বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল মূল্যস্ফীতির এই লক্ষ্যমাত্রা প্রস্তাব করেন।
তিনি বলেন, “সরকার দেশে বর্তমানে বিরাজমান চাহিদার প্রবৃদ্ধি কমিয়ে সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধিসহ সামষ্টিক অর্থনীতির অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে চায়।”
বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচককে ৫ দশমিক ৩ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। পরে তা সংশোধন করে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ করা হয়। তবে সেই লক্ষ্য পূরণ করা যায়নি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৬ দশমিক ২৯ শতাংশে ওঠে, যা ১৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। স্বাভাবিকভাবেই নিম্নবিত্ত আর মধ্যবিত্তের সংসারে তেল-নুনের হিসাব মেলাতে প্রচণ্ড চাপ পড়ছে।
এ প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ বাজারের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাকে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ‘প্রধান চ্যালেঞ্জ’ বলে মনে করছেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি ও খাদ্যদ্রব্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ২০২১ সালের মে মাসের তুলনায় ২০২২ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির হার প্রায় ৬৫ শতাংশ, ইউরিয়া সারের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ১১৪ শতাংশ, সয়াবিন তেলের মূল্য বৃদ্ধির হার ২৯ শতাংশ, গমের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৮৫ শতাংশ এবং চিনির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩ শতাংশ। সেকারণে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ৯টি পণ্যের (জ্বালানি তেল, এলএনজি, গম, রাসায়নিক সার, পাম অয়েল, সয়াবিন তেল, কয়লা, ভুট্টা ও চাল) একই পরিমাণ আমদানি করতে বাংলাদেশকে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে সম্ভাব্য অতিরিক্ত ব্যয় হিসেবে ৮.২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে বলে তথ্য দেন তিনি।
কামাল বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন করতে হচ্ছে এবং চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে প্রায় ৭.৯ শতাংশ।
“সুতরাং, আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আমদানি সহনীয় পর্যায়ে রাখা ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখা হবে আমাদের একটি বড় চ্যালেঞ্জ।”