বালিতে এলডিসির স্বার্থ রক্ষার আশা

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মন্ত্রী পর্যায়ের নবম সম্মেলনে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য ‌‌‘উন্নয়ন প্যাকেজ’ সফল হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সম্মেলনের চেয়ারম্যান ইন্দোনেশিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী গীতা বীরজওয়ান।

আবদুর রহিম হারমাছি বালি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2013, 09:01 AM
Updated : 3 Dec 2013, 09:24 AM

মঙ্গলবার সকালে সম্মেলন শুরুর আগে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের কাছে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

গীতা বীরজওয়ান বলেন, “আমার বিশ্বাস এ সম্মেলনে বালি প্যাকেজ সফল হবে। এলডিসিগুলোর স্বার্থ সংরক্ষণ হবে।

“আশা করি নেতৃবৃন্দ সম্মেলনে তাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রকাশ ঘটাবেন। রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখিয়ে সম্মেলনে তারা এলডিসির স্বার্থ সংরক্ষণে এগিয়ে আসবেন এবং একমত হবেন। একইসঙ্গে এসব বিষয়ে চুক্তি করবেন।”

এই সম্মেলনে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো স্বল্পোন্নত দেশের স্বার্থ সংরক্ষণে সহযোগিতার মনোভাব দেখাবে বলে মনে করেন তিনি।

আর কোনো সমঝোতায় না আসা গেলে উন্নত, উন্নয়নশীল ও এলডিসি- সবার জন্যই এটা একটা ‘দুঃসংবাদ’ হবে মন্তব্য করে সম্মেলনের চেয়ারম্যান বলেন, “এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই সবাইকে সমঝোতার মনোভাব দেখাতে হবে।”

১৯৭৬ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে দূতাবাসে কর্মরত ছিলেন গীতা বীরজওয়ান।

বালিতে সম্মেলনে যোগ দিতে আসার আগে শনিবার বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবারের সম্মেলনে আমরা উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের বাজারে এলডিসির সকল পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধাসহ উন্নয়ন প্যাকেজ বাস্তবায়নের দাবি জানাবো।”

উন্নয়ন প্যাকেজের অন্য তিনটি ইস্যু হলো- বাণিজ্য সহজীকরণ চুক্তি, সেবা খাতের বাণিজ্যে ছাড় এবং রুলস অব অরিজিন।

সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারের ১৭ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাহবুব আহমেদ।

জেনেভাতে ডব্লিউটিওর প্রধান কার্যালয়ে সম্মেলন পূর্ববর্তী আলোচনা আগেই শেষ হয়েছে।ৎ ‘বালি প্যাকেজ’র জন্য আলোচনা করে সমঝোতায় আসার বিষয়টি জেনেভাতেই নিষ্পত্তি হবে বলে আশা করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি।

এ অবস্থায় বিভিন্ন সম্ভাব্য চুক্তির খুটিনাটি নিয়ে বালিতেও সমঝোতা আলোচনা করতে হবে; যা সম্মেলনের সাফল্যকে ইতোমধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

বাণিজ্য সচিব বলেন, বালি সম্মেলনে মোটা দাগে বাণিজ্য সহজীকরণ বা ট্রেড ফাসিলিটেশন, কৃষি এবং এলডিসির জন্য উন্নয়ন প্যাকেজ নিয়ে অলোচনা হবে।

“প্যাকেজের মধ্যে আবার ৪টি ইস্যু রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা, সেবা খাতের বাণিজ্যে এলডিসির জন্য ছাড়, রুলস অব অরিজিন বা রপ্তানি পণ্যের কাঁচামালের উৎস সম্পর্কিত শর্ত শিথিল করা ও তুলা ইস্যু।”

শুল্কমুক্ত সুবিধা

২০০৫ সালে ডব্লিউটিওর হংকং সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয়, উন্নত দেশগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশের সব পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা দেবে। যে সব দেশ একশ ভাগ পণ্যে এ সুবিধা দিতে পারবে না তারা অন্তত ৯৭ শতাংশ পণ্যে এ সুবিধা দেবে।

তবে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর আট বছর পার হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। বাংলাদেশ বালি সম্মেলনে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তাগিদ দেবে।

যুক্তরাষ্ট্র একটি নিজস্ব আইনের আওতায় আফ্রিকার দেশগুলোকে তৈরি পোশাকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে; ডব্লিউটিওর সিদ্ধান্তের আলোকে নয়।

“তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে এ সুবিধা দিতে হলে তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে,” বলেন মাহবুব আহমেদ।

বাণিজ্য সহজীকরণ চুক্তি

ডব্লিউটিওর আওতায় বাণিজ্য সহজীকরণের ওপর একটি চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে। বালি সম্মেলনে এ বিষয়ে একটি চুক্তি হওয়ার কথা।

এর উদ্দেশ্য হলো-আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটি আধুনিক ও উন্নত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, যাতে বাণিজ্যের জন্য সময় ও অর্থ সাশ্রয় হয়।

এই চুক্তির বিষয়বস্তু বালিপূর্ব জেনেভা আলোচনায় চূড়ান্ত করা যায়নি।

সেবা খাত

দীর্ঘদিন আলোচনার পর ২০১১ সালে জেনেভাতে মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে সেবা খাতের বাণিজ্যে এলডিসির জন্য ছাড় বা এলডিসি সার্ভিস ওয়েভারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উন্নত দেশগুলোকে এলডিসির জন্য সেবা খাতে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা দেয়ার কথা। কিন্তু গত দুবছরে তা বাস্তবায়িত হয়নি।

সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য বালি সম্মেলনে বাংলাদেশসহ এলডিসিভুক্ত দেশগুলো জোর চেষ্টা চালাবে বলে জানান বাণিজ্য সচিব।

রুলস অব অরিজিন

রুলস অব অরিজিন হচ্ছে শুল্কমুক্ত বা যে কোন অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধার আওতায় রপ্তানি পণ্যের কাঁচামালের উৎস সম্পর্কে বিভিন্ন শর্ত।

মাহবুব আহমেদ বলেন, রুলস অব অরিজিন শর্ত সহজ ও সরল না হলে তা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে শুল্কমুক্ত সুবিধা স্কিম কার্যত অর্থহীন হয়ে পড়ে। রুলস অব অরিজিন সহজ, স্বচ্ছ ও শিথিল করার লক্ষ্যে বালিতে একটি সিদ্ধান্ত অনুমোদন হওয়ার কথা রয়েছে।