২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭.৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির আশা

যুদ্ধের বাজারে বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তার মধ্যেও মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) লক্ষ্য ছাড়ানো প্রবৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন অর্থবছরের জন্য আরও বড় লক্ষ্য ঠিক করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 June 2022, 09:36 AM
Updated : 9 June 2022, 09:36 AM

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য উত্থাপিত ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার এই বাজেট প্রস্তাবে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন তিনি।

বিশ্ব অর্থনীতিতে শঙ্কার মধ্যেও কেন এবার বেশি প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করছেন, সেই ব্যাখ্যা বাজেট বক্তৃতায় দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “অর্থনৈতিক চলকসমূহের গতিপ্রকৃতি দৃষ্টে প্রতিভাত হয় যে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ অব্যাহত থাকলেও অর্থনীতির উপর উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। চলতি অর্থবছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ অর্জিত হবে বলে আশা করা যায়।

“পাশাপাশি কোভিড-১৯ অতিমারির প্রলম্বিত প্রভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নির্ধারণ করা হয়েছে।“

সমকালীন অর্থনীতিকদের অনেকে প্রবৃদ্ধির হারকে অর্থনীতির গতিশীলতা হিসেবে মানলেও টেকসই উন্নয়নের সূচক হিসেবে মানতে নারাজ। তারপরও অর্থনীতির এই প্রবৃদ্ধির প্রপঞ্চটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে বারবার আলোচনায় এসেছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেকর্ড ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। এরপর এল মহামারী। তার মধ্যেও ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য যখন ধরেছিলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু অর্জিত হল ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

মহামারীর ধাক্কা সামলে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশে। দুঃসময় কাটিয়ে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি এবার ৭ শতাংশের ঘর অতিক্রম করতে যাচ্ছে বলে ধারণা দিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস।

মার্চ পর্যন্ত নয় মাসের হিসাব ধরে চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির যে প্রাক্কলন করেছে বিবিএস, তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে সাময়িক হিসাবে স্থির মূল্যে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির হতে পারে। অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ অবশ্য মনে করেন, প্রবৃদ্ধির ওই প্রাক্কলন অর্জন করা ‘সম্ভব নাও হতে পারে’।

মহামারীর মধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ কমে গিয়েছিল, সেটা যখন ঘুরে দাঁড়ানো শুরু করল এর মধ্যেই ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে গেছে, চড়ে গেছে ডলারের বিনিময় হার। তাতে পণ্যের উৎপাদন খরচও বেড়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক নিরাপত্তায় এর বড় ধরনের প্রভাব থাকবে বলে অর্থনীতিবিদদের ধারণা।

মুস্তফা কামাল অবশ্য আশা ছাড়ছেন না। বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, গত ১৩ বছরে জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.৬ শতাংশ যা ২০১৬-২০১৭, ২০১৭-২০১৮ ও ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৭ শতাংশের উপরে ছিল এবং ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৮ শতাংশ অতিক্রম করে। কোভিডকালীন সময়েও ২০২০-২০২১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ঈর্ষণীয় ৬.৯৪ শতাংশ ছিল।

“২০১৯-২০২০ অর্থবছরের মার্চ মাস থেকে কোভিড-১৯ অতিমারীর কারণে ব্যবসা বাণিজ্যে বিরূপ পরিবেশ বিদ্যমান থাকলেও চলতি অর্থবছরের এপ্রিল, ২০২২ পর্যন্ত আমাদের এনবিআর কর রাজস্বে প্রবৃদ্ধি ১২.১২ শতাংশ। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তবে পুরো অর্থবছরই করোনা মহামারীর কারণে ব্যবসা বাণিজ্যের গতি মন্থর ছিল। এ বৈশ্বিক মহামারি মোকাবেলা করে আমরা অর্থনীতি এবং জিডিপির গতি ধরে রাখার চেষ্টা করেছি।

“তবে আগামী অর্থবছরেও দেশের অর্থনীতি একেবারে স্বাভাবিক হবে না মর্মে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। বৈশ্বিক করোনা অতিমারী, বিশ্ব বাণিজ্যে মন্দা ও অস্থিতিশীল বিশ্ব বাণিজ্যকে বিবেচনায় ‍নিয়েই আমরা আগামী রাজস্ব নীতি প্রণয়ন করতে যাচ্ছি। ব্যবসা বাণিজ্যে কোভিডের প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে রাজস্ব আহরণের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনীতির গতি বৃদ্ধির বিষয়সমূহকে এবারের রাজস্ব বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।”