যুর বিরোধিতা করছে।
“এটা চরম স্ববিরোধী, উন্নত দেশগুলোর এই অবস্থান এমডিজির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”
মার্কিন এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “মন্দ চুক্তি হওয়ার চেয়ে, কোনো চুক্তি না হওয়া ভাল।
শর্মা বলেন, বালি সম্মেলনের সাফল্য চায় ভারত। এ সম্মেলনের প্রস্তাবনাগুলো গৃহীত হোক- তা চায় দেশটি। কিন্তু এসব হতে হবে ন্যয্য, যুক্তিসঙ্গত ও ভারসাম্যপূর্ণ।
মার্কিন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে শর্মা উল্টো অভিযোগ করেন, “উন্নত দেশগুলোর ভর্তুকির কারণে দরিদ্র দেশগুলোর কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় না।”
ডব্লিউটিওর কোনো সম্মেলনই সফলভাবে হয়নি। ২০০১ সালে দোহা সম্মেলন শেষ হয়েছিল কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়া।
২০০৫ সালে হংকং সম্মেলনে দোহা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বাইরে নতুন কোন কার্যকর সিদ্ধান্ত হয়নি।
সম্মেলনের ৩য় দিনে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন বাণিজ্য সচিব মাহাবুব আহমেদ। শুক্রবার চারদিনের এই সম্মেলন শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।